ভুল স্টেশনে নেমে
সমীরণ সরকার
(৪৯ তম পর্ব)
অতি সতর্ক পদক্ষেপে ওরা আবার মন্দিরের পিছন দিকের গেটের কাছাকাছি এসে একটা বড় গাছের আড়ালে আত্মগোপন করে।
একটু সময় পরে পলাশ নন্দিনীর কানে কানে বলে, এখানে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেয়ে লাভটা কি হচ্ছে?
--------কী করবে তাহলে?
-------- মন্দিরের আন্ডারগ্রাউন্ডের গেটের চাবি পিছনের গেটের পাহারাদারের কাছে আছে,আমি জানি।
-------তাহলে চল্ ,পিছনের গেটের পাহারাদারটাকে দুজনে মিলে কাবু করে চাবিটা কেড়ে নিই।[পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
----- কিন্তু কিভাবে?
------- দেখ না কি করি। আমি পিছনের গেটের বাঁ পাশে ওই মস্ত আমগাছটার পিছনে গিয়ে লুকোবো।
----- তারপর?
------- তুই একটু এধার-ওধার থেকে খুঁজে কয়েকটা ঢিল জোগাড় কর। তারপর আমি যে আম গাছটার পিছনে দাঁড়াবো তার কাছাকাছি একটু পর পর একটা করে ঢিল ছুঁড়বি।
-----কেন?
------- দেখবি মজা হবে।
-------কী মজা?
------ঢিলের শব্দ শুনে পাহারাদারটা উঠে দেখতে আসবেই। তারপর ওকে কাবু করে চাবিটা কেড়ে নিতে বেশি সময় লাগবে না।
------ পিছনের গেটে আজকে নরেশ আছে।
------কে নরেশ?
-------- নরেশ যাদব ।ধানবাদে বাড়ি। প্রচন্ড শক্তি ধরে ও ,আর খুব বিশ্বস্ত। [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
,------- দেখাই যাক।
পলাশ খুব ধীরে ধীরে পা ফেলে আমগাছটার কাছে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে ওর পিছনে।
নন্দিনী এদিক ওদিক খুঁজে চার পাঁচটা ঢিল যোগাড় করে। একটু পরেই একটা ঢিল ছুঁড়ে মারে আমগাছটাকে লক্ষ্য করে। জোরে শব্দ হয় একটা। রাত প্রায় শেষ হতে চলেছে। নরেশ যাদবের বোধহয় একটু ঢুলুনি এসেছিল। কিন্তু শব্দটা কানে যেতেই ও সোজা হয়ে বসে ।তাকায় এদিক-ওদিক। একটা রাত জাগা পাখি আম গাছের উপরের ডাল থেকে ডাকতে ডাকতে এগিয়ে যায় দূরে। নরেশ নিজের মনে বিড়বিড় করে, শালে পঞ্ছি....![পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
একটু সময় পরে আবার একটা ঢিল ছুঁড়ে মারে
নন্দিনী। নরেশ যাদব এবার উঠে দাঁড়ায়। হাতের টর্চটা জ্বালিয়ে এদিক-ওদিক ফেলে কিছু দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু দেখতে পায় না কিছু। কারণ নন্দিনী ও পলাশ কালো কাপড়ে সারা দেহ ঢেকে গাছের গুঁড়ির সঙ্গে প্রায় মিশে আছে। কাউকে দেখতে না পেয়ে মনের ভুল মনে করে আবার বসে পড়ে নরেশ। মিনিট কয়েক পরেই এবার একটা বড় ঢিল ছুঁড়ে মারে নন্দিনী।
এবারে সত্যি সত্যি যেন একটু ভয় পায় নরেশ। ঢিলের শব্দটা মনে করে আম গাছটার দিকে এগিয়ে যায় নরেশ যাদব । গাছটার কাছে যেতেই হঠাৎ করে পলাশ ওর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে কালো কাপড় দিয়ে ওর মুখটা বেঁধে ফেলে। নরেশের মুখ থেকে একটা গোঁ গোঁ শব্দ বের হয়। কিন্তু সেই অবস্থাতেও ও ডানহাতটা কোনরকমে ছাড়িয়ে নিয়ে পকেটে ঢোকাতে যায়। কিন্তু নন্দিনী বাঁ হাতে ওর হাতটা ধরে ডান হাতটা নরেশের প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে গোল বিস্কুটের মত একটা জিনিস বের করে নিয়ে আসে। নরেশ খুব চেষ্টা করে ওটা কেড়ে নিতে।[পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
পলাশ বলে, ওটা কিরে নন্দিনী?
----- এটা একটা বিশেষ ধরনের সিকিউরিটি এলার্ম। সমস্ত সিকিউরিটি গার্ডের কাছে এই ধরনের একটা করে যন্ত্র আছে। কেউ বিপদে পড়লে ওই যন্ত্রের একটি বিশেষ বোতাম টিপলেই সমস্ত সিকিউরিটি গার্ড এবং কন্ট্রোল রুমে সেই বার্তা পৌঁছে যায়। সবাই ছুটে আসে তৎক্ষণাৎ। আমি ব্যাপারটা জানি বলেই যন্ত্রটা আগে থেকে সরিয়ে নিলাম।
------ ভালো করেছিস।[পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
নন্দিনী যে বলেছিল নরেশ যাদবের গায়ে প্রচণ্ড শক্তি , প্রতি মুহূর্তে সেটা টের পাচ্ছে পলাশ। মুখ বাঁধা অবস্থাতেও নরেশ পলাশের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য।
নন্দিনী বলে,সাবধান পলাশদা,নরেশ ছাড়া পেলে সব্বোনাশ হয়ে যাবে!
------- দাঁড়া, ওকে ছাড়া পাওয়াচ্ছি!
কথা শেষ করেই পলাশ নরেশ যাদবের ঘাড়ের পিছন দিকে ডান হাতের চেটো দিয়ে সজোরে আঘাত করে ।নরেশ যাদব নিঃশব্দে পড়ে যায় মাটিতে।[পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
পলাশ বলে, নে, ওর পকেট থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডের ঘরের চাবি টা বের করে নে তাড়াতাড়ি। বাক্সগুলো জলদি চেক করতে হবে। তারপর খুঁজতে হবে বিশু মামাকে আর কাকিমাকে।
একটু খুঁজতেই নন্দিনী নরেশ যাদবের পকেট থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডের চাবিটা পেয়ে যায়।
তারপর বলে ,চাবি তো পেলাম ,কিন্তু নরেশের কী হবে?
------ ওই ভাবনাটা আমার উপরে ছেড়ে দে।
পলাশ কালো কাপড়টা দিয়ে নরেশের হাত দুটো পিছমোড়া করে বাঁধে। তারপর পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে নরেশের মুখের ভিতর ঠেসে ঢুকিয়ে দেয়।নরেশের শরীরটা অনায়াসে কাঁধে ফেলে পলাশ এগিয়ে চলে গেটের দিকে, নন্দিনীকে বলে,চাবিটা নিয়ে আয় আমার সঙ্গে।
(চলবে)
"
শব্দমঞ্জরী একটি bengali literary blogzine.all about bengali story,poem, articale, mythology , novel, and many more. আমদের এই ব্লগটি সাধারণত বাংলা সাহিত্য নিয়ে।
ConversionConversion EmoticonEmoticon