mon vangoner pare episode 2 sara ebong nitu boudi

 
mon_vangoner_pare_episode_2_sara_ebong_nitu_boudi

মন ভাঙ্গনের পাড়ে 

শক্তি সামন্ত

সারা এবং নিতু বউদি

 [দুই]

সন্ধ্যাকালীন টীভি সিরিয়াল গুলো সারা, নিতু বৌদির সাথে অনিমেশদার বাড়িতেই দেখে।
এই সময় অনিমেষ বাড়ীতে থাকে না।দোকান বন্ধ করে আসতে আসতে ন-টা বেজে যায়।
তার আগেই সারা বাড়ি চলে যায়। নইলে অকারণ জ্ঞ্যান দেবে। 'লেখা পড়া নেই?সবসময় 
ঐ বস্তাপচা সিরিয়ালে কিসের এত ইন্টারেস্ট।' আরও কত কি শুনিয়ে ছাড়বে।

বিরক্ত লাগে সারার।সম্পর্কিত দাদা হয় অনিমেষ।বেশি জ্ঞ্যান দিলে যে ছেলেমেয়েরা বিরক্ত হয়
 তা বোঝেনা অনিমেশ।তুমিও ছেলেবেলায় দুষ্টুমি কি কিছু কম করেছ?পড়াশুনা 
করে কি এমন জয় করে ফেলেছ যে অপরকে জ্ঞ্যান দাও। এইসব কথা বড়দের 
মুখের উপর বলতে নেই।সারা ভালো মতো বোঝে।কিছু বলেও না। তাহলে তার 
সিরিয়াল দেখা বন্ধ হয়ে যাবে। আর বাড়িতেও সারার মা দেখতে দেবে না এই 
সন্ধ্যের সময়।কারণ পড়তে বসতে হয় তাকে।

 কোন রকমে ঘণ্টা খানেক ম্যানেজ 
করে নিতু বৌদির বাড়ি আসে। বেশি দেরি হলে মা আবার পুলিশ ছেড়ে দেবে 
মানে ঐ যে একজন গুপ্তচর আছে তার ছোট ভাই অনিক।গোয়েন্দার থেকে কিছু 
কম নয় কখন কোথায় যাচ্ছে ,কি করছে, কার সাথে গল্প করছে সব খোঁজ ঠিক 
মাকে দিয়ে দেবে।সারা বার বার বিরক্ত হয়ে মায়ের সাথে ঝগড়া ঝাটিও করেছে।
 কিছু লাভ হয়নি।তার সেই একই বাণী 'আজকাল কত কি যে ঘটছে।' আরে বাবা  
সেতো আর একা একা কোথাও যাচ্ছে না।সঙ্গে ডোরা ,রিঙ্কি, অনিমারা থাকে কখনও 
কখনও উজানদাও থাকে ।

তাহলে আর ভয় কিসের!এই বয়সে একটু আনন্দ ফুর্তি 
করবে নাতো কবে করবে!সামান্য ডোরা দের বাড়ি গেলেও যত আপত্তি।সারা 
পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে আজকের সময়ে এত রক্ষণশীল হলে চলে না মা।  

নিতু বৌদির বাড়ির কাছে এসে থমকে দাঁড়ায়। দরজায় তালা দেখে সারা বিরক্ত 
বোধ করে। এই সময় কোথায় যে যায় বৌদি?ইসস অনুরাগের বুঝি জেল হয়ে 
হয়ে গেল। আর রিয়া তারই বা কি হবে? ওহ!অস্থির লাগছে সারার এই নিতু 
বৌদিটা কি যে করে না ।নিশ্চয় পারুল কাকিমার সাথে গল্পে মেতেছে।তার 
ফেভারিট সিরিয়াল চালু হয়ে গেল বুঝি!

অপেক্ষা করতে সারার ভাললাগছে না মোটেই 
ওড়নাটা হাতে নিয়ে দড়ির মতো পাকাচ্ছে আর ছটফট করছে কখন একবার 
সিরিয়ালটা চালু হবে। ঐতো আসছে বৌদি। 
"আরে তারাতারি খোল । এপিসোড টা মিস হয়ে গেল বুঝি।এত গল্প কোথায় 
যে থাকে পারুল কাকিমার বুঝি না!" 
"ওহ বাবা খুলছি খুলছি। তোরই বা এত সিরিয়াল দেখার নেশা কেন!" 
টিভিটা চালু করতে তর নেই পট পট করে চ্যানেল ঘুরিয়ে নিল সারা নিজেই।  
"এইতো সবে চালু হয়েছে।" একেবারে আটোঁসাটো হয়ে বসল সারা। টীভিতে মুখ গুঁজে দিয়েছে। 
নিতু ভাবছে তাকে কি ভাবে বলবে উজানের কথা যাকে সে এত ভালবাসে সে 
নাকচ করে দিয়েছে।

তার মনে এক দোলাচল চলছে।মেয়েটা জানতে পারলে হয়ত 
মন খারাপ করবে।এই সবই ভাবতে ভাবতে উঠে গেল নিতু , 
"নাহ রান্না বসাতে হবে রে যাই।" কিচেনের দিকে চলে গেল সে।  
সারা তখনও টিভিতে মন দিয়ে আছে।  

টিভির সিরিয়াল বুঝি শেষ হয় না কখনও! মানুষের জীবনের মতোই ছোটখাটো 
ভালো কিংবা মন্দ ঘটনার সাথে আলতুফালতু ঘটনাও ঘটতেই থাকে।অনিশ্চিত 
সময়ের দিকে এক আবশ্যকীয় সাস্পেন্স রেখে যায়।সারার এবার উঠার 
সময় হয়েছে। কিচেনে গিয়ে উঁকি দিল।

"কি রান্না করছ বৌদি।"বৌদি জবাব দিল না। একবার তার মুখের দিকে 
তাকিয়ে রুটি বেলে চলেছে। হাতের শাঁখা, চুঁড়ির খন খন শব্দ কানে 
আসছে সারার।দু-জনেই চুপ করে আছে।
বৌদি বলল ,"কি হল? তোমার অনুরাগ ছাড়া পেল?" গরম তাওয়ায় 
রুটি ফুলে উঠছে।গ্যাসটা একটু কমিয়ে দিয়ে সারার দিকে ফিরে 
তাকাল।গরমে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।

"ছাড়া পেয়ে যাবে তার পক্ষে ভালো একটা উকিল লড়ছে।" ধীরে সুস্থে জবাব দিল সারা।
"ঐসব সিরিয়াল টিরিয়াল ছাড় পড়ায় মন দে দিকি। সামনে পরীক্ষা চলে এলতো?"
"ওহ! বউদি তুমিও সেই মায়ের মতোই কথাবার্তা বলতে শুরু করেছ 
দেখছি!" ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি পকাশ করল সারা।

বৌদি এবার হাসতে হাসতে বলল,"তাহলে এক কাজ কর।মাকে বল বিয়ে দিয়ে দিতে।" 
সারা বৌদির হাত থেকে বেলনটা কেড়ে নিয়ে রুটি বেলতে বেলতে বলল,
"সেতো আরও ঝামেলার ব্যাপার।সংসার আমার দ্বারায় হবেনা বাবা।
শাশুড়ির কথা শুনতে শুনতে জীবন যাবে।তার উপর যদি একটা কুটিল  
ননদ থাকে তাহলে'তো আর কথায় নেই।জীবন নরক হতে বেশি দেরি লাগবে না।"  
"সিরিয়াল দেখে দেখে তোর মাথাটাই গেছে বুঝলি! তারচে এক কাজ কর 
ভালো একটা ছেলে দেখে প্রেম কর।"

খিলখিল করে হেসে উঠে সারা বলল,"ওরে বাবা মা জানতে পারলে একেবারে মেরেই ফেলবে।"
বৌদি বলল,"আরে মাকে জানিয়ে কেউ প্রেম করে নাকি! সেটা অবশ্য 
তোর ব্যাপার।আসলে উজান তোর কথা বলছিল।" 
ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে সারা জিজ্ঞেস করল,"উজানদা! কি বলছিল?"
"থাক না সারা।ওসব বাদ দে। পরে কিছু হলে আমাকেই দোষ পেতে হবে।"   
আরও বেশি কৌতুহলি হয়ে উঠল সারা,"বলই না কি বলেছে ও।"
"না থাক বলে লাভ নেই।"  
 
সারা এবার অধৈর্য হয়ে উঠেছে বলল, "ঠিক আছে তোমাকে কিছু বলতে 
হবেনা।আমি নিজেই জিজ্ঞেস করে নেব।" 
নিতু বৌদি এবার একটু ভয় পেয়ে গেল। এই ভাবে যদি সারা গিয়ে উজান 
কে জিজ্ঞেস করে তাহলে একটা ঝামেলা পাকাবে।আসলে এই প্রস্তাবটাতো 
উজানের পক্ষ থেকে ছিলই না। সারার দিক থেকেও নয় । 

কেবল এটা 
নিতু বৌদির ছেলে মানুষি ।মজা করার জন্যেই দুজনকে একই কথা বলেছে 
সে। উজান কিংবা সারাকে বুঝতে দিলে চলবে না।
একটু শান্ত হয়ে বলল,"আচ্ছা আচ্ছা বলছি বলছি ।কিন্তু আমাকে দোষ দিসনা যেন।" 
সারার চোখে মুখে যতটা কৌতূহল নিতু বৌদিও ততটাই শান্ত আর একটু ভিত হয়ে মুখ 
নামিয়ে নিচু স্বরে বলল,"উজান তোকে ভালবাসে।"

"কি বলছো বৌদি?" চমকে উঠল যেন সে। উত্তেজনায় সারার বুকের ভিতরটা কেমন 
করে উঠল। মনে হাজার রংমশালের আলো জ্বলছে।
উজানদার মনে তাহলে এই ছিল।এতবার দেখা হয়। এত কথা বলে তার সাথে। কখনও 
এমন কিছুতো মনে হয়নি। 

"কিন্তু বৌদি, ও নিজে আমাকে তাহলে কোন দিন বলেনি কেন?" 
এইরে এইবার বিপাকে পড়েছে নিতু কি জবাব দেবে ভেবে পাচ্ছে না। আমতা আমতা করে বলল, 
"সাহস হয় না ওর। আসলে এখনোতো বেকার তাই বলতে দ্বিধা করছে। আমি তোকে  
এইসব বলেছি উজানকে জানাস না যেন আমার উপর রাগ করবে।ওটা ওর মনের কথা তোকে 
বলতে বারণ করেছিল আসলে তার ভালোলাগা মনের কথাটুকুই শেয়ার করেছিল আমার সাথে।"   
"না, বলবো না। আমার মাথা ঘুরছে বৌদি এইসব শুনে। এখন যাই।" 
" সেকি রে ! শোন।" নিতু বৌদি আরও কিছু বলছে কিন্তু সারার কানে আর কোন
 কথায় ঢুকল না।

কেমন একটা ভালোলাগা নাকি এক অজানা টেনশন শুরু হয়েছে সারার মনে।বাড়ি এসে বিছানার  
উপর শুয়ে পড়ল।তার বুকের ধুকপুক যেন গলার কাছে আটকে আছে আবার যেন 
মনে হচ্ছে পেটের দিকে নেমে যাচ্ছে।নাহ, মা যদি জানতে পারে আস্ত রাখবে না। এমনিতেই
 যা রক্ষনশীল তার মা কোন দিনই বরদাস্ত করবে না।

আর বাবা জানতে 
পারলেতো আর রক্ষে নেই।ভয় ভয় লাগছে তার । আবার চোখ বুজলেই যেন উজানদার 
কথা মনে ভাসছে। যেন দু-হাত বাড়িয়ে তাকে ডাকছে উজান সবুজ ঘাসে ভরা নদীর পাড়ে।
আর ধুধু বালি চরের উপর দিয়ে সে ছুটতে ছুটতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে উজানের বুকে।চোখ 
খুললেই আলো নেভানো ঘরে আধো অন্ধকার,পাখাটা ঘুরছে বনবন করে।কি করবে সে, 
তার মনে এক ভীষণ দোলাচল চলছে। আজ রাতে কি ঘুম আসবে সারার!নাকি স্বপ্নের 
ঘোড়ায় ছুটবে উজানের সাথে।


 
Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন