বাংলা জনপ্রিয় উপন্যাস | মন ভাঙনের পাড়ে episode 11

বাংলা_জনপ্রিয়_উপন্যাস_|_মন_ভাঙনের_পাড়ে_episode-11


বাংলা জনপ্রিয় উপন্যাস | মন ভাঙনের পাড়ে episode 11

মন ভাঙনের পাড়ে

শক্তি সামন্ত

[এগারো ]

 সারা এবং উজান 

ডোরাদের বাড়ির পেছনেই বড় বাগান। অনেক ফল ফুলের গাছ আর অনেকটা খোলা মাঠের মত 
জায়গা রয়েছে।পাড়ার যত ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এখানে খেলাধুলো করে।উজানরাও এক সময় কত 
খেলা ধুলো করেছে এখানে।এখন আর সে বয়স নেই।

এখন জীবনের খোঁজে হন্যে হয়ে ছেলেবেলা পেরিয়ে
অন্য জীবনে এসে পড়েছে। সন্ধ্যে হয়ে আসছে। অনেকটা অন্ধকার নেমে এসেছে। সব ছেলেরা বাসায় 
ফিরে গেছে । মাঠটা যেন এক বুক শূন্যতা নিয়ে  শুয়ে আছে নীরব। থেঁতলানো ঘাসের যন্ত্রণায় 
কাতর। 

এখন দিনের আলো আর অন্ধকারের মাঝের সুক্ষ্ম রেখায়  দাঁড়িয়ে আছে উজান।এক এক 
করে কাছে দূরে আলো জ্বলে উঠছে।তারপর আর বোঝায় গেলনা কখন সন্ধ্যার অন্ধকারে তলিয়ে গেছে 
খেলার মাঠটি।এখন আর এদিকে কেউ আসবেনা। পাখিদের কলরব কখন থেমে গেছে।সারা তাকে 
ফোন করে ডেকেছে একান্তে কিছু কথা বলার জন্যে।একান্তে কিছুটা সময় উজানকে পেতে চায় একেবারে 
নিজের মত করে।
[বাংলা জনপ্রিয় উপন্যাস | মন ভাঙনের পাড়ে episode 11]
উজান ঝুঁকে পড়া আম গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুনতে পেল ঘসর ঘসর শব্দ
 করে সারা এসে দাঁড়াল তার সামনে।
জিজ্ঞেস করল, "কেমন আছ?" 
"ভালোই। আজ রূপকের ফোন এসেছিল তাই আরও ভালো লাগছে।" 
"আচ্ছা রুপুদার ফোন এলে ভালো লাগে আর আমি ফোন করলে ভালো লাগে না বুঝি?" অভ্যাস মতো 
ওড়নাটা হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে পাক দিচ্ছে সারা।

একটু বিব্রত বোধ করল উজান, "আরে নানা তা নয়। তোমাকেতো কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছি। তার 
থেকে খুশি কি আর হতে পারে!"
"বিয়ের পর এই সব বন্ধুদের সাথে আড্ডাটা একটু কমাতে হবে বুঝলেন মশাই?" 

উজান সারার সেন্স ওফ হিউমার দেখে  অবাক। যতটা সাধারণ ভাবে ঠিক ততটা নয়। সারা আরও 
এগিয়ে এল তার কাছে।     
আজ অল্প জ্যোৎস্না আছে শরৎ এর আকাশ মোটামোটি পরিষ্কার।সন্ধ্যা তারা জ্বলজ্বল করছে।একেঅপরকে 
জড়িয়ে ধরে আছে গাছের সাথে ঠেস দিয়ে।আর ফিস ফিস করে কথা বলছে।
[বাংলা জনপ্রিয় উপন্যাস | মন ভাঙনের পাড়ে episode 11]
সারার গরম নিশ্বাস 
উজানের বুকের উপর পড়ছে। যেন মোমের মতো গলে যাচ্ছে তার হৃৎপিণ্ড।উজানের খুব ইচ্ছে হচ্ছে 
ইংলিশ সিনেমার হিরোদের মতো করে চুমু দিতে।বলতে পারছে না। তার ভাষা হারিয়ে গেছে যেন।
আনা নাকি বিকুকে বহুবার এই ভাবে কিস করেছে।বিকু অনায়াসেই এইসব কথা তাকে বলে ।

বলবে 
নাই বা কেন? ছোট বেলার বন্ধু। তাছাড়া আনার সাথে যখন প্রথম প্রথম প্রেম করত বিকু, উজান 
তাকে অনেক হেল্প করেছে।  
হঠাৎ নারকেল গাছ থেকে কি একটা হুড়মুড় করে পড়ল।ওরা ভয়ে চমকে উঠে সরে দাঁড়াল।একটা 
পাতা খসে পড়েছে। দুজনেই মুখ চাপা দিয়ে হাসতে হাসতে বসে পড়ল। সারা উজানের হাত ধরে বলল, 
"কিছু বলো"। 

উজান বলল, "ভালো লাগছে তোমাকে কাছে পেয়ে। বিউটিফুল !খুব সুন্দর দেখতে লাগছে তোমাকে।"      
সারা উজানের আরও কাছে ঘেঁসে একেবারে মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল, " সত্যিই ! আমারও 
ভালো লাগছে।"  আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল তখনই উজান দুহাতে সারার মাথাটা চেপে ধরে ঠোঁটে 
ঠোঁট বসিয়ে দিল।

আর তখনই ডোরাদের বাড়ির বাইরে 'সারা' বলে ডাক দিল তার বাবা। উজান 
ঝটপট উঠে পড়ে কি ভাবে সেখান থেকে পালাবে ভেবে উঠতে পারছে না। হোঁচট খেয়ে পড়ল । 
উজান জানে সারার বাবা খুব রাগি।বাঁ পয়ের জুতোটা কোন দিকে খোলা হয়ে ছিটকে গেল বুঝতে 
পারল না। মাথাটা একটা নারকেল গাছে ঠোকা খেতে খেতে বেঁচে গেল।পকেটে রাখা মোবাইলটাতে 
আঘাত লাগেনি বলেই মনে হয়।   

জুতোর মায়া ছেড়ে, একছুটে উজান পেছন দিকের রাস্তায় চলে এসেছে। এদিকে এলে কেউ বুঝতে 
পারবেনা ওখানে উজান ছিল কি না।এই রাস্তাটা অন্ধকার।  
মোবাইলের টর্চ জ্বেলে নিল। এক্ষুনি বিপদ হতে পারত সারার বাবা খুঁজতে খুঁজতে বাগানে চলে এলে 
ধরা পড়ে যেত। 
[বাংলা জনপ্রিয় উপন্যাস | মন ভাঙনের পাড়ে episode 11]

সে মার খেয়ে নেবে কিন্তু সারাকে মারলে তার সহ্য হবে না ।আর বাধাও দিতে 
পারবে না। এই ক-দিনে সারা তার হৃদয়ে অনেকটা জায়গা করে নিয়েছে। সারাকে কাছে পাওয়ার 
ভালোলাগা যেমন আছে  আর এক দিকে ভয়। তার বুকের ভিতর অদ্ভুত হালচাল হচ্ছে। 
 
কিছুটা লজ্জ্বিত অপমানিত বোধও করছে উজান। সব মানুষই নিজের দূর্দশার জন্যে ভাগ্যকে দায়ী 
করে। উজানও তাই ভাবছে কপালটাই খারাপ। তার এই দূর্দশার কথা ভেবে অভিমানে বুক ফুলে 
উঠছে।একদিন তার ব্যাবসা অনেক বড় হবে অনেক পয়সা রোজগার করে দেখিয়ে দেবে সারার 
বাবাকে।

সেদিন আর সারার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে হবে না। এইসব ভাবতে ভাবতে 
অন্ধকার রাস্তাটা পেরিয়ে এল। কাল ভোর ভোর উঠে গিয়ে জুতোটা খুঁজে নিয়ে আসতে হবে।মা 
জানতে পারলে আবার এক ঝামেলা বাধাবে।  

সারার বাবা কি বুঝতে পেরে গেছে মেয়ের কীর্তিকলাপ! একবার ডোরা কে ফোন করে জিজ্ঞেস 
করবে! আবার ভাবল, না থাক একটু রাতের দিকে সারাকেই ফোন করে নেবে সে।না , এখন 
আর কোথাও যাবে না সে। বাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়বে। ধুর, কি যে ঘটে যায় মাঝে মাঝে । 

এমনটা হবে কখনও ভাবেনি উজান।  
রাত হয়ে গেছে অনেকটাই খাওয়া দাওয়া করে বিচলিত মনে শুয়ে আছে উজান। না আজ আর 
মোবাইলটাতেও হাত দিতে ইচ্ছে করছে না।সিলিঙে পাখা ঘুরছে সেদিকে তাকিয়ে আছে উদাস হয়ে। 

হঠাৎ গোঁ গোঁ করে বিছানা কাঁপিয়ে ফোনটা বেজে উঠল।ডান হাতটা মাথার নিচে রাখা আছে 
ফোনটা ধরতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। স্ক্রিনে ভেসে উঠা সারার নামটা দেখে লাফিয়ে উঠল। চাপা গলায় 
ওপ্রান্ত থেকে ভেসে এল সারার মিষ্টি কণ্ঠ, "তুমি ঠিক আছতো?"
"হ্যাঁ , হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। 

আগে বল তোমার বাবা কিছু বুঝতে পারেনিতো?" উজানের অস্থিরতা 
টের পেয়ে সারা খিক করে হেসে উঠল,"না,বলে দিয়েছি রিঙ্কিদের বাড়ি গিয়েছিলাম।" উজানের টেনশন 
একটু কমল, বলল, "ওহ আচ্ছা। ভালো করেছো।"
সারা এবার উপদেশ দেওয়ার সুরে বলল,"আরে বাবা, অতশত ভয় পেলে প্রেম করা যায় না। যে ভাবে
উঠে ছুটলে ভাবলাম হোঁচট খেয়ে পড়লে বুঝি। 

ভিতুর ডিম কোথাকার।" খিক খিক করে হাসছে সারা। কথা গুলো শুনছিল উজান চুপ করে। লজ্জ্বা 
লাগছে তার সত্যিই সে হোঁচট খেয়েছিল সারা কি তাহলে দেখতে পেয়েছে!ইস কি লজ্জ্বা তার থেকে 
ছোট একটা মেয়ে এই ভাবে তাকে ভিতুর ডিম বলছে।যাক, হোঁচট খাওয়ার কথা আর না বলাই 

ভালো তাহলে সারা,ডোরা ,রিঙ্কিরা তাকে নিয়ে মজা করবে। আর জুতো হারানোর ব্যাপারটাতো বলাই 
যাবে না।
"আসলে সারা, আমরা খুব অসহায় ভাগ্যের হাতে। এই যে তোমাকে ভালবেসেও তোমার কাছ থেকে 
তোমাকে চেয়ে নিতে পারি না।

শুধু দূরে থেকে তোমার পানে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার 
থাকে না।সেটা আমার ভাগ্যের কারণেই।আমার জন্ম এমন একটা পরিবারে হয়েছে চাইলেও তোমার 
সামনে দাঁড়ানোও যেন দুঃসাহসের ব্যাপার।যতটুকু পেয়েছি তোমাকে। হাতে চাঁদ পাওয়ার সমান।
[বাংলা জনপ্রিয় উপন্যাস | মন ভাঙনের পাড়ে episode 11]

ভয়  
পেয়েছি শুধু তোমাকে হারাবোনা বলেই।এ জীবনে আর কিছু না পাই শুধু তোমাকে হারাতে চাই না 
সারা।" সারা চুপ করে আছে।পাখার আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই কানে আসছে না উজানের।তবে কি
ফোন কেটে দিল সারা! 

"সারা?" উজান সন্দিহান হয়ে ডাক দিল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠার আওয়াজ পেল উজান। "একি সারা 
তুমি কাঁদছ কেন?" কিছু কথা বলতে গিয়েও যেন বলতে পারছে না সারা। তার যেন গলার কাছে 
আটকে যাচ্ছে যাবতীয় শব্দ।  

একটু স্থির হয়ে বলল,"তুমি শুধু আমার ভালবাসাই নও গত জন্মের ঋণ। আমি......।" আর কিছু 
বলতে পারছে না সে। যেন গলার কাছে 
দলা পাকিয়ে যাচ্ছে সব অনুভূতি। আবেগে ভেসে যাচ্ছে তারা দু-জনেই। কত রাত হয়ে গেল 
বুঝতেই পারল না রাত গড়িয়ে চলল মধ্য রাতের দিকে। 

পৃথিবী নিস্তব্ধ প্রায়। নিশাচর পাখি ডানা ঝাপটে উড়ে যাচ্ছে খাবারের সন্ধানে। রাত জাগা দুটি হৃদয় 
সে সব টের পায় না।ঘুম নেই তাদের চোখে।দুটি মন আজ এই মুহুর্ত্বে এক হতে চাইছে দূরে থেকেও।
তারপর...   পর্ব১২
                **************
                
Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন