somaj basu অণুগল্প লড়াই দাসের গল্প

somaj_basu_অণুগল্প_লড়াই_দাসের_গল্প
 অণুগল্প

লড়াই দাসের গল্প 
সমাজ বসু

       লড়াই দাস নামটা কে বা কারা দিয়েছে এই অঞ্চলের কেউ জানেই না। তাঁর আসল নাম সেই যে অন্নপ্রাশনের দিন বেঁধে তুলে রাখা হয়েছে,আজ অবধি বাড়ির কেউ খুলেই দেখেনি। বাড়ির লোকেরাই যখন লড়াই দাসকে কোলে তুলে নিয়েছে,তাহলে বাইরের লোকেরা তাকে কোল থেকে নামায় কোন্ সাহসে? 
     নামটা মনে হয় তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। বাবা,কানাই দাস আজীবন লড়াই করে গেছেন। সেই যে দেশভাগের সময় শেয়ালদা স্টেশনে পরিবার নিয়ে লড়াই করে নেমেছিলেন, সেই শুরু। ট্রেন থেকে নেমেই ছেলে সেদিন আধো আধো সুরে বলেছিল,কি লড়াইটাই না করলাম। বাবা বুঝেছিলেন,ছেলে এইটুকু বয়সে লড়াইকে ঠিক চিনতে পেরেছে। আর কোন চিন্তা নেই।
        লড়াই দাস এখন এক মাঝবয়সী মানুষ। শৈশবে যখন তার বাবা চোখ বুজলেন,লড়াইয়ের ব্যাটনখানা নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। নিজেও বুঝেছেন, সবাইকে বুঝিয়েছেন লড়াই ছাড়া গতি নেই। মানুষের মত প্রাণীজগতেও এই লড়াই বিদ্যমান। এমনকি পুরাণ, মহাভারতেও। বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী। কুরুক্ষেত্রে লড়াইয়ের পরেই তো শান্তি ফিরেছিল। তাই তো, দশজন,একশজন কিংবা হাজার লোকের মিছিলে সবার আগে লড়াই দাসের গলা শোনা যায়-- লড়াই লড়াই লড়াই চাই,লড়াই করে বাঁচতে চাই। 
       পুঁথিগত শিক্ষার অভাবে স্থায়ী কোন পেশা না থাকার কারনে,এই লকডাউনের আবহে তাঁকে রীতিমতো লড়াই করে সংসার চালাতে হচ্ছে। কখনো ডিম,মাছ, সবজি ফেরির মাধ্যমে,আবার কখনও বা রাত জেগে বানানো কাপড়ের মাস্ক বেচে। এরই মধ্যে ছেলে মেয়ে দুজনকেই পড়াশোনায় এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। 
     শুধু তাঁর এই লড়াকু মনোভাবই তাঁকে এলাকায় বিশেষ পরিচিত করে তুলেছে। বহু মানুষ অনুপ্রাণিত। উজ্জ্বীবিত। তাঁর উদাহরণ সামনে রেখে বহুজন হতাশার সাঁকো পেরিয়েছে। এত পরিচয় থাকা সত্ত্বেও নিজের দুই ছেলে মেয়েকে লড়াইয়ের পথেই ঠেলে দিয়েছেন।

       বেশ কিছুদিন হল করোনা আক্রান্ত লড়াই দাসকে নিয়ে সবাই চিন্তাগ্রস্ত। ডাক্তার ভৌমিকের সহযোগিতায় ,তাঁরই তত্ত্বাবধানে সরকারি হাসপাতালে আছেন। সারা জীবন লড়াই করা মানুষটার ইমিউনিটি শূণ্য। লড়াই করতে করতে নিজের কথা ভুলেই গেছেন।
      ---- লড়াই  লড়াই লড়াই চাই,লড়াই করে বাঁচতে চাই.... সাতসকালে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে   তুলেছে এই সংগ্রামী ঐকতান। যে যেখানে দাঁড়িয়ে, ছুটে গিয়ে গলা মেলাচ্ছে ঐকতানে। আজ এলাকায় বিজয় উৎসব। মিষ্টি মুখের পালা। শেষ পর্যন্ত করোনার সাথেও লড়াই?
 ---- এ লড়াই জিতবে কে? তুমি আমি আবার কে!  পিপিই পরিহিত ডাক্তার,স্বাস্থ্যকর্মী সবাই চিকিৎসা চলাকালীন বহুবার শুনেছেন এই এক বুলি তাঁর মুখে। তাঁরা নিশ্চিন্ত হয়েছেন। ভরসাও পেয়েছেন। বুঝেছেন, এই মানুষ হারবেন না। 
     শরীর ও মনের সব শক্তি দিয়ে লড়াই করা, করোনা বিজয়ী লড়াই দাসকে তেরো দিনের মাথায় ফুল মিষ্টির হুল্লোড়ে ঢেকে ফিরিয়ে আনছে এলাকার মানুষ। 
      এত খুশির জোয়ারেও একটা কথাই ভাসছে, কাল থেকে আবার শুরু হবে তাঁর বেঁচে থাকার নতুন লড়াই।  লড়াকুর নাম,শ্রীযুক্ত লড়াই দাস।

সমাজ বসু
 
আরও পড়ুন 
অডিও স্টোরি 





Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন