vul station a neme bangla uponyas 51th episode

 
Vul_station_a_neme_bangla_uponyas_51th_episode

ভুল স্টেশনে নেমে

সমীরণ সরকার

                  (৫১ তম পর্ব)


------ কী বলছো মা!  নন্দিনী বিস্ময় প্রকাশ করে।
------- আমিও ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছিনা কাকিমা। সামান্য একটা ফুলের সাহায্যে কি করে কেউ ধনকুবের হতে পারে?
----- দেখো বাবা পলাশ, ব্যাপারটা আমিও যে ঠিক বুঝতে পেরেছি তা নয়।vul station neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
------তাহলে?
----- আমি শুধু মঞ্জু বৌদি আর স্বামী কৃষ্ণানন্দের আলোচনা শুনেছি।ওই শয়তানটা বৌদিকে বলছিল যে,ওর গুরুদেব নাকি বলেছে যে,ওই ফুলের সামান্য একটা পাপড়ি পেলেও নাকি যে কোন সাধারণ মানুষ নাকি অলৌকিক কাণ্ড করতে পারে।কাজেই পুরো ফুলটার মালিক যে হবে ,সে অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী হতেই পারে।
------এও কী সম্ভব? নন্দিনী স্বগতোক্তি করে।
পলাশ বলে , দুনিয়াতে অসম্ভব বলে কিছু নেই ।কৃষ্ণানন্দের গুরুদেব যেমন বলেছেন ততটা না হলেও বিশেষভাবে বেড়ে ওঠা ওই গাছের ফুলের কিছু অদ্ভুত ক্ষমতা থাকতেই পারে। তবে এসব নিয়ে আলোচনার এখন সময় নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের এখান থেকে বেরোতে হবে। 
------ নরেশের কি হবে পলাশদা ?
------ ও এখানেই থাকবে। এতদিন তো কাকিমা আর মামাবাবু এখানে আটকে ছিলেন। আশা করি ও থাকতে পারবে এখানে। তাছাড়া সিকিউরিটি এলার্ম টা তো তুই নিয়ে নিয়েছিস ওর  কাছ থেকে। কাজেই ও যোগাযোগ করতে পারবে না,কাউকে জানাতেও পারবে না যে,ও এখানে বন্দি আছে। আমরা বের হবার সময় বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দেবো।vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
------ আর যদি ওর জ্ঞান ফিরে আসে এবং চিৎকার করতে শুরু করে,তাহলে?
----- প্রথম কথা, ঘন্টা তিনেকের  আগে ওর জ্ঞান ফিরবে না। দ্বিতীয়তঃ জ্ঞান ফেরার পরে ও এতটাই দুর্বল থাকবে যে আন্ডারগ্রাউন্ডের এই ঘর থেকে ওর চিৎকার বাইরে পৌঁছাবে না।
----- কিন্তু আমরা এখান থেকে বেরিয়ে কোথায় যাব পলাশদা?আর কিভাবে বা যাব?
------ যেন -তেন প্রকারেণ আমাদের  এখান থেকে পালিয়ে নিকটবর্তী কোন পুলিশ স্টেশনে  খবর দিয়ে তাদের সাহায্য নিতে হবে। সামনের গেট দিয়ে যাওয়া কোন রকমে সম্ভব নয় ।পিছন দিক দিয়ে যাওয়ার কোন রাস্তা আছে কিনা তুই জানিস নন্দিনী?vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
নন্দিনী উত্তর দেওয়ার আগেই বিশু মামা বললেন, এই আশ্রমের পিছনে অনেকটা ফাঁকা ডাঙ্গা মতো জায়গা পড়ে আছে। সেটা পেরিয়ে গেলে আছে একটা নদী। ওই নদী পেরিয়ে কি আছে আমি ঠিক জানিনা।
---- আশ্রমের পিছন দিকটা কি একদম ফাঁকা,একদম অরক্ষিত মামাবাবু? পলাশ জিজ্ঞাসা করে। 
      বিশু মামা একটু সময় চিন্তা করে উত্তর দেন, আমিতো পিছন পর্যন্ত গিয়ে দেখার সুযোগ পাইনি। একটা গাছের উপরে চেপে ভেতর থেকে যা দেখতে পেয়েছি ,তাই বললাম।
নন্দিনী বলে, মা, আজকে তো শনিবার। আজকে কি তাহলে........???vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
অন্নপূর্ণা দেবী বলেন, শুধু শনিবার নয়, আজ অমাবস্যা ও। আজকে বিশেষ চক্র বসবে। আমি যদ্দুর শুনেছি তাতে আজকে চন্দনা নামে একটি মেয়েকে তন্ত্র মতে দীক্ষিত করা হবে।
------ কি বলছো মা ,চন্দনা তো খুবই অভাবী পরিবারের মেয়ে। ওর বাবার ক্যান্সার হয়েছে। ওর মা কোন রকমে কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালায়। তাই মাকে সাহায্য করার জন্য ও একটা কাজ খুঁজছিল। ওকে তো চাকরি দেওয়ার নাম করে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন ও যদি এদের ফাঁদে পড়ে যায়, তাহলে তো ওর পরিবারের সর্বনাশ হয়ে যাবে।
----- আমি তো বৌদি আর কৃষ্ণানন্দের আলোচনা থেকে সেরকমই শুনলাম।
নন্দিনী বলে, পলাশদা ,এখান থেকে চলে যাবার আগে একবার কী ওই গাছটা আমরা দেখতে পারি?
------ দেখতেই পারি ,তবে কোনো প্রয়োজন নেই।
------ 'হাওয়া মহল'এ কিছু একটা অস্বাভাবিক কাজকর্ম হয় ,এটা বুঝতে পেরেই আমি তোমার 'হাওয়া মহল' যাওয়াটা আটকে ছিলাম। কিন্তু ওখানে লোকগুলো আটকে যে এত বীভৎস ব্যাপার হয়, তা কল্পনাও করতে পারিনি । সত্যি বলছি ,এখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে! পারলে ওই পিস্তলটা দিয়ে  কৃষ্ণানন্দের   মাথার খুলি উড়িয়ে দিতাম।
------- তুই যা করেছিস, তা সমর্থনযোগ্য নয় কখনোই। তবে ওটা তো তুই স্বেচ্ছায় করিস নি,পরিস্থিতির চাপে বাধ্য  হয়ে করেছিস।
অন্নপূর্ণা দেবী ভীত কন্ঠে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন,   পিস্তল কোথায় পেলি তুই?vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
--------ওটা তোমাকে পরে বলব মা।

                       
                       (আট)
নরেশ যাদব কে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে রেখে ওরা খুব সন্তর্পনে উপরে উঠে এল ।আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে ঢোকার দরজাটায় ঠিক আগের মতো করে তালা লাগিয়ে দিল পলাশ। তারপর চাবিটা অন্নপূর্ণা দেবীর হাতে দিয়ে বলল, এটা যত্ন করে আপনার কাছে রেখে দিন কাকিমা।পরে কাজে লাগবে।
বিশু মামা বললেন, এবারে চলো আশ্রমের শেষ মাথায় যাই। বাগানের ভিতর দিয়ে একটা শর্টকাট রাস্তা আমি দেখে রেখেছি। তোমরা সবাই এসো আমার সঙ্গে। কিছুক্ষণ পথ চলার পরে ওরা দেখতে পেল ওদের ঠিক ডানদিকে কিছুটা দূরে একটা জায়গা উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে আছে।vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
অন্নপূর্ণা দেবী ফিসফিস করে বললেন, নন্দিনী পায়ের শব্দ করিস না অত। একটু পা টিপে টিপে আয়। আমার মনে হচ্ছে ওই দূরে যেখানে আলো জ্বলছে, ওইখানে ওরা জড়ো হয়েছে, চক্র সাধনায় বসেছে। বেশি শব্দ করলে ওরা টের পেয়ে যাবে ।
নন্দিনী হঠাৎ ডান দিকে ঘুরে ওই আলো লক্ষ্য করে এগিয়ে চলল। পলাশ হাত ধরে টেনে ফিসফিস করে বলল ,ওদিকে কোথায় চললি?
নন্দিনী উত্তর দিলো , ওই গাছটা দেখতে।
বিশু মামা বললেন, তুই কি পাগল হয়েছিস?ওখানে গেলে তো ধরা পড়ে যাবি।vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
নন্দিনী বলল তুমি  একদম চিন্তা কোরোনা মামা। বললাম না, আমার কাছে পিস্তল আছে। দু'চারটা কে ঘায়েল না করে আমি ধরা দেবো না। আর পারলে আগে মারব ওই ভন্ড তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ কে।
নন্দিনীকে ওখানে যাওয়ার উপরে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ দেখে পলাশ ফিসফিস করে ব‌লল, চলুন মামাবাবু, আমরাও যাই। নন্দিনীকে একা ছাড়া যাবে না। আলোটাকে লক্ষ্য করে ওরা খুব ধীর পায়ে এগিয়ে চলল। মিনিট কয়েক হাঁটার পরে একটা নাতি উচ্চ প্রাচীর ওদের পথ আটকে দিল। বেশ অনেকটা জায়গা ফুট তিনেক  উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।
প্রাচীরের ওপাশে ওরা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল।
ফুট  চারেক লম্বা সেই ঝাঁকড়া পিশাচ গাছটার টুকটুকে লাল রঙের পাতাগুলোর আগা সরু হয়ে লম্বা স্প্রিংয়ের মতো দুলছে। গাছটার কান্ড ও ডালপালার রং শুকিয়ে যাওয়া রক্তের মতো কালচে বর্ণ। গাছটার সামনে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটা লোক উপুড় হয়ে পড়ে আছে।। অনতিদূরে তিনজন নারী ও দুজন পুরুষ আসনে বসে আছে চক্রাকারে। মাঝখানে একটা বিশাল বড় প্রদীপ জ্বলছে পিলসুজের উপরে। সেই আলোতে জায়গাটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। নন্দিনী দেখল, প্রত্যেক পুরুষের বাম পাশে একজন করে নারী বসে আছে। পাঁচজন পুরুষ ও নারী আসনে বসে থাকলেও এক জন পুরুষ রক্তবর্ণ আসনের উপরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নন্দিনী দেখল যে সে স্বামী কৃষ্ণানন্দ। কৃষ্ণানন্দের দেহের ঊর্ধ্বাংশ নগ্ন ,নিম্নাঙ্গে বাঘছাল কোন রকমে জড়ানো। কৃষ্ণানন্দের গলা থেকে একটা মোটা রুদ্রাক্ষের মালা ঝুলছে, ঝুলছে  নানা রঙের পাথরের একটি লম্বা মালা। কৃষ্ণানন্দের বাম হাতের কব্জিতে মোটা তামার বালা,ডান  হাতের কব্জিতে রুদ্রাক্ষের মালা জড়ানো। কৃষ্ণানন্দের পায়ের পাতার উপরে ওর সামনে ফুল ছড়ানো, যেন কেউ বা কারা পুজো করেছে কৃষ্ণানন্দ কে। বাকি দুজন পুরুষেরও উর্ধ্বাঙ্গ নগ্ন, নিম্নাঙ্গে লাল বস্ত্র। তিনজন নারীর পরনে রক্তাম্বর। সবার সামনে একটা করে তাম্র কুণ্ড আর বাঁদিকে রাখা 
একটা করে লম্বা বোতল, সম্ভবত  মদের। একটা  ধুনুচিতে ধুনা পুড়ছে।ধূপ ও ধুনার গন্ধে চারিদিক ভরপুর। চন্দনা নামে তরুণীটি বসে আছে স্বামী সর্বানন্দের বাঁদিকে। নন্দিনী অবাক হয়ে দেখে, চক্রে উপস্থিত তিন নম্বর পুরুষটি আর কেউ নয়, রাধামাধব মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। কৃষ্ণানন্দের বাঁদিকে বসে আছে মঞ্জু মামিমা। সেদিকে  চোখ পড়তেই মুহুর্তের মধ্যে স্থান কাল পাত্র ভুলে উত্তেজিত হয়ে পড়ে নন্দিনী। কোমরের কাছে লুকানো জায়গা থেকে পিস্তলটা বের করে তাক করে কৃষ্ণানন্দের দিকে। অবস্থার গুরুত্ব বিবেচনা করে মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে পলাশ। নন্দিনীর মুখে হাত চাপা দিয়ে ওকে টেনে সরিয়ে সরিয়ে নিয়ে আসে প্রাচীরের কাছ থেকে। তারপর চাপা গলায় ধমক দিয়ে বলে, এটা তুই কি করতে যাচ্ছিলি নন্দিনী?vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
------ sorry ! কৃষ্ণানন্দের   পাশে মামীকে দেখে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি।

(চলবে)

Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন