মন ভাঙনের পাড়ে Bangla Premer Uponyas কলমে শক্তি সামন্ত Episode 6

মন_ভাঙনের_পাড়ে_Bangla_Premer_Uponyas_কলমে_শক্তি_সামন্ত_Episode_6


মন ভাঙনের পাড়ে

শক্তি সামন্ত

আনার সর্টস ভিডিও ডান্স 

 [ছয়]   


আজ ঘুম ভাঙ্গতে একটু দেরি হল বিকুর । বিছানায় উঠে বসল। রোদ ফুটে 
উঠেছে জানলায় । বেশ ঝলমলে সকাল। কিছু একটা স্বপ্ন দেখেছে।ঠিক ঠিক 
মনে পড়ছে না। আনা তার সাথে খুব  ঝগড়া করছে ।বিকু খুব রেগে  যাচ্ছিল 
আনার মা বাবা দাদাদের উপর। 

কিন্তু কি নিয়ে ঝগড়া মনে করতে পারছে না।
খারাপ স্বপ্ন ভুলে যাওয়াই ভালো। মা চা দিয়ে গেছে একটু আগে। চায়ে চুমুক 
দিয়েছে। মা বলল , "কারেন্টের বিল গুলো দিয়ে আসবি টেবিলে রাখা আছে।"   

সে বলল ,"হুঁ ঠিক আছে।" সংসারের প্রায় সব কাজেরই দায়িত্ব তার কাঁধে। 
অবশ্য সে ছাড়া আর কেইবা আছে।দাদা একটা কারখানায় চাকরি করে।ছোট 
ভাই দিল্লিতে থাকে।বাবার একটা মুদিখানা দোকান আছে খুব একটা চলে না।

তাতেই মাঝে মাঝে খেয়াল খুশি বসে বিকু।পাশেই কিছুটা জায়গা আছে সেখানেই 
সাইকেলের দোকান খুলতে চায় বিকু ।বাবা মানা করে, সেই নিয়েই ঝামেলা বাধে  
বাবার সাথে।তার মতে  পুরানো দোকান টাকেই নতুন ভাবে সাজানো যায়।তারপর 
যে কাজ জানেই না সেই দোকান খুলে চালাবে কি করে?কিন্তু সে কথা মানতে 
নারাজ বিকু।তার মতে চালিয়ে নেওয়ার মতো বুদ্ধি যথেষ্ট আছে।  

বিকু বেরিয়ে পড়ল রাস্তায় ।একবার উজানকে ফোন করে ডেকে নিল।এক সাথেই 
চলল তারা।কিছু দূর ফাঁকা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো বিকু।কিছুদিন 
আগেও এখানে ঝোপ ঝাড়  ছিল। এখন কেটে ফাঁকা আবাসন গড়ে উঠছে। 
সুখটান দিচ্ছে সে ।এরই মাঝে উজান ফোন লাগিয়ে দিল রূপককে। ছেলেটা 
গেলতো গেল একবারও ফোন করেও জানাল না। 

এই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে রূপক। এখানে সকাল একটু দেরিতেই হয়।ব্যাঙ্গালোরের 
রাস্তায় বৃষ্টি  নেমেছে তখন। তিনতলার রুম থেকে দেখতে পাচ্ছে রূপক ,শহরটা 
কেমন ভিজে যাচ্ছে। দূরে   আবছা হয়ে আছে  ঘর বাড়ি গুলো।শহরের এই দিকটায় 
ছোট ছোট ঘর বাড়ী। এখানে মুষল ধারে বৃষ্টি কম হয়। যখন হয় অনবরত কুয়াশার 
মতো ঝরে যায়।এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠে।

উজানের কল, " কিরে কিভাবে পৌঁছলি? একবারও জানালি না?" উজানের ফোন পেয়ে 
খুশি হয়েছে রূপক।জানাল, "আরে এইতো এসেছি ক-দিন হল।সবে জয়েন্ট করেছি।নতুন 
জায়গা থাকা খাওয়ার অসুবিধা।ভাবলাম ঠিকমতো এডজাস্ট হয়ে গেলে ফোন করব খন একদিন 
তাছাড়া ঝামেলার মধ্যে খেয়ালও ছিল না।

তারপর বল কেমন আছিস?বিকু কোথায়?" 
উজান জানাল, "সব ঠিকঠাক আছি।","বিকু ফোন না ধরেই    
দূর থেকে জোর গলায় বলল "সাবধানে থাকিস রে।" 
"ঠিক আছে রাখছি এখন অফিস বেরোতে হবে। রাতের দিকে কল করব কথা হবে।" 
কল কেটে দিল রূপক।
 
"আনা আসছে না?" দূর থেকে দেখতে পেল বিকু "কলেজের টাইম হয়ে গেল?" 
একটু অবাক হয়েই বলে উঠল বিকু।
"না তোর জন্যে সময় থেমে থাকবে।" এক প্রকার ব্যাঙ্গ করেই বলল উজান।আনা 
খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ওদের । উজান আনার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল ।পিছু ফিরে ইশারা করতেই বিকু এগিয়ে গেল। উজান 
একটু দূরেই দাঁড়িয়ে রইল। 

আনাকে দেখলেই বিকু কেমন যেন মোহিত হয়ে যায়।তার মনের ভিতর গজিয়ে 
উঠে বিস্তৃণ সবুজ,নাম না জানা অজস্র সব ফুল ফুটে,উড়ে বেড়ায় অসংখ্য রঙিন 
প্রজাপতি।আর সেই সব ফুল থেকে  ভেসে আসে অদ্ভুত ভাল লাগা এক গন্ধ।

 তার সমস্ত চেতনা শূন্য হয়ে খসে যাওয়া 
পাখির পালকের  মতো ভেসে বেড়ায়  হাওয়ায়।সেই ছোট বেলা থেকেই আনার সাথে 
পরিচয় কিন্তু প্রেমটাযে কিভাবে হয়ে গেল সে নিজেও বুঝতে পারে না আজও।তখন 
আনা স্কুলে পড়ে খুব দুপুরে সাইকেলের পেছনের চাকায় ওড়না জড়িয়ে যায়।
 
আনার  গলায় চেপে বসে ওড়নাটা একেবারে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। আশেপাশে 
তেমন কেউ ছিল না।কোথা থেকে একেবারে দেবদূতের মতো উপস্থিত হয়ে বিকু 
আনাকে রক্ষা করেছিল। এক মহা বিপদ থেকে বেঁচে ফিরে এল সে । 

আনার ফর্সা গলাটা লাল হয়ে গেছিল।তারপর থেকেই বিকুর সাথে খুব ঘনিষ্ট হয়ে 
যায়।কিন্তু আনা যে তার প্রেমে পড়ে যাবে কখনই ভাবেনি।ধীরে ধীরে বিকুরও মন 
সায় দিতে থাকে। 

আনা কি একটু রেগে আছে সেদিনের  ঘটনার জন্যে? হতে পারে বিকু চলে এসার 
পর অনেক কথা শুনতে হয়েছিল তাকে? আরও কাছে এগিয়ে গেল বিকু।স্বতস্ফুর্ত 
ভাবেই শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল সে, 
"কি বলছিস? অনেক দিন পর দেখা হল!"
  
"শরীরটা একটু খারাপ ছিল। মা বেরতে দেয়নি কাল থেকে একটু ভাল আছি।     
দেখো সেদিন  যেটা করলে মোটেও উচিত হয়নি।এরকম দ্বিতীয় বার যেন না হয়।
আর গাছেতো চড়বেই না।এমন কিছু করলেই ব্রেকআপ করে নেব। মনে থাকে যেন।" 
এর আগে কখনোই আনাকে এতটা রুক্ষ হতে দেখেনি সে।আজ একেবারে চোখ পাকিয়ে 
হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।বিকুর কিন্তু মোটেই ভাবনার কোন পরিবর্তন হলই না।বরং মনে মনে 
হাসছে সে ।

তার আঙুল তুলে কথা বলার ভঙ্গিমা বিকুর কাছে বেশ মিষ্টি লাগছে।এই মিষ্টি 
স্বভাবের জন্যেইতো এত ভালবাসে তাকে। বেশি কথা বাড়াল না বিকু। আস্তে করে বলল,"ঠিক 
আছে ম্যাডাম আর হবে না বলছি।" আনা চলে গেলে বিকু সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। দিন দিন 
ম্যাচিওর হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা।ওর বিয়ের কথা যদি ভাবতে শুরু করে ওর বাবা মা?কিছুটা শঙ্কিত 
বোধ করে সে। 

সে ভালমতো জানে আনার বাবা-মা মেনে নেবে না তাকে।উজানতো  প্রায়ই 
সে কথা বলে । কিন্তু বিকুও দারুণ মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।একেবারে তুলে নিয়ে 
পালিয়ে যাবে দিল্লি, বম্বে না হলে অন্য কোথাও।সেকথা জানিয়েও রেখেছে আনাকে।আনার তাতে 
সম্মতি আছে। অবশ্য প্লানটা আনাই দিয়েছে তাকে। বিকু অবশ্য সে আইডিয়ায় রাজি ছিল না।
বলেছিল "কি খাওয়াব তোকে আনা?"আনার অকাট যুক্তি"কাতুদাওতো তুলে নিয়ে এসে বিয়ে 
করেছিল।দিব্বি সুখে আছে ওরা।"

 কাতুদার শ্বশুর বলে দেখেশুনে বিয়ে দিলেও এমন জামাই 
পেতাম না। বিকু আনার যুক্তি ফেলেও দিতে পারে না ।আবার মেনেও নিতে পারে না।তবুও 
আনার সাথে এক মত হয়ে বলেছিল ,"তবে বেশ তুমি যদি চাও!"
উজানের কাছে ফিরে এসতেই বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে জিজ্ঞেস করল,"কিরে কি বলল?"
বিকু হাসতে হাসতে বলল ,"ও কিছু না,চল।" ইলেকট্রিক বিলটা ভরে দিয়ে আসতে হবে। 
বাইকে স্টার্ট দিল উজান।   
 
 দুপুরে শুয়ে শুয়ে ভাবছে বিকু আনাকে নিয়ে পালিয়ে কি সে সুখি হতে পারবে? কেন 
যেন আজ দিদির কথা খুব মনে পড়ছে।সেই বালিকা বেলাতেই বিয়ে হয়ে যায় তার 
দিদির।সে অনেক বছর আগের কথা।বিকু তখন খুব ছোট।তার দিদি সুপর্না পালিয়ে 
গিয়েছিল এক অন্য জাতির ছেলের সাথে। দুদিন পর ফিরিয়ে এনেছিল বাবা আর জেঠু।সে 
কি মারধর। তারপরেও বুঝিয়ে রাখা যাচ্ছিল না সুপর্নাকে।

 তারপর পিসিমার দেখা এক বিহারি 
ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।প্রথম প্রথম আসত যেত।উপর থেকে  এক প্রকার সুখীই  
মনে হত সুপর্নাকে।প্রথম যেবার এসেছিল সুপর্না প্রায় এক বছর পর। বিকুকে দেখে   
বলেছিল,"হাই রাম! কিতনা বড়া হোগায়া!" আজও মনে আছে সে কথা ।সবাই খুব আশ্চর্য 
হয়ে গিয়েছিল সে আর বাংলা বলতে পারত না।বলত , "ভুল গায়ি ম্যা।" একটা মানুষ 
কিভাবে তার মাতৃ ভাষা ভুলে যেতে পারে?পাড়ার মহিলারা বলত, "যত ঢঙ।" কে জানে 
ঢঙ কিনা? তবে এটা সত্যি তারপর একদিনের জন্যেও  কেউ তাকে বাংলায় একটা শব্দও 
বলতে শুনেনি।  

প্রায় বছর দুই পর ফুলের মত সুন্দর এক মেয়ে হয়।তারপরেও আসাযাওয়া 
করত। তারপর কিযে হল ?আজ ষোল সতের বছর হয়ে গেল তার কোন খোঁজ খবর নেই।
কেউ ঠিকানাও রাখেনি যে একবার গিয়ে দেখা করে আসে।কে জানে আদৌ কি বেঁচে আছে? 
যতই দোষ ,অন্যায় করুক এতটা অবহেলা সন্তানের প্রতি কেউ করে?বিকু নেহাতই ছোট ছিল। 
নাহলে এটা সে কিছুতেই হতে দিত না। তার জীবন থেকে একটা মানুষ কিভাবে হারিয়ে গেল!           
ভাল লাগছিল না বিকুর মনটা ভারি হয়ে আছে। 

কি মনে করে উজানের বাড়ি চলে এল ।
উজান তখন ঘুমোচ্ছে এই এক অভ্যাস উজানের দুপুরে না ঘুমলে ঠিক হয় না এক ধাক্কায় 
ধড়ফড় করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসল।
"শালা, ওই ভাবে কেউ ডাকে? এক্ষুনি..।" 
"কেন? কারও স্বপ্ন দেখছিলি নাকি?"  

ঘুমের ঘোর তখনো ঠিক মতো কাটেনি সে বলল ,"বল ,কোথায় যাবি?"
"আরে ঠিক মতো ঘুম ধরছিল না তাই চলে এলাম তোর কাছে।" 
উজান চোখ বুজে বুজে একটা বালিশ বুকে জড়িয়ে ধরে হাই তুলতে তুলতে বলল,"ওহ।"  
বিকু তার পাশে আধশোয়া হয়ে বলল, "আরে বিকেল পাঁচটায় আনার একটা ডান্স ক্লাস আছে।"
একচোখ খুলে বিকুর দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে উজান বলল,"ডান্স ক্লাস ? 
সে তো রবিবার থাকে।"

"জানি না কি একটা কারণে আজ করাচ্ছে?" 
চার পাঁচটা স্টুডেন্ট আনার। সপ্তাহে একদিন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলোকে সে শিখায়।ভালো 
লাগে তার নিজেরও চর্চা হল আর...।এক কথায় তার ভালো লাগে নিজের প্যাশন নিয়ে থাকতে। 

"তাতে তোর কি?"
"ভাবছি একবার দেখা  হলে ভালো হয়।" 
উজান এইবার একটু উঁচু আর দৃঢ় কণ্ঠে বলল,"আমি এই সবে নেই।তুই একা চলে যা।" 
বিকু চুপ করে বসে রইল। ভিতরে ভিতরে কি রেগে যাচ্ছে।উজান আড় চোখে দেখে নিয়ে 
বিকু কে বলল,"পাঁচটা বাজতে এখনো অনেক বাকি। একটু ঘুমোতে দে।"

বিকু ভাল মতোই জানে তার কথা উজান যাই বলুক তার সাথে না গিয়ে থাকতে পারবে না।
এখন আর ঘুম ধরবে না উজানের এবার উঠে বসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,"তুই 
আনার টিকটক ভিডিও গুলো দেখেছিস?"  

"কোথায়? নাতো।" বিকু আনার স্টেজ পারফর্মমেন্স দেখেছে বেশ কয়েকবার।স্বরস্বতি পুজা, 
দূর্গা পূজার অনুষ্টান গুলিতে।ইউটিউবেও একবার উজান তাকে একটা ভিডিও দেখিয়েছিল।ভালোই 
নাচে আনা।সিনেমার নায়িকাদের মতোই।অন্তত, বিকুর কাছে তাই মনে হয়।তার কাছে স্মার্টফোন 
নেই। অবশ্য সে ইচ্ছে করেই নেয়নি।

কেন কে জানে?উজান মোবাইলের উপর আঙুল ঘসে ঘসে একটা ভিডিও চালাল।বিকু মাথাটা 
একেবারে উজানের কাঁধের কাছে নিয়ে এসে দেখতে লাগল ভিডিওটা।সে দেখছে কি আশ্চর্য কৌশলে 
নাভির নিচের অনেকটা অংশ তিরতির করে কাঁপাচ্ছে।কোমর দুলাচ্ছে। দেখে মাথাঘুরে যাবার উপক্রম বিকুর। 

"যার যা ইচ্ছে হয়েছে করছে। আমি আর কি বলব।"
বিকুর কথায় অভিমানের সুর স্পষ্ট।উজান কি ভিডিওটা দেখিয়ে ভুল করল তবে?এতদিন পর না দেখালেই ভালো করত।

 চুপ করে বসে আছে 
বিকু, মুখে আর কোন কথা নেই। নিশ্চয় ভিতরে ভিতরে রেগে যাচ্ছে সে। উজান কি বলবে ভেবে পেল 
না আর কাঁধে হাত দিয়ে বলল,"এইসব তো আজকাল সবাই করছে।তোর গর্ব হওয়া উচিত। আনা এতো 
ভালো একজন ডান্সার। বিকু ঠোঁট কুঁচকে বলল, "হুঁম।" "ভাল ডান্সার না ছাই। 

এটা কেবল নোংরা একটা ভিডিও শুধু ভাইরাল হওয়ার জন্যেই আনা  শরীর দেখানো কাজটা করেছে। 
রূপক ঠিকই বলেছিল, 'প্রেম করছিস ঠিক আছে তবে মন দিস না। এ মেয়ে খুব সুবিধার নয়।বুঝলি?'আসি এখন"
'বিকু পালিয়ে এল উজানের ঘর থেকে।      

                   **************

Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন