সমীরণ সরকারের ধারাবাহিক উপন্যাস ভুল স্টেশনে নেমে/ দশম কিস্তি

 
সমীরণ_সরকারের_ধারাবাহিক_উপন্যাস_ভুল_স্টেশনে_নেমে/দশম_কিস্তি

ধারাবাহিক উপন্যাস
                  ভুল স্টেশনে নেমে

সমীরণ সরকার 

                              দশম কিস্তি 

(তিন)

নন্দিনী অনেকদিন আগেই হারিয়ে গেছে পলাশের জীবন থেকে। ঠিক কোথায় ও এখন আছে বা কি অবস্থায় আছে তার কোন খবরই রাখে না পলাশ। কি করেই বা রাখবে। তার কোন উপায় তো রাখেনি নন্দিনী।
     গ্রামে থাকাকালীন হঠাৎ একদিন অনেক রাতে ছুটতে ছুটতে পলাশদের বাড়িতে এসেছিল নন্দিনী। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল ,অসহ্য বুকের যন্ত্রণায়  ছটফট করছে ওর বাবা।
 পলাশের বাবা  নন্দিনীকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে, সেদিন সন্ধ্যা থেকেই নাকি বুকে অল্প অল্প ব্যথা হচ্ছিল হরেন মাস্টারমশাইয়ের। প্রথমে  উনি ভেবেছিলেন, গ্যাসের ব্যথা । কারণ সেদিন দুপুরে স্কুলে সদ্য জয়েন করা  ভূগোলের মাস্টারমশাই  বিনয় বাবুর ছেলের অন্নপ্রাশন উপলক্ষে নিমন্ত্রনে  একটু গুরুভোজন হয়েছিল। কাজেই বুকে ব্যথা শুরু হওয়ার পরে উনি কাউকে কিছু না জানিয়ে
ওনার স্ত্রীর অম্বলের ওষুধের বোতল থেকে বার দুই তিন অম্বলের ওষুধ খেয়েছিলেন। প্রথমটায় নাকি একটু রিলিফ পেয়েছিলেন। কিন্তু রাত বাড়তেই বুকের ব্যথাটা বাড়তে থাকে। এখন অস্থির অবস্থার মধ্যে আছেন উনি, ছটফট করছেন। ছুটে গিয়েছিলেন পলাশের বাবা নন্দিনীর সঙ্গে। পলাশকে নির্দেশ দিলেন ,বিশু ড্রাইভার কে খবর দিয়ে গাড়ির ব্যবস্থা করতে। হরেন মাষ্টারমশাইকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
           হরেন মাস্টার মশাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ডাক্তারবাবুরা বাঁচাতে পারেননি হরেন বাবুকে। হরেন মাস্টারমশাই চাকরি সূত্রে এখানে এসে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছিলেন। ওনাদের গ্রামের বাড়ি ছিল বাংলা ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডের কোন এক ছোট্ট গ্রামে। 
নন্দিনীর ঠাকুরমা তখনো বেঁচে ছিলেন। হরেন বাবু ছিলেন তাঁর বড়ছেলে। গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে হরেন বাবু বাড়ির সকলের অমতে  অব্রাহ্মণ শূদ্র পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করায় বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছিল। আর এই কারণে হরেন বাবু কোনদিন তাঁর গ্রামের বাড়িতে যান নি বা কোনদিন তার পরিবারের কেউ এখানে আসেন নি। যদিও হরেনবাবুর মা অর্থাৎ ঠাকুরমার সঙ্গে মাঝে মাঝেই ফোনে যোগাযোগ রাখত নন্দিনী। তিনিও রাখতেন। আর নাতনির মুখে পুত্র বিয়োগের কথা শুনে ছুটে এসেছিলেন তিনি। শ্রাদ্ধশান্তি চুকে যাওয়ার পরে নাতনি আর পুত্রবধূকে নিয়ে চলে গেছিলেন  তিনি। পুত্রের জীবিতাবস্থায় যে পুত্রবধূকে স্বীকৃতি দেননি তিনি ,পুত্রের মৃত্যুর পরে নাতনির কারণে তাকেই নিয়ে গেছিলেন দেশের বাড়িতে।
নন্দিনীর সঙ্গে ধীরে ধীরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল। আর সেটা হয়েছিল নন্দিনী বোধহয় কোন যোগাযোগ রাখতে চায়নি বলেই ।অবশ্য এর সূত্রপাত হয়েছিল হরেন বাবুর মৃত্যুর অনেক আগেই। তার কারণটা সেদিন খুঁজে পায়নি পলাশ, আজও জানেনা।
যদিও আজকে জানা বা না জানায় কিচ্ছু এসে যায়না। কারণ নন্দিনী মেয়েটার কোন অস্তিত্ব তো আজ পলাশের মনের গভীরে ছাড়া আর কোথাও আদৌ আছে কিনা বা কোথায় কিভাবে আছে, তা জানেনা পলাশ।
       ফস করে দিয়াশলাই জ্বালানোর শব্দে চমকে উঠে পলাশ । ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে হাত দুয়েক দূরে একটা লোক জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি দিয়ে বিড়ি ধরানোর চেষ্টা করছে। কে লোকটা? কখন এলো এখানে??

(চলবে)

Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন