Real Love Story in Bangla একটি সত্যিকারের ভালবাসার গল্প আবর্তন

  

Real_Love_Story_in_Bangla_একটি_সত্যিকারের_ভালবাসার_গল্প_আবর্তন




Real Love Story in Bangla একটি সত্যিকারের ভালবাসার গল্প আবর্তন

Real Love Story in Bangla একটি সত্যিকারের ভালবাসার গল্প 

Real Love Story in Bangla একটি সত্যিকারের ভালবাসার গল্প গল্পের লেখক শক্তি সামন্ত

অনেক দিন পর দেখা পারমিতার সাথে ।পারমিতা আমদের স্কুল বেলার বান্ধবী। এখনও সেই একই রকম আছে।
"কেমন আছিস?"

''ওই আগের মতোই'' "তুই?"
"এইতো ...."

তারপর বহুক্ষণ চুপ দুজনেই কারও মুখে কথা নেই ।
সে  বেশ কয়েক বছর আগের কথা।তখন আমরা ক্লাস নাইন। একই টিউশনে পড়তাম আমরা ।
পারমিতাকে খুব নাজুক মনে হত ।তেমনই নরম স্বভাবের মেয়ে । মাখনের মতো।হৃষ্ট-পুষ্ট ।আমার
বেশ ভালো লাগতো ।অল্প লাজুক স্বভাবের মেয়েটি আমার দিকে কেমন যেন তাকিয়ে থাকত ।চোখে
চোখ পড়লেই মুখ ঝুঁকিয়ে নিত। জানিনা তার চাউনিতে কি লেখাছিল!

                 

Real Love Story in Bangla একটি সত্যিকারের ভালবাসার গল্প 

   দ্বিতীয়ঃ

রাজ আমাদের ক্লাসের  সব থেকে  স্মার্ট ছেলে ।সবাই তার খুব ভক্ত মানে এমনটাই  যে রাজের কথা
সবাই মেনে চলত । এমন কি আমিও।রাজ মনে মনে  পারমিতা কে পছন্দ করত।কিন্তু রাজের পারমিতা
সম্পর্কে  খুব একটা  সৎ মনভাব ছিল না।  কারণ রাজের স্বভাবটাই এমন ছিল  একটু টাইম  পাশ ।যেটা
আমার মোটেই ভালোলাগতো না ।এতো সুন্দর পুতুলের মতো একটা মেয়ে কে  এই ভাবে ঠকানো ঠিক
মেনে নেওয়া যায় না ।  

এদিকে রাজও পারমিতার পিছনে পড়ে গেল।দেখতে দেখতে ক্লাসের সবার মধ্যে একটা চর্চা শুরু হয়ে গেল ।
যে রাজ পারমিতা কে ভালোবাসে ।শুধু আমদের টিউশন নয় গার্লস স্কুল পর্যন্ত  ছড়িয়ে পড়ল ব্যাপারটা।

পারমিতা আমার সাথে একটু বেশিই কথা বলত । কোন কিছু জানার থাকলে আমাকেই জিজ্ঞাসা করত ।তারপর  
আমিও কেমন যেন পারমিতার প্রতি টান অনুভব করতাম।পারমিতা একদিন পড়তে না এলে ।মন খারাপ হয়ে যেত ।
যেন সেদিন কিছু একটা অপূর্ণ রয়ে গেছে।  

একদিন  হঠাৎ জ্বর আসে আমার, প্রায় তিন চার দিন স্কুল টিউশন বন্ধ হয়ে যায় । জ্বরের ঘোরে শুয়ে শুয়ে  শুধু
পারমিতার কথাই  মনে হত ।হয়ত আমাকে খুব মিশ করছে ।আমারও মনটা কেমন যেন হুহু করছিল।সেদিন স্বপ্নও
দেখলাম পারমিতা আমাকে দেখতে এসেছে।আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।পরদিন সকাল থেকেই আমার
জ্বর কেটে গেল।সেদিন  আর স্কুল গেলাম না ।মনে মনে ভাবলাম আমিকি  পারমিতার প্রেমে পড়েছি  !

                                তৃতীয়ঃ  

পর দিন স্কুলে গেলাম । খুব অবাক লাগছে যেন সমস্ত পৃথিবীটাই  বদলে গেছে হঠাৎ করে । সব কিছুই যেন নতুন লাগছে ।
হয়ত অনেকদিন পর স্কুলে গেছি বলে ।এদিকে রাজ আর পারমিতার চর্চা চলছে।অনিমেশ জানাল  আজ স্কুল ছুটির পর
 টিউশন  আছে ।টিউশনে গিয়ে  বসলাম  ।স্যার তখনো আসেনি।  আমি খুব অধীর  ছিলাম  কখন  একবার পারমিতার সাথে দেখা হবে ।
অবশেষে পারমিতা আসছে লাল পাড় সাদা শাড়ী ।পরির মতো দেখাচ্ছে পারমিতাকে ।বিকেলের রোদ পড়েছে তার উসকো
খুসকো চুলে ।কি সুন্দর লাগছে কাঁচা হলুদের মতো রঙ  তার  ফর্সা মুখখানি।খুব ইচ্ছে হচ্ছিল  তার মুখ খানি দুহাতে  ধরে  
আদর করি ।কমলা লেবুর কোয়ার মতো  ঠোঁটে ঠোঁট  ডুবিয়ে  চুমু দিই।
খুব অবাক লাগলো  আমার পাশ  দিয়ে চলে গেল  ও  কিন্তু কোন কথাই  বলল না।চিনতেই পারলনা  যেন ।মনটা খুব খারাপ
 হয়ে গেল ।আমাদের  মতো সাধারণ  ছেলেদের জীবনে  সত্যিই  কাউকেই  ভালবাসতে নেই।শুধু গরীব বলে এ অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না ।টিউশন
 ছুটির পর একরাশ মন খারাপ  নিয়ে পুরানো রঙচটা সাইকেল  চরে বাড়ি ফিরলাম।      
 
সেদিন সন্ধ্যায় পড়তে বসে বার বার ভেবেছি  না আমি ওর জন্য নয়। হয়তো রাজই  ওর যোগ্য।

পরের দিন  স্কুলে রাজ আমাকে ধরল  বলল দেখ ভাই পারমিতার সাথে  একটু সেটিং  করে দে ।
আমি বললাম ,"কিভাবে ?"
"এই গ্রিটিংস কার্ড টা ওকে দিতে হবে । আর সেটা তুই পারবি  কারন তোর সাথে ও খুব কথা বলে ।"  

যেকোন  কারণেই হোক  গ্রিটিংস কার্ড  আর আমাকে  দিতে হয়নি । রাজ  কখনো কার্ড দিতে পেরেছিল কিনা
আমার জানা নেই ।আমিও এইসব  ভাবা ছেড়ে দিয়েছি। ভুলেই গিয়েছিলাম প্রেম ভালবাসার কথা।
পারমিতাকে অন্য সবার মতোই ভাবতে চেষ্টা করলাম।

                                  চতুর্থঃ

কিছুদিন পর সরস্বতী পূজা ছিল  । পূজার সব দায়িত্ব আমাদের উপর । আমরা পুষ্পাঞ্জলি দেবো,পুরুত মশাই
অনেক দেরি করে এসেছে । এদিকে খিদেই অস্থির হয়ে উঠছে সব ছেলেরা ।বাইরে অপেক্ষা করছি ।এমন সময়
দেখলাম  পারমিতা  আসছে ।ওদের স্কুলে পূজা অনেক আগেই হয়ে গেছে । কিন্তু পারমিতার কোন কারণ বশত  
পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়নি তাই আমাদের স্কুলের পূজায়  পুষ্পাঞ্জলি দিবে।

আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম ফুল হাতে ।পুরোহিত মশাইএর মন্ত্র উচ্চারণের সাথে আমরাও মন্ত্র বলছি ।কিন্তু রাজের
 বদমাইশই  শুরু হল। সে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ফুল তুলে তুলে পারমিতার দিকে ছুঁড়ছে পারমিতা ভাবল
এমনটা বুঝি আমি করছি। ভীষণ রেগে গেল আমার উপর ।

চলে যাওয়ার সময় আমাকে ডাক দিল ।আমার একটু ভয় করছিল কিজানি কি বলে ।
এদিকে রাজ বলল," দেখ একটা সুযোগ আছে আমার কথাটা একটু বলিস ভাই ।"
আমি বললাম," আচ্ছা বলবো।"

কাছে যেতেই আমাকে ডেকে নিয়ে গেল স্কুলের বাগানটার দিকে ।এদিকটাই কেউ নেই এই মুহুর্ত্বে ।একটি
নারকেল গাছের আড়ালে ।গিয়ে দাঁড়ালাম আমরা প্রথমটা ও চুপ ছিল ।একটু লজ্জ্বিত  নিচের দিকে মুখ নামিয়ে ।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "আরে কি বলবি তো…"

তখনো চুপ ছিল। তারপর ও আমার আরও কাছে এসে জড়িয়ে ধরল একেবারে আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে
এসে আমার চোখে চোখ রাখল।তার চোখের ভাষায় শুধু ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাইনি সেদিন।
এক গভীর উষ্ণ আবেদন তার দৃষ্টিতে । আমিও ধীরে ধীরে দুহাতে আরও শক্ত করে কাছে টেনে নিয়ে ,
আদর করতে করতে ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে চুমু দিলাম । এইভাবে কতক্ষণ ছিলাম  জানিনা  তারপর
পূজার ঘণ্টার আওয়াজে । হোঁশ ফিরলে দেখি ওর চোখে জল ।

বললাম,"কাঁদছিস কেন?"
"খুব ভালবাসি তোকে" বলেই পালিয়ে এসেছিল সেখান থেকে।

পরে রাজকে জানিয়ে ছিলাম যে সে রাজি নেই ।তারপর থেকে রাজ কি ভাবল আমার সাথে  কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিল ।


                       পঞ্চমঃ

আমাদের অভাবের সংসার বাবার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিলনা চালানো ।আমাকে পড়াশুনো ছেড়ে মুম্বাই তে চলে
যেতে হয়েছিল।সোনার কাজে ।সংসারের হাল ধরতে হবে আমাকে । 

পারমিতা চিঠি লিখত আমাকে ।আমিও
এক বন্ধুর ঠিকানায় ওকে চিঠি লিখেছি অনেকবার।  
তারপর উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার পর পারমিতার  বাবা তার বিয়ের ঠিক করে ফেলে ।

 এক সরকারি চাকুরে  
ছেলের সাথে।যদিও পারমিতার আপত্তি ছিল। আর ওর বাবাও আমাকে মেনে নেবেনা।
আমি ভেবেই নিয়ে ছিলাম পারমিতার সাথে আমার কোন ভবিষ্যৎ নেই।
একদিন সন্ধ্যায় পারমিতা এসে বলল চল।আমাকে নিয়ে পালিয়ে চল।
তখনও কিছুই উপার্জন করতে পারিনি । সবে কাজ শিখে বাড়িতে এসেছি।


কিন্তু আমি সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম ওকে ।কারণ এক অনিশ্চিত জীবনের পথে গিয়ে আমি পারমিতার
ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে চাইনি। তাছাড়া উনিশ বছর বয়স বিয়ের জন্যে যথেষ্ট নয় বলেই মনে হয়েছিল সেদিন।
 

                           ষষ্টঃ

অনেক বছর পর আবার সেই পারমিতাকে দেখে খুশি হলাম।বললাম,"কেমন আছিস ?"
হাসতে হাসতে বলল, "ওই আগের মতোই।তুই?"
বললাম "এইতো..."

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাটা কে দেখিয়ে বললাম, "তোর ছেলে বুঝি ?"  
আবার হাসত হাসতে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলল, "হ্যাঁ ,তুই চাইলে হয়ত আমাদের হতে পারত!"
আমি চুপ করে গেলাম । মাথা ঝুঁকিয়ে নেওয়ার মত অবস্থা ।
তারপর "আসি" বলে আমার উদ্দ্যেশে এক অভিমান ভরা বিদ্রূপ রেখে গেল।

              [সমাপ্ত]
*****************************************


Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন