বাংলা সাহিত্যের সেরা রোমান্টিক উপন্যাস। মন ভাঙনের পাড়ে। ভাগ 14
শক্তি সামন্ত
[চোদ্দ]
বাংলা সাহিত্যের সেরা রোমান্টিক উপন্যাস। মন ভাঙনের পাড়ে। ভাগ 14
বিতান এখন এক সন্তানের বাবা। বাজারে ওষুধের দোকান মোটের উপর সুখ স্বচ্ছন্দে তার শাদিসুদা
জীবন কাটছে।
হঠাৎ করেই বিতান এখন আর রূপকের সাথে খুব একটা মিশে না । অর্থনৈতিক
পরিস্থিতিই একমাত্র কারণ বলেই মনে করে রূপক।অন্য কিছুও হতে পারে ।তবে প্রায় এটা দেখা
যায় যখন কেউ সফলতা পায় পাশাপাশি লোক জনের সাথে মেলামেশা কমিয়ে দেয়।
নিজের ভিতরেই কেন্দ্রীভূত হতে থাকে তাদের জীবন। হয়ত বিতানও তাই ।তাছাড়াও বিতানের কর্মখেত্র
আলাদা।মানুষ যখন সাংসারিক হয়ে পড়ে সেই ভাবে বন্ধুত্ব রাখা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। সংসারের
দায়-দায়িত্বের কাছে হাত-পা বাঁধা থাকে।
জঙ্গলের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল
রহস্য জনক মূর্তী দেখুন ভিডিওতে
বিতান চেয়েছিল অমিত নামের ছেলেটা যে তাকে হঠাৎ একদিন দাদা বলে ডেকেছিল তাকে
আর্থিক সাহায্য করতে। সে অমিতের জন্যে একটা টিউশন ঠিক করে দিয়েছিল কথা হল যে টিউশনের
ফিজ বিতান প্রতিমাসে দিয়ে দেবে। কোলকাতা থেকে বেশ কিছু খাতা, পেন এনে দিয়েছিল।
[বাংলা সাহিত্যের সেরা রোমান্টিক উপন্যাস। মন ভাঙনের পাড়ে। ভাগ 14]
এইসব দেখে শুনে, অমিতের মা বিতানের সাথে দেখা করতে
চেয়েছিল। বিতান ভাবল সেকি কিছু ভুল করে ফেলল। সামান্য সাহায্যইতো করতে চাইছে।
মনে কিছুটা সংশয় আর কিছুটা ভালোলাগা নিয়ে রূপককে ডেকে নিয়ে গেছিল অমিতের মা'র
সাথে দেখা করতে ।রাস্তার পাশেই অমিতদের বাড়ি।অমিত বলে ডাক দিতেই বেরিয়ে এসেছিল।
বিতান বলল, "শোন তোর মা কোথায়?"
অমিত হন্তদন্ত হয়ে বলল," মা কাজ করছে।"
রূপক বলল, "একবার ডেকে দে।"
তারপর বেরিয়ে এলেন ভদ্রমহিলা। বয়স খুব একটা হয়নি বললেই চলে। রোগাটে চেহারা ,
মলিন শাড়ি পরিহিতা বিতানদের সামনে এসে দাঁড়ালেন অকাল বিধবা অমিতের মা।যথেষ্ট স্মার্ট ।
মুখের হাবভাব দেখে মনে হয় এক সময় তাঁর ব্যাপারটাই অন্যরকম ছিল। সূর্যের মতো তাঁর
উজ্জ্বল মুখখানি এখনও মধ্যগগনে বিরাজমান শুধু যেন মেঘের শোকে ঢেকে আছে তাঁর জীবন।
অদূরে অমিতের দুই সোমত্ত দিদি দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের চোখে মুখে ছিল অনিবার্য কৌতূহল।
রূপক একবার সেদিকে তাকিয়েই আবার নজর ফিরিয়ে নিয়েছিল। পাছে অমিতের মা কিছু
খারাপ না ভেবে বসে।
বিতান বেশ গুছিয়েই বলতে শুরু করেছিল সব কথা। "আমরা চাইছি অমিতকে একটু হেল্প
করতে। ও খুব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র। তাই ..."
অমিতের মা কি বুঝেছিল কে জানে।বিতানকে জিজ্ঞেস করেছিল,
"এইসব করার তোমাদের কারণ কি? আর আমি নেবই বা কেন তোমাদের কাছ থেকে এই
অনুদান? আমার যতটুকু সামর্থ আছে ওকে পড়াতে পারব। আর ওকে টিউশনে দেওয়া হয় না, কারন
আমি নিজেই ঘরে পড়িয়ে নিই।"
[বাংলা সাহিত্যের সেরা রোমান্টিক উপন্যাস। মন ভাঙনের পাড়ে। ভাগ 14]
বিতান নিরস্ত্র হয়ে পড়েছিল এই স্বাভিমানি মহিলার কাছে। সে বুঝে গেছিল এই মহিলা ভাঙ্গবেন
তবু মচকাবেন না।
তাঁর অতই যদি ক্ষমতা তাহলে মেয়ে গুলোকে স্কুলে পাঠায় না কেন? ওনার আদর্শের কাছে সব
যুক্তি হেরে যাবে এই ভেবে
শেষমেশ বিতান বলে এসেছিল , "দেখুন, অন্য কিছু ইনটেনশন নেই আমাদের। ও যেন ভালভাবে
পড়াশুনো করতে পারে সেটাই দেখবেন।"
তারপর কয়েক মাস পরেই বিতান জানতে পারে অমিত সোনার কাজে মুম্বাই চলে গেছে। আরও পরে
বিতান জানতে পারে। অমিতের মা ওদেরকে অন্য সন্দেহ করেছিল । ভেবেছিল তাঁর মেয়েদের প্রতি
বিতানদের খারাপ উদ্যেশ্য আছে।
রোজের প্রায় ওদের বাড়ির পাশ দিয়েই ঘোরাঘোরি করে। বিতান খুব অবাক হয়েছিল সত্যিইতো একথা
সে ভেবেই দেখেনি। অমিতের মা এইভাবে ভাবতে পারে।
ভাববারই কথা। কারও দু-দুটো সোমত্ত
মেয়ে থাকলে আবার যদি সে দেখে তার বাড়ির পাশ দিয়ে দু-টো ছেলে প্রায় ঘোরা-ফেরা করে।
কার না সন্দেহ হয়!আরও অবাক করা কথা শুনেছিল বিতান অমিতের ছোটদি নাকি বিতানের প্রেমে
পড়ে গেছিল। এ এক মৌচাকে ঢিল মারার মতো ব্যাপার হয়েছিল ।
[বাংলা সাহিত্যের সেরা রোমান্টিক উপন্যাস। মন ভাঙনের পাড়ে। ভাগ 14]
,হয়েছিল এমনটাই যে একটা
নির্দিষ্ট রাস্তা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে দুটো ইয়ং ছেলে বিনা কারণে
যদি প্রায় যাতায়াত করে। তাহলে যেকোন মেয়ের পক্ষেই এটা ভেবে নেওয়া সম্ভব যে ওরা
বুঝি তার জন্যেই ঘুরঘুর করছে।
এমনটা হয়েছিল মধুরিমা নামের আরও একটা মেয়ের সাথে।আর সায়ন্তনিতো একেবারে ঝগড়া
বেধে গেছিল বিতানের সাথে।তখন আর রূপক তার সাথে থাকত না ।
ব্যাবসার কারণে ওকে একাই
যেতে হত । এই যে মনে মনে প্রেমে পড়ে যায় সায়ন্তনি। তারপর সেটা প্রকাশ করার জন্যে বিভিন্ন
ভাবে বিতানকে উত্যক্ত করতে থাকে। আর বিতানকেও বাধ্য হয়েই সায়ন্তনিদের বাড়ির পাশ দিয়ে
যেতে হত। একদিন বিতান দাঁড়িয়ে পড়ে,আর প্রতিবাদ করলে ঝামেলা বাধে।
অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। সকলে যখন বুঝতে পারল এতে বিতানের কিছু দোষ নেই।
সায়ন্তনিকে বোকা-ঝোকা করল সবাই।আর বিতানকে বুঝিয়ে শান্ত করেছিল সেদিন।
বিতান মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ এর ট্রেনিং নিয়েছিল। ওষুধের দোকান করার উদ্দ্যেশে। বাজারে তার
বাবার একটা বন্ধ দোকান ছিল সেটাই খুলেছে নতুন করে। মোটামুটি চলছিল ভালোই।
[বাংলা সাহিত্যের সেরা রোমান্টিক উপন্যাস। মন ভাঙনের পাড়ে। ভাগ 14]
বিতান ভেবেছিল
এবার হয়ত পিঙ্কির বাবা না বলতে পারবে না,তাদের সম্পর্কটা মেনে নেবে।কিন্তু ভাগ্যের করুণ
পরিহাস পিঙ্কির বাবা চটজলদি অন্য পাত্র ঠিক করে নেয় যা হয়ত বিতানের
থেকে অনেক গুনে ভাল।ফোন করে পিঙ্কি কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছিল বিতানকে। বিতানকে খুব
অসহায় লাগছিল সেদিন। রূপক বলেছিল তোরা পালিয়ে বিয়ে করে নে। কেন রাজি হয়নি বিতান,
রূপক জানে না।পিঙ্কির বিয়ের দিন যত এগিয়ে এল ততই মুষড়ে পড়ছিল বিতান।
সবাই ভেবেছিল
বিতান যা ছেলে কিছু একটা ঝামেলা বাধিয়ে না বসে। পিঙ্কির আত্মীয় স্বজন আগে থেকেই পুলিশে
জানিয়ে রেখেছিল।খুব ধীর আর শান্ত হয়ে বিতান সে রাতে বলেছিল, "যতটুকু ভালবাসা পেয়েছি
সেটাই বা ক-জন পায়।" উজান রাগত স্বরে বলেছিল, "সবাই পায়।তুই ভুল করলি।নিয়ে পালিয়ে
যাওয়ায় ঠিকছিল।"
আর তখন রূপক মনে মনে ভাবছিল, সত্যিই এটুকুওতো সে পেল না।
নিয়ে পালিয়ে যাওয়া হয়ত খুব সহজ ব্যাপার ছিল বিতানের পক্ষে।কিন্তু বিতান এতটাই আন্তরিক
হয়ে যায় যে, সে পিঙ্কির বাবা-মাকে মোটেই দূঃখ দিতে চায়নি,যে বাবা-মা এতকাল স্নেহ দিয়ে
ভালবাসা দিয়ে মানুষ করেছে।
[বাংলা সাহিত্যের সেরা রোমান্টিক উপন্যাস। মন ভাঙনের পাড়ে। ভাগ 14]
বিতান একবার রূপক কে নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিল
পিঙ্কির সাথে।পিঙ্কির সাথে ওর মাসতুতো দিদি অন্তরা ছিল।
অন্তরা নাকি বিতানকে দেখতে চেয়েছিল।বিতানকে দেখেই অন্তরার ভালো লেগেছিল। পিঙ্কিকে
বলছিল 'দারুণ চয়েসতো তোর।' বিতানের সাথে অনেকক্ষণ কথা বার্তা হল।
অতপর অন্তরা
বলেছিল "তোমাদের চার হাত এক করে দেব আমি। যেকোন সমস্যা হলেই আমাকে
বলতে দ্বিধা করো না।" রূপক দূরেই দাঁড়িয়ে দেখছিল সব কিছু। তারপর এগিয়ে গিয়ে বলেছিল,
'আচ্ছা তোমাদের একটা ফটো নিচ্ছি একসাথে।'
পিঙ্কি,অন্তরা কি ভাবল কে জানে ওরা হাত ধরা ধরি করে চলে গেছিল। দারুণ লজ্বায় অপমানিত হয়েছিল
রূপক।
এইভাবে পিঙ্কিরা যে এড়িয়ে যাবে কখনও ভাবেনি রূপক। ফটো তুলতে গেছিল বিতানের
অনুরোধেই।বিতানের ইচ্ছে ছিল রূপক যেন তার
নতুন স্মার্ট ফোনে পিঙ্কির সাথে একটা ফটো নেয় খুব ভালো করে। বিতান অবশ্য বলেছিল
"সরি রে আমার জন্যে তোকে লজ্জ্বিত হতে হল।"
রূপক স্মার্টলি বলেছিল, "তোর জন্যে অনেক কিছুই মেনে নেওয়া যায়। এটাতো সামান্য ব্যাপার।"
সে যাইহোক কথায় কথায় প্রতিশ্রুতি দেওয়াটা বোধ হয় খুব সহজ, আর
তা পূরণ করা ততটাই কঠিন।
বিতান কেমন যেন বদলে গেল কারও সাথে তেমন
মিশত না। নিজের ব্যাবসা নিয়েই মেতে ছিল। রূপকের সাথে যদিও দেখা হলে কথা বার্তা বলে,কিন্তু
সেভাবে নয়।তারপর রূপক জানতেও পারেনি কবে বিতানের বিয়ে হয়ে যায়।
সে তখন ব্যাঙ্গলোরে।
ফোন পর্যন্ত করেনি সেই অভিমানে রূপকও বিতানের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেছিল।
সময়ের চক্রে মানুষ আঘাত পেয়ে কত সহজেই বদলে যায়। কত সহজেই ভুলে যেতে পারে ছোট
বেলাকার বন্ধুত্ব! কিন্তু রূপক ভুলে না ।রূপক ভুলতে পারে না সেইসব ফেলে আসা সময়।
বন্ধুত্বের ঋণ চিরকাল....... [ চলবে ]
**************
ConversionConversion EmoticonEmoticon