vul station a neme 27th episode somiran sarkar


vul_station_a_neme_27th_episode_somiran_sarkar


 ভুল স্টেশনে নেমে 

সমীরণ সরকার

ধারাবাহিক উপন্যাসের ২৭ তম কিস্তি

পলাশ অবাক হয়। আশ্রমের প্রাচীর এতো উঁচু কেন? এ তো মনে হচ্ছে যেন জেলখানার প্রাচীর।   আর প্রাচীরের রংই বা এমন অদ্ভুত  টুকটুকে লাল কেন?

প্রাচীরের গেটের কাছে পৌঁছাতেই আরও অবাক হয় পলাশ। আগে মন্দিরের দু'প্রান্তের গেটগুলো উঁচু হলেও সাধারণ গেটের মতই দেখতে ছিল। বড় বড় মন্দিরের গেট যেমন হয় আর কি । অর্থাৎ ,বাইরে থেকে মন্দির এর ভেতরটা দেখা যায় । আর মন্দিরের গেটে সিকিউরিটি গার্ডের      পাহারা দেওয়ার ব্যাপারটাও খুব আশ্চর্যজনক কিছু নয়।  ইদানিং অনেক মন্দিরের গেটেই  ঐরকম  সিকিউরিটি গার্ড থাকে। 
কিন্তু আশ্রমের এই রক্তবর্ণ প্রাচীরের গায়ে যে গেটটির সামনে এসে পৌঁছলো পলাশ, সেই গেটটি নিশ্ছিদ্র ধাতব  পাত দিয়ে তৈরি। কোন প্রহরী নেই তার সামনে। পলাশ অবাক হয়ে নন্দিনীকে জিজ্ঞাসা করে, কিরে, আমরা ভিতরে ঢুকবো কি করে ?গেট তো মনে হচ্ছে ভেতর থেকে বন্ধ করা আছে।
অন্যমনস্ক নন্দিনী সংক্ষেপে উত্তর দেয়, ভেবোনা, ঠিক ঢুকতে পারবো।
এরপর নন্দিনী  ওর  কোমরের কাছে  কোনো  এক লুক্কায়িত জায়গা থেকে  লাল রঙের একটা ইঞ্চি তিনেক লম্বা জিনিস বের করল। জিনিসটা দেখতে অনেকটা পেন্সিল ব্যাটারির মতো।তবে পেন্সিল ব্যাটারির চেয়ে সামান্য মোটা ।ওটার গায়ে  কোন একটা জায়গায় নন্দিনী চাপ দিতেই ওর ভিতর থেকে ইঞ্চিখানেক লম্বা একটা চ্যাপ্টা পাতের মত জিনিস বেরিয়ে এল। অনেকটা মোবাইলের সিম এর মত দেখতে । আর ওই ধাতব পাতের কোনো এক নির্দিষ্ট জায়গায় আঙ্গুল ছোঁয়াতেই দরজার ডান পাশে একটা ছোট্ট গর্ত সৃষ্টি হল। নন্দিনী ওর হাতের সেই জিনিসটা ওই গর্তে ঢুকিয়ে দিতেই কিছুক্ষণ পরে একটা তীক্ষ্ণ আওয়াজ ভেসে এলো। আর তারপরেই ধীরে ধীরে নিশ্ছিদ্র ধাতব  দরজা ঠিক মাঝখান থেকে দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে দুদিকে সরে গেল। নন্দিনী এবার গর্তের ভেতর থেকে সেই পেন্সিল ব্যাটারির মতো জিনিসটা একটু টেনে বের করে নিল। ওটা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে এলো।
নন্দিনী বললো, চলো পলাশদা, এবারে ভিতরে যাই।
----- হ্যাঁ ,চল্।
পলাশ গভীর মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করে দেখলো যে, নন্দিনী ভিতরে ঢুকে আবার ওই এক ই ভাবে ব্যাটারীর মত জিনিসটার নির্দিষ্ট জায়গায় চাপ দিতেই আবার ধাতব পাত  ভিতর থেকে বেরিয়ে এল । আর ওই ধাতব পাতের  নির্দিষ্ট জায়গায় আঙ্গুল ছোঁয়ানোর সাথে সাথেই ভিতরের ডানদিকের ধাতব পাল্লায় একটা জায়গায় একটা ছোট্ট গর্তের সৃষ্টি হল। নন্দিনী সেই গর্তে ব্যাটারির মতো জিনিসটা পূর্বের মত ঢুকিয়ে দিতেই পাল্লা দুটো আগের মতই নিশ্ছিদ্র ভাবে বন্ধ হয়ে গেল। নন্দিনী ঐ জিনিষটা বের করে নিজের বুকের কাছে জামার নিচে ঢুকিয়ে দিল।
দরজা বন্ধ হতেই নন্দিনী পলাশকে মৃদু আকর্ষণ করে বলল, এসো আমার সঙ্গে।
  পলাশ বলল, হ্যাঁ ,যাচ্ছি। কিন্তু.....?
----- তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পরে দেবো, একটু ধৈর্য ধরো।
----- বেশ, চল্।
পলাশ ভিতরে পা দিয়ে দেখল যে,
ঠিক বাইরের মতো ভিতরেও একটা  ফাঁকা মাঠ আছে ।বিশাল মাঠ ।কিন্তু তার সঠিক আয়তন পলাশ অনুমান করতে পারল না। সেই মাঠে বাইরের মতো বিভিন্ন রকম ফলের গাছ না থাকলেও  ফুলের বাগান আছে। আছে নানা রকম পাতাবাহার আর ক্যাকটাসের গাছ। আর আছে মাঝে মাঝেই ছোট ছোট  ঝাঁকড়া ঝাউ গাছ ।দূরে, সম্ভবত পূর্বদিকে, কিছু বড় বড় গাছ আছে দেখা গেল।
মাঠটাকে কেন্দ্র করে চারিদিকে অনেকগুলো দোতলা তেতলা বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে। একেকটা বিল্ডিং এর রং একেক রকম। নন্দিনী পলাশকে নিয়ে কিছুটা হেঁটে তেমনি একটা তেতলা বিল্ডিংয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পলাশের দেখে মনে হল যে, বিল্ডিং টা ঠিক যেন স্কুল বাড়ি
টাইপের। বেশ  লম্বা চওড়া একটা বারান্দার একপাশ খোলা। অপর পাশে পরপর সারি দিয়ে ঘর। পলাশ কে একটু সময় দাঁড়াতে বলে নন্দিনী তেমন একটি ঘরের সামনে গিয়ে তিনবার হাততালি দিতেই  পক্বকেশ, লোলচর্ম ,
ঈষৎ ন্যুব্জ  এক বৃদ্ধা বেরিয়ে এলো। বৃদ্ধার গায়ের রঙ  টকটকে ফর্সা, চোখের দৃষ্টি ভীষণ তীক্ষ্ন। নন্দিনী বৃদ্ধার কানেকানে  কি যেন বলতেই বৃদ্ধা আবার ঘরের ভেতর ঢুকে গেল। মিনিট দুয়েক পরে একটা লম্বা পিতলের চাবি হাতে বেরিয়ে এলো।
পলাশকে ইশারায় দেখিয়ে বৃদ্ধা কি যেন জিজ্ঞাসা করল নন্দিনীকে। নন্দিনী দুই হাত নেড়ে ইশারা করে কি যেন বুঝিয়ে দিলো বৃদ্ধাকে। বৃদ্ধার মুখে আগেও হাসি ছিল না, নন্দিনীর সঙ্গে কথা বলার পরে আরো যেন গম্ভীর হয়ে গেল। ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল বৃদ্ধা। নন্দিনীর মুখটাও কালো হয়ে গেল মুহূর্তের জন্য।

 নন্দিনীর সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায়  উঠতেই পলাশ দেখলো  যে ,ঠিক নিচের মতই বেশ প্রশস্ত একটা লম্বা বারান্দা। বারান্দার এক পাশে সারি সারি ঘর। পরপর সাতটা ঘর পার হয়ে আট নম্বর ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল নন্দিনী। বুড়ির দেওয়া চাবিটা দরজার গায়ে একটা ফুটোতে ঢুকিয়ে  চাপ দিল নন্দিনী। দরজার পাল্লাটা আপনা আপনি খুলে গেল।

(চলবে)
Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন