মা ও ছেলের গল্প
ek rupkothar golpo
বাংলা ছোট গল্প মা ও ছেলে bengali short story
শাক্য চলেছে পক্ষিরাজের পিঠে বেশ হেলতে দুলতে ধীরে ধীরে পাহাড়ি রাস্তা পেরোতেই
বিস্তৃন সবুজ তৃণভূমি। ঘোড়াটা এবার ছুটছে তীব্র বেগে।এবার উড়ান দিল আকাশে। বেশ কিছুক্ষণ
পর মাটিতে নেমে পড়ল ।না এর বেশি সে আর যেতে পারবে না । এর পর সোনালী হরিণের
দেশ তাদের ভূমিতে প্রবেশ করার কোন অধিকার তার নেই। কারন তারা এই জঙ্গল ভাগ করে নিয়েছে
দুই দেশে সমান ঘাসের ভিত্তিতে । একজন ঘোড়া ওদের দেশে ঢুকে পড়লে ওদের নাকি ঘাসের ঘাটতি
দেখা দেবে ঘোড়ারা নাকি ঘাস বেশি খায়।শাক্য বলল, 'বেশ',। এই সহযোগিতা
করার জন্যে তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে আবার রওনা দিল।পক্ষিরাজ তাকে সাহায্য করেছে
কারন শাক্য কথা দিয়েছে যে সে কোন দিন রাজা হলে মানুষ আর রাক্ষসদের থেকে তাদের রক্ষা করবে।
কারণ ঘোড়াদের প্রধান শত্রু মানুষ আর রাক্ষস। পক্ষিরাজ শাক্যর মধ্যে রাজা হওয়ার লক্ষণ দেখতে পেয়েছে।
সন্ধ্যে হয়ে এসেছে প্রায় এই অন্ধকারে বাকি রাস্তা পাড়ি দেবার কোন উপায় নেই। তাই মনস্থির
করে একটা বড় বৃক্ষের উপর চড়ে বসল। আজ রাতটা তাকে এখানেই কাটাতে হবে। কিছু ফল
তাকে সেই জাদুকরি ডাইনি বুড়ি দিয়েছিল। তা থেকেই কয়েকটা খেয়ে নিল।ধীরে ধীরে চোখ জড়িয়ে
আসছে তার।ক্লান্তি লাগছে। আজ যেন চাঁদ একেবারে পৃথিবীর কাছে নেমে এসেছে।যেন উপুড়
হয়ে পড়েছে সমস্ত জঙ্গল জ্যোৎস্নায় ভিজে যাচ্ছে। সে দেখতে পাচ্ছে সোনালি হরিণের পাল এদিক থেকে
ওদিকে ছুটে যাচ্ছে । আর ছড়ীয়ে পড়ছে সোনার রেণু ।এক অদ্ভুত গন্ধে মোহিত হয়ে যাচ্ছে সে।
দূরে একটা জলাশয়ের উপর দিয়ে উড়ে আসছে
অজস্র জোনাকি। তারা এই গাছটার দিকেই আসছে। তাদের আলো যেন আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে
যাচ্ছে ধীরে ধীরে ।ক্রমশ সমস্ত জঙ্গল আলোকিত হয়ে গেল। আরও কাছে চলে এল তারা।
যেখানে সে শুয়ে ছিল সেই গাছের চারপাশে তারা উড়ে উড়ে ঘুরতে শুরু করল। গা-ছমছমে
একটা ভয় তাকে জড়িয়ে ধরছে।যা সে ভেবেছিল তা নয়।জোনাকি নয় এযে হুবুহু মেয়ে-মানুষের
অবয়ব । মানুষ কি উড়তে পারে ! না, তাহলে এরাই পরি । তাকে দেখে তারা যেন নিজেদের
মধ্যে কিছু বলাবলি করছে। শাক্য পরিষ্কার বুঝতে পারল এই গাছে ওদের বাস ।অন্যায় ভাবে
সে তাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে।তার আর নিস্তার নেই। কয়েকজন পরি তাকে টেনে-হিঁচরে
গাছ থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।তার পিঠের সাথে বাঁধা তরবারি দেখে পরিরা ভয়ে ছেড়ে দিয়ে
আর্তনাদ করে পালিয়ে গেল অনেকটা দূরে। শাক্য বুঝতে পারল । যে তারা যেকোন কারণে এই
তরবারিকে ভয় পেয়েছে।এইবার একটু মনে সাহস এল শাক্যর। সে জানে এই তরবারিতে এমন
কোন অলৌকিক শক্তি আছে যা দিয়ে বড় বড় শক্তিশালি রাক্ষসদেরও ধরাশায়ী করা যেতে পারে।
সে এবার বুঝতে পারছে রাজা কেন তার বাবাকে এত পছন্দ করে।ডাইনিবুড়ি তাকে বলেছিল
এই তরবারির অশেষ গুন যে ধারণ করবে তার চতুর্গুণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। শাক্য পরিদের উদেশ্যে
বলল, "তোমাদের ভয় পাবার কোন কারন নেই ।আমি কেবল এক রাতের জন্যে আশ্রয় নিয়েছিলাম
বেশ আমি অন্যত্র চলে যাচ্ছি।" এমন সময় পরি রানি নেমে এল তার সামনে ।বলল, "হে মানব
সন্তান তুমি মানুষ হলেও তমার শরীরে পরি জাতির রক্ত বইছে। যা তোমার গায়ের গন্ধে টের
পাওয়া যায়। তোমার সম্মন্ধ্যে জাদু বলে কিছু অনুসন্ধান করে যা বুঝলাম।
তোমার মা সোনাপরি মানুষ কে ভালবেসে ঐ নদীর পারে বাস করতে শুরু করে।
তার অনেক আগে থেকেই রাক্ষসরাজ বিভৎসুর নোংরা নজর ছিল সোনা পরির উপর। বিভৎসু
কেবল মাত্র রাক্ষসই নয় একজন ভয়ানক জাদুকর।তার কথায় রাজি না হওয়াতে বিভৎসু তার
জাদু বলে ডানা পুড়িয়ে দিয়েছিল। ক্ষত সেরে গেলেও ডানা নেই সেই লজ্জ্বায় আর পরি রাজ্যে
ফিরেনি। তারপরও ক্ষান্ত হয়নি বিভৎসু । শুনেছিলাম মানুষের রাজ্যে গিয়েও তুমুল তাণ্ডব চালায়।
সেখান থেকে সোনাপরিকে হরন করে নিয়ে আসতে গিয়ে বিভৎসু মুখোমুখি হয় তোমার বাবার।
তোমার বাবার কাছে এই অলৌকিক তরবারি যেটা পেয়েছিল তোমার দিদার কাছে।তিনিও ভয়ানক
কালজাদু করতে জানতেন । আর কালজাদু পরিরাজ্যে অপরাধ হিসেবে মানা হয় । তাই তোমার দিদাকেও
বিতাড়িত হতে হয়েছিল। শুনেছি এখন নাকি কোন ঝর্নার ধারে গুহায় থাকে।" শাক্য ভাবছে
তাহলে সেই ডাইনি বুড়িই তার দিদা।সব কিছু এইবার পরিষ্কার বুঝতে পারছে শাক্য। জিজ্ঞেস
করল, " তাহলে আমার মা এখন কোথায় ?"
পরিরানি জবাব দিল ," বিভৎসু এই তরবারির সম্মুখীন হতে না পেরে মন্ত্রপূত জল তার গায়ে ছড়িয়ে
দিলে গাছে রূপান্তরিত হয়ে যায়।"
আরও বেশি হতবাক হয়ে যায় শাক্য তাহলে সেই কথাবলা গাছই তার মা। যাকে সে নিজের অজান্তেই
মা বলে ডেকেছে অনেক আগেই। বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল মায়ের জন্যে।
ConversionConversion EmoticonEmoticon