dharabahik uponyas vul station a neme 15th episode

dharabahik_uponyas_vul_station_a_neme_15th_episode

ভুল স্টেশনে নেমে

সমীরণ সরকার 

--- তারপর?

--- আমাকে নিয়ে মা কুমারপুর গ্রামে যে মামার বাড়িতে  উঠলো, সেই বিশু মামা ছিল মায়ের মাসতুতো দাদা। বিশু মামা ছিল নিঃসন্তান। আমাকে পেয়ে খুব খুশি হলো মামা। আমার বাবা বেঁচে থাকাকালীন এই বিশু মামা বেশ কয়েকবার মামীমাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে গেছিল । খুব ভালো মানুষ ছিল বিশু মামা। যেমন নরম স্বভাবের মানুষ ছিল বিশু মামা, মামীমা ছিল সর্বাংশে তার বিপরীত।

বাবার মৃত্যু সংবাদটা জানতোনা বিশু মামা। তাই বিধবা বেশে মাকে দেখে খুব অবাক হয়ে গেল বিশু মামা, ব্যথিতও হল।খুব ছোট বয়সে একটা অ্যাক্সিডেন্টে একসাথে মারা গেছিলেন আমার দাদু ও দিদিমা। আমার দিদিমার একমাত্র বোন মানে আমার মায়ের মাসি মানুষ করেছিল আমার মাকে। কাজেই বিশু মামা আর আমার মায়ের মধ্যে সম্পর্কটা ছিল নিজের ভাই বোনের মতোই। বয়সের দিক দিয়েও প্রায় পিঠাপিঠি ছিল দুজনে।

মামিমা কিন্তু আমাদের দেখে মোটেই খুশি হলো না। মা তাকে খুশি করার জন্য সংসারের যাবতীয় কাজের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিল। চূড়ান্ত পরিশ্রম করেও মা কিন্তু মামীমাকে খুশি করতে পারত না।বিঘা কয়েক চাষের জমি, গুটি তিনেক মাছ চাষের পুকুর আর একটা মাঝারি মানের মুদি দোকানের আয়ে বিশু মামার অর্থনৈতিক অবস্থা

খুব সচ্ছল না হলেও একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো ছিল না। তবু আমরা 'উড়ে এসে জুড়ে বসেছি', 'বিশু মামাকে বোকা পেয়ে তার ঘাড়ে চেপে তার অন্নধ্বংস করছি',' আমার মা অপয়া বলে ছোটবেলায় মা 

-বাবা কে হারিয়েছে, এখন স্বামী খুইয়েছে' ইত্যাদি হাজার রকম কটু বাক্যে মাকে সব সময় বিদ্ধ করতো মামিমা।

----- আপনার মামা কিছু বলতেন না?

---- বললাম না মামা যত শান্ত ও ভদ্র ছিল,  মামিমা ছিল ঠিক তার উল্টো। দজ্জাল আর মুখরা বলতে যা বোঝায় তাই আর কি। তাছাড়া মামা তার মুদি দোকান খোলার জন্য বেশ সকালেই ঘর থেকে বেরিয়ে যেত, ফিরত দুপুরবেলায়। দুপুরে স্নান খাওয়া সেরে আবার বেরিয়ে যেত । দোকান বন্ধ করে হিসাবপত্র চুকিয়ে প্রায় দিনই ফিরতে রাত হত। কাজেই সারাদিন মামিমা কি করতো না করতো সে ব্যাপারে কিছু জানত না মামা। তাছাড়া মামা বাড়িতে থাকা কালীন মামিমা ঠিক বিপরীত ব্যবহার করত।

----- ও বাবা, এ তো একেবারে পুরনো দিনের বাংলা সিনেমার প্লট।

----- ঠাট্টা করছেন!

---- আরে না না, মোটেই ঠাট্টা করছি না। জাস্ট আমার যা মনে হল, সেটাই বলে ফেলেছি। কিছু মনে 

করবেন না, প্লিজ। তারপর কি হলো বলুন।

------ সমস্যাটা আরো প্রকট হল আমি স্কুলে ভর্তি হবার পর।

---- মানে?

----- বাবা বেঁচে থাকতে আমি মাধ্যমিক পাস করেছিলাম। কিন্তু বাবা চলে যাবার পর থেকে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছিল। মামা স্থানীয় স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করে দিল আমাকে । এ ব্যাপারে মামিমার কোনরকম ওজর আপত্তি ধোপে টেঁকেনি। মামা খুব কড়া মনোভাব নিয়েছিল।আমি স্কুলে যাওয়ার পর মায়ের উপর মামিমার অত্যাচার টা আরো বেড়ে গেল। এই সময়ে বিশু মামার বাড়িতে এসে উপস্থিত হলেন মামিমার এক দূর সম্পর্কের ভাই। তিনি নাকি দীর্ঘদিন বাড়িছাড়া। ত্রিপুরায় কোন এক ঠিকাদারের আন্ডারে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছিলেন। হঠাৎ তার দেশে ফেরার ইচ্ছা হওয়ায় ফিরে এসেছেন তিনি। আর ফিরে এসে নাকি প্রথমেই এসেছেন তাঁর দিদির কাছে অর্থাৎ আমার মামার বাড়িতে।

----- তিনি কি বিবাহিত ছিলেন না অবিবাহিত?

------- দু-দুবার নাকি বিয়ে করেছেন তিনি, আর দুবারেই নাকি তার স্ত্রী  অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে।

--- তারপর?

---- আমাকে দেখে নাকি তার তৃতীয় বার দার পরিগ্রহ করার সাধ জাগল মনে!

----- বাহ! সিনেমার গল্প টা কমপ্লিট হলো এবারে।

     ওই ভদ্রলোক নিশ্চয়ই মাতাল ছিলেন।

------- কি করে জানলেন আপনি,?

------- স্রেফ অনুমান বলতে পারেন। তারপর কি হলো বলুন।

----- আমার বা আমার মায়ের মতামতের তোয়াক্কা না করে ভাইয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করতে শুরু করল মামিমা।

---- বাহ। সত্যিই তো এটা সিনেমার গল্প হয়ে গেল। ওই তেজবরে মাতাল পাত্রের হাত থেকে রক্ষা পেতেই কি আপনি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছেন?

------ হ্যাঁ।মেয়েটি কথা শেষ হতে না হতেই হঠাৎ আবার মোটরবাইকের আওয়াজ ভেসে এলো। মেয়েটি বলে উঠলো,' সব্বনাশ !ওরা বুঝি আবার এসে গেছে।'

(চলবে)

পূর্ব প্রকাশিত পর্বগুলি পড়তে ক্লিক করুন

                                      ইমোজি সম্পর্কে কয়েকটি অজানা তথ্য

                                                                            


Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন