ধারাবাহিক উপন্যাস
চতুর্দশ পর্ব
ভুল স্টেশনে নেমে
সমীরণ সরকার
পলাশ একটু সময় চুপ করে থাকে। এই অপরিচিতা কে সত্যি কথাটা বললে এটাও তো বলতে হবে যে, সে একটা স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে।
পলাশ নীরব আছে দেখে মেয়েটি বলে, "চুপ করে গেলেন যে! আমি কিন্তু আবারো বলছি, আমি বলেছি বলেই বলতে হবে এমনটা কিন্তু নয়, আপনার ইচ্ছে না হলে বলবেন না"।
----- না না, কোন গোপনীয় বিষয় নয়। আমি একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিলাম।
-----ও,ভালতো! তা কবে ইন্টারভিউ?
---- আগামীকাল। কথা ছিল আজকের রাত্রিতে একজন আত্মীয়ের বাড়িতে কাটিয়ে আগামীকাল ইন্টারভিউ দেবার। কিন্তু ভুল স্টেশনে নেমে পড়ায় বুঝতে পারছি না যে, চন্ডিপুরে কখন পৌঁছাব!
------- আপনি কি করেন এখন?
----- কি আর করব, আমাদের মত শিক্ষিত মতো শিক্ষিত বেকাররা যা করে ,তাই করছি।
-----মানে?
---- মানে প্রাইভেট টিউশনি করা।
---- আর আপনার বোন?
---- ওতো এখনো পড়াশোনা করছে?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাপ ভিডিওতে দেখুন
উত্তর দেওয়ার পরেই পলাশের হঠাৎ মনে পড়ে যায় যে, বোনের বিষয়ে সে তো এই অপরিচিতা কে কিছুই বলেনি। তাহলে সে জানল কি করে যে তার একটা বোন আছে? ভারী অদ্ভুত তো!
পলাশ জিজ্ঞাসা করে, আমার যে বোন আছে তা আপনি জানলেন কি করে?
---- স্রেফ আন্দাজে বলতে পারেন। সবারই তো ভাই বোন দাদা কিছু না কিছু থাকে। ছাড়ুন ওসব কথা।
----- এবারে আপনার কথা বলুন।
--- আমার কথা?
----- হ্যাঁ। আমার জানতে খুব কৌতুহল হচ্ছে যে, আপনি এভাবে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গেলেন কেন? আপনি কি কাউকে....…?
-------- সেরকম কেউ থাকলে তো তার সঙ্গেই পালাতাম। এত রিস্ক নিয়ে রাতের আঁধারে এভাবে জঙ্গল পেরিয়ে এখানে আসবো কেন?
-- তাহলে?
---- সে অনেক কথা। সেসব কথা শুনতে কি আপনার ভালো লাগবে?
---- আপনি বলেই দেখুন না।
--- সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ছিলাম আমি। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। বাবা আর মাকে নিয়ে আনন্দেই ছিলাম। হঠাৎ একটা ঝড় এসে সব ওলট পালট করে দিল।
---মানে?
----- হঠাৎ স্ট্রোকে মারা গেলেন বাবা। বাড়ির অমতে বাবা আমার মাকে বিয়ে করে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে কর্মস্থলে ছিলেন। বাবা বেঁচে থাকতে পরিবারের অন্য কারো সঙ্গে সেরকম যোগাযোগ ছিলনা আমাদের। মারা যাওয়ার পর ঠাকুরমার নির্দেশে আমার এক কাকা আমাদের নিয়ে গেল দেশের বাড়িতে, হুগলির একটা গ্রামে।
কিন্তু যে কথায় আছে না অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়!
------মানে?
-------- গ্রামের বাড়িতে আর কিছু না হোক খাওয়া পরার অভাব ছিল না। কিন্তু মাস ছয়েক পরে হঠাৎ ঠাকুমাও মারা গেল তিনদিনের জ্বরে।
গ্রামের বাড়ি ,চাষের জমি ইত্যাদি সমস্ত ছিল আমার দুই কাকার নামে। কাকারা আমাদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করল।
আমাকে নিয়ে মা এবারে উঠল আমার এক মামার বাড়িতে।
(চলবে)
ConversionConversion EmoticonEmoticon