অন্তহীন
একটা মেয়ে এবং রহস্যময় তার প্রেমিকের গল্প।
প্রতিদিন দুপুর হলেই কেমন একটা গা ছম-ছম করে। আবির অফিসে চলে যাওয়ার পর,দুপুরে সাধারণত মেঘনা একা একাই থাকে। বিয়ের পর মেঘনাকে যোধপুরের এই ভাড়া বাড়িতে এনে রেখেছে । আশেপাশে কারও সাথে তেমন পরিচিত হয়ে উঠেনি তাদের। তাই , সঙ্গী বলতে ওই ছয় ইঞ্চি সাইজের স্মার্টফোন। তারপর সারদিন ফেসবুক আর ফেসবুক।
মাঝে সাঝে টীক-টক শর্ট ভিডিও করে আপলোড দেয় আজ কল তার ফ্যান ফলোয়ারসও নেহাত কম নয় । এইসব করার পর যখন সে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রিতিমতো সেলিব্রিটি মনে হয় নিজেকে। আবির যদিও এইসব মোটেও পছন্দ করে না। তবুও বৌয়ের মন রাখতে একটা ট্রিপড কিনে দিয়েছে এই ভেবে একাএকা কিই বা করবে সারাটাদিন ঘরে বসে থেকে।
এইসব করে একটু টাইম পাস করুক।এমাজন থেকে মেঘনা নিজেই পছন্দ করলে আবির অর্ডার দিয়ে দেয়। ট্রিপডের উপর মোবাইলের ক্যামেরাটা রেখে যেই একটা গানে নাচতে যাবে ওমনি রান্না ঘরের বাসন গুলো ঢং ঢং করে পড়ে যায় তীক্ষ্ণ আওয়াজে কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম।বিরক্ত হয়ে মেঘনা বেড়াল ভেবে ছুটে গেল সে দিকে। "শালা, আজ তোর শাস্তি আছে রোজ রোজ বাসন ওলটানো, একদিনও ধরা পরে না যে।"
দাঁতে দাঁত চেপে বলতে বলতে কিচেনে ঢুকেই থমকে দাঁড়াল মেঘনা।,রোজকার মতো আজও নিরাশ হল মেঘনা। না, কেউ কোথাও নেই।গা ছম ছম করছে মেঘনার। ড্রয়িং রুমে এসে বসল।কি হচ্ছে আজকাল এই সব অদ্ভূতুড়ে কাণ্ড। আবির কে বললেও এসব বুঝবে না। বেশ কয়েকদিন ধরেই এমন হচ্ছে। মেঘনা ভাবছে বুঝি বেড়ালের কাজ কিন্তু এক দিনও কোন বেড়াল কে সে দেখতে পায়নি। সত্যিই অদ্ভূতুড়ে কাণ্ড। হঠাৎ মনে হল ভূত টুতের ব্যাপার নয়তো আরও ভয় পেল মেঘনা। এইবার চমকে উঠল মেঘনা দরজা খোলার আওয়াজ আসছে। এমন সময়তো কেউ আসবার কথা নয়। তাছাড়া দরজা বন্ধই করা আছে। আবির বেরিয়ে গেলে দরজা বন্ধই করা থাকে। আওয়াজটা ঠিক কোন দিক থেকে আসছে বোঝা গেল না। ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে রইল মেঘনা। এ
মন সময় তার সামনে এক অবয়ব প্রকট হল সে ধীরে ধীরে তার একেবারে সামনে এসে দাঁড়াল। আতঙ্কিত মেঘনা আস্তে আস্তে মুখ তুলে তাকাল সেই অবয়বের দিকে। এ কে? কাকে দেখছে সে? কখনও স্বপ্নেও কল্পনাও করতে পারেনি। এটা কিভাবে সম্ভব? "
তুমি?" স্বকৌতুহলে মুখ তুলে তাকাল মেঘনা বুকের ভিতরে দ্রাম দ্রাম করে দামামা বাজছে।"বন্ধ ঘরে তুমি ঢুকলে কি ভাবে? আর এখান কার ঠিকানা জানলে কি করে?" বুকের ভিতর থেকে এখন এক আলাদা ভয়ে মেঘনার শরীরটা হালকা হয়ে গেল। হাত পা কাঁপছে। সে কি ভূল দেখছে,নাকি স্বপ্ন দেখছে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
Bengali suspens story অন্তহীন | bangla choti golpo"
আরে দাঁড়াও, ভয় পেয়ো না । হ্যাঁ, আমি রোহন, লাইফ হ্যাকার হ্যারি।আমি মানুষের লাইফ খুব সহজেই হ্যাক করে নিয়ে তার জীবন বাঁচতে পারি যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারি। তোমার ঠিকানা ফেসবুক এবং টিক টকের ভিডিও লোকেশন ট্রাক করে চলে এলাম তোমার কাছে।"
তখনও ভয়ে সিঁটিয়ে আছে মেঘনা রোহন কে চিনতে কোন অসুবিধায় হয়নি।কলেজের সেই দুরন্ত আর অবাধ্য ছেলেটা কিভাবে তার ঠিকানায় পৌঁছল,মেঘনা কিছুতেই বুঝতেই পারছে না। সেকি জাদু বলে সেখানে এসেছে কে জানে?কলেজের দিন গুলোতেও আজব আজব সব ম্যাজিক দেখাত রোহণ ।এইসব নাকি তার দাদুর কাছ থেকে শিখেছে।সত্যিই জাদুকরদের মতই তার চোখ মুখের ভাষা।একদিন মেঘনা গিয়েছিল রোহনের বাড়ী। তার ছাদের চিলেকোঠার রুমটা এক আশ্চর্যজনক রহস্যময়।
.jpeg)
Bengali suspens story অন্তহীন | bangla choti গল্প
নইলে কুসংস্কার আর বিজ্ঞানের প্রভেদ বুঝবি কি করে?"তখন কি আর এত ভেবেছে এই সামান্য মন্ত্রতন্ত্রের সাধনায় এতটাই ক্ষমতা শালি হয়ে উঠবে যেকারও ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়বে।"বিশ্বাস হয়না তুই নিশ্চয় সিঁধ কাটতে শিখেছিস ।শেষে কিনা চুরিবিদ্যা শিখলি?আর যদি সত্যিই তোর জাদুর এতটাই ক্ষমতা থাকে তাহলে আমাকে নিয়ে চল ।এই ঘর থেকে অন্য কোথাও।" "তবে চল সেই আমাদের রূপকথার দেশে চল।যেথায় আকাশ, সমুদ্র, পাহাড় আর বালিয়ারি সবুজ বনানি এক হয়েগেছে।" বলেই এক ঝটকায় মেঘনাকে টেনে নিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে হাতে করে চোখ বন্ধ করে দিল ।পালকের মতো হালকা হয়ে গেল তার শরীর হাওয়ার ভিতর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।
চোখ খুলতেই পৌঁছেগেল এক সবুজ দ্বীপে ।সে দেখল বিস্তৃন জলাশয়কে ঘিরে রয়েছে অনেকগুলি টিলা। নীল স্বচ্ছ জলরাশি একেবারে বালির উপর ক্রমাগত মুখ থুবড়ে পড়ছে ঢেউ।এখানে সূর্যের রোদ নেই ।এক অলিক রঙ্গিন আলোয় আলোকিত চারপাশটা। সত্যিই এ এক রূপ কথার দেশ। এইবার তার একটু একটু বিশ্বাস হতে শুরু হয়েছে মেঘনার, সত্যিইতো এমনই রূপকথার দেশের গল্প শোনাত রোহণ।নিজেকে লাইফ হ্যাকার হ্যারি বলেই পরিচয় দিত। এই নামে তার একটা ফেসবুক একাউণ্ট ছিল ।বহুবার সার্চ দিয়েছে মেঘনা কিন্তু।এই প্রোফাইলের কোন আপডেট সে কখনও পায়নি।কখনও অনলাইন হতেও সে দেখেনি।আজ সে একেবারে চোখের সামনে ।শুধু চোখের সামনেই নয় ,একেবারে হৃদয়ের নিকট "জিগার কে পাশ।"
মেঘনা জিজ্ঞাসা করল, "কিভাবে সম্ভব হল এটা? কোথা থেকে এমন জাদু শিখলি?"রোহণ হেসে জবাব দিল,"এটা কোন জাদু নয়। এটা এক ধরনের কৌশল।টেলিপোর্টিং বলে। এর জন্যে এক আধ্যাত্মিক সাধনার দরকার হয়।এক ডাইমেনশন থেকে অন্য ডাইমেশনে পৌঁছনো যায়।এক সময় থেকে অন্য সময়ে যাওয়া যায় ।মেঘনা সমস্ত বেলাভূমি জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। তার তিন বছরের বিরক্তকর এক ঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ পেয়ে দারুণ আনন্দ উল্লাসে ভরে যাচ্ছে তার মন।
রোহণের অপূর্ণ সে প্রেম আজ অনেক বছর পর ফিরে পেয়েছে।তারা মেতে ছিল এক অদ্ভুত প্রেম লীলায় ।এমন সময় দরজায় নক করার শব্দ পেল কানে। অবাক হয়ে রোহণের দিকে তাকাচ্ছিল মেঘনা। তার দৃষ্টিতে স্বভাবতই একটা প্রশ্ন ফুটে উঠছে,এতদূরে ফেলে এসা সেই ঘরের দরজার কলিং বেলএর আওয়াজ কানে আসছে কি করে? রোহণ তার মনের কথা বুঝতে পেরে তাকে পরিষ্কার বুঝিয়ে বলে, "আমরা সব কিছু সেই ঘরের সবকিছু ছেড়ে এলেও সেই ডাইমেনশনের সাথে আমাদের আত্মার একটা কানেকশন রয়েই যায় নাহলে আর কখনও আমদের পূর্বের স্থানে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।তাই জোড়াল কোন এক্টিভিটি সেখানে ঘটলেই আমরা টের পাই।"
দরজা খুলতেই আবির বাড়িতে ঢুকেই জিজ্ঞেস করল , "কি ব্যাপার ব্যাপার এত দেরি? কখন থেকে বেল বাজাচ্ছি । " মেঘনা কিছু বুঝতে পারছে না কি জবাব দেবে যেমন কিছু মারাত্মক ভূল করে ফেলেছে লুকানোর চেষ্টা করছে । ইতস্তত হয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবির মেঘনার মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা করে হেসে আবার বলল, "ওহ! ঘুমিয়ে পড়েছিলে বুঝি ! কিন্তু এই অসময়ে ঘুমলে শরীর খারাপ করবেতো !" এই বার একটু আশস্ত হয়ে মেঘনা বলতে থাকল , " না না মোবাইল দেখতে দেখতে একটু চোখ লেগে গিয়েছিল । আচ্ছা তুমি হাত মুখটা ধুয়ে নাও । আমি চা করে নিয়ে আসছি ।"
Bengali suspens story অন্তহীন | bangla choti golpo
আবির বাথরুমে যেতে যেতে বলল,"আরে শোন ?চুলটা চিরুনি দিয়ে নাও । উসকোখুসকো লাগছে । কিচেনের দিকে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল ওখানেইতো রোহণ গিয়ে লুকিয়েছে । আবিরকে রুখতে হবে ।পেছু ফিরে দেখল আবির ততক্ষণে বাথরুমে ঢুকে পড়েছে । নল থেকে জল পড়ার আওয়াজ আসছে । তাহলে আর কোন ভয় নেই রোহণটা কি তাহলে সত্যিই জাদু জানে !এক কথায় উধাও হয়ে গিয়েছে । এই ক্ষণিকের সঙ্গ বেশ সুখকর ছিল তার । আবার কবে আসবে কে জানে ! কথা দিয়ে কথা না রাখাটাই স্বভাব রোহণের । যদি কথা রাখতে জানত তাহলে আজ তার সাথে রোহণের সুখের সংসার করত । আয়নায় মুখ দেখে চুলটা ঠিক করে নিল সে ।সত্যিই ঘেঁটে গেছে । আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে ভাবনার গভীরে ডুবে যায় মেঘনা । একটা মনখারাপ করা ব্যার্থ অতীত তাকে হাত ধরে পেছনে টেনে নিয়ে যায় ।
সেদিন এক আকাশ কালো মেঘ নিয়ে বাসস্টপে অপেক্ষা করছিল মেঘনা । হালকা ধুলো উড়ানো হাওয়ায় তার পোশাক উড়ে যাচ্ছিল ।উদ্বিগ্ন চোখে মুখে চুল উড়ে এসে পড়ছে হাতে করে সরাতে সরাতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে । রোহন আসবে আর তাকে নিয়ে যাবে । অপেক্ষা করা যে কতটা কঠিন কতটা কষ্টের সেদিন বুঝে ছিল । শহর ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি এসেছিল ,ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁপছিল একটা মেয়ে একা কারও অপেক্ষায় নির্জন বাসস্টপে । না , আসেনি সেদিন রোহণ ।একা মনের দুঃখে মরে যেতে মন চেয়েছিল । পারেনি । ঘুরে দাঁড়ানোর নামই জীবন । সেখান থেকে ভিজতে ভিজতে পৌঁছেগেছিল সোজা রোহণের বাড়ি । দরজায় রোহণের দাদু তাকে দেখতে পেয়ে কেমন যেন অবাক হয়ে গেছিল । এই সাদা দাড়ি সাদা চুলের লোকটাকে খুব স্নেহ করতে ইচ্ছে করে মেঘনার ।একেবারে বাচ্চা ছেলের মতো কথা বার্তা বাচ্চাদের মতোই আদব কায়দা । জীবনের বহু সময় পাহাড়ে কাটিয়ে দিয়েছে । এক সময় লাদাখ সীমান্তে সীমান্ত রক্ষী হিসাবে নিয়োজিত ছিল । মেঘনাকে দেখে কেমন যেন ভয় পেয়েছিল ।তার দু-চোখের উষ্মায় রিতিমতো ঘাবড়ে যায় দাদু । দাদুর চোখে মুখে আশ্চর্য রকমের আশঙ্কা ছেয়ে ছিল ।মেঘনা কিছু বলার আগেই দাদু পেছনের দিকে তর্জনি নির্দেশ করে বলেছিল , "ভেতরে" ।ভেতরে কোথাও খুঁজে পায়নি রোহণকে চেল্লিয়ে মেঘনা দাদুকেও ভর্ৎসনা করতে ছাড়েনি । অতপর ছাদের চিলে কোঠার রুমে গিয়ে যা দেখেছিল আর সেখানে এক মুহুর্ত্বও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি । ফিরে আসার সময় দাদুকে যেভাবে দেখছিল মেঘনা যেন চোখের অগ্নিবর্ষায় ভষ্ম হয়ে যাবে তক্ষুনি । ফিরে এসে সে রাতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে খুব কেঁদেছিল মেঘন।আয়নায় দেখতে পেল তার চোখের কোনে জল চিক চিক করছে । হাত দিয়ে মুছে নিল । গ্যাসে চা ফুটছে ।
আজ অনেক দিন পর ছুটি পেয়েছে আবির কোথা থেকেও একটু ঘুরে এসা যাক । অনেক দিন হল দূর্গাপুরের বাইরে কোথাও যাওয়াই হয়নি । বেরিয়ে পড়ল তারা শহর থেকে দূরে । এক ঐতিহাসিক স্থান মণ্ডোর । রামায়ণ কালীন স্থান কথিত আছে এখানে নাকি রাবণের বিবাহ হয়ে ছিল মন্দোদরীর সাথে ।মাড়োয়ার রাজ্যের রাজপুত রাজাদের রাজধানী ছিল এটা । এখন অবশ্য শুধু ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই নেই । সরকারের পক্ষ থকে এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছে ।স্থাপত্য গুলো দেখে দেখে তারা এগোচ্ছে । বাঁক পেরিয়ে ওই উঁচুতে অবস্থিত প্রাগৈতিহাসিক দূর্গের দিকে যাচ্ছে ।
মেঘনা দেখল জলাশয়ের কাছে যেখানে অনেক পদ্ম ফুটে আছে । সেখানে সেলফি নিতে ব্যাস্ত একটা ছেলে দূর থেকে চেনা চেনা লাগছে । আরে রোহন না । এইরে কি করবে এইবার ,রোহন যদি কথা বলতে শুরু করে আবিরতো বুঝে যাবে ব্যাপারটা তাদের সন্মধ্যে । কি করা যায় ! মেঘনা চেষ্টা করছে আঁচল দিয়ে মুখটা আড়াল করতে । যাতে রোহন তাকে দেখতে না পায় । আরে এটা কি হল আবির রোহণের কাছে গিয়ে একেবারে পিঠ চাপরে বলল , "কি ব্যাপার একে একাই ঘুরতে এসা হয়েছে ?" মেঘনা হতচকিত হয়ে গেল আরে আবির আগে থেকেই চেনে রোহন কে ।
কই রোহনতো আগে কখনও বলেনি তাকে এ কথা । একটু অভিমান হল তার । রোহন আবিরের কথায় জবাব দিল," একা কই আছে আরও একজন এখানেই "। বলেই রোহন মেঘনার দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য চোখের ইশাড়া করল । একটু অস্বস্তিতে পড়ল মেঘনা । তাতে রোহণের কিছুই যায় আসে না । আবির মেঘনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল, " এই হল রোহন কয়েকদিন আগেই পরিচয় । সেদিন রাতে গ্রামের ফাঁকা রাস্তায় গাড়ির টাওয়ার ফেটে যায় আর এই রোহনের সাহায্যেই বাড়ি ফিরতে পারি ওর গাড়িতে ।" মেঘনা যেন রোহণের সব রহস্য যেনে গেছে এমন ভাব করেই রোহণের দিকে তাকিয়ে বলল, ওহ আচ্ছা তাই... ।"রোহন এইবার হাসছে ।
মেঘনার সাথে রোহণের নতুন করে পরিচয় হল ,অন্তত আবিরের কাছে । ওরা তিজনেই হাঁটছিল একটা জলাশয়ের উপর ছোট সাঁকো দিয়ে ।এটা ঝিল নাকি নদী বোঝা যায় না । সম্ভবত এই দূর্গকে রক্ষার জন্যেই পরিখা নির্মানের উদ্দ্যেশে খনন করা হয়ে ছিল । অনেক মাছ আছে বড় বড় সাইজের রঙ্গিন মাছ ।অনেকে খাবার দিচ্ছে মাছ গুলিকে আর তারা মানুষের খুব কাছে এসেই খেয়ে যাচ্ছে । মেঘনার খুব ইচ্ছে হল মাছ গুলিকে খাবার দেয় । আবির গেলনা হাঁটতে হাঁটতে সাঁকোটা পেরিয়ে গেল । মেঘনা এপারেই একলা ঘাটের কাছে গেল ।গোড়ালি ডুবিয়ে দিয়েছে ঘাটের সিঁড়িতে ।
মাছগুলো মেঘনার হাত থেকে পাঁঊরুটির টুকরো গুলো খেয়ে যাচ্ছে । তাদের নরম রঙ্গিন ঠোঁটের স্পর্শে মেঘনার হাত থেকে এক অদ্ভুত শিহরন খেলে যাচ্ছে সারা শরীরে । দারুণ ভালো লাগছে মেঘনার ।সুন্দর এক আবেশ ছেয়ে আছে । পেছনে কখন রোহন এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেনি সে । ''ওয়াও" বলে মেঘনার পাশে এসে দাঁড়াল । ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে রোহণের দিকে বলে ," কি সুন্দর দেখ ।" রোহন হাসতে হাসতে মেঘনার পাশে বসতে বসতে বলল," অপূর্ব , এটাইতো জীবন, এটাই তো স্বাধীনতা ।" মেঘনা একটু থেমে বলল, " আচ্ছা , এত সুন্দর করে মিথ্যে বলিস কি করে ?"
"কই ?কখন মিথ্যে বললাম ?"
Bengali suspens story অন্তহীন | bangla choti golpo
"কাল যে বললি জাদু বলে এসেছিলি আমার ঘরে ।আসলে তুই আবিরের সাথে আগেই দেখে গেছিলি । তবে উধাও হলই কি করে সেটাই মাথায় ঢুকছে না ।"
"যাক যা মাথায় ধুখছে না তা আর ঢুকিয়ে লাভ নেই । " মুচকি হেসে রোহন বলল ,"তবে ,এটাই জাদু কথার আড়ালে কথা ঢেকে রাখা । কথা তৈরি করাটাও একটা আর্ট ।কত বড় বড় মানুষ এইভাবেই সাফল্যের শিখরে বসে আছে ।আনেকেই আমরা জানি তবুও তাদেরকে বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করতে বাধ্য হই হয়ত । "
"বাহ ! মিথ্যে বলাটাও তাহলে একটা শিল্প ? বলতে চাইছিস !"
"সবার মধ্যেই সত্য লুকিয়ে থাকে খুব সুন্দর ভাবে সেগুলো বেরিয়ে পড়লেই বিপদ দেখা দেবে , ফুটে উঠবে তার কুৎসিত রূপ । এইযে কত সুন্দর করে বলিস আবিরকে 'ভালবাসি' । ভেবে দেখ কত সুন্দর একটা মিথ্যে কথা যেটা আবির কে সুখি করে । ভেবে দেখ এটাই জাদু । " আর কিছু বলে না মেঘনা , বলার কিছু থাকেও না তার ।
সাঁকোর সেপার থেকে হাত নেড়ে ডাক দেয় আবির ," এই মেঘনা এদিকে আসো ।"
মেঘনা সাঁকোর উপর দিয়ে হাঁটছে পাশে রোহণ দুজনেই মৌন । নিরাবতা কাটিয়ে মেঘনা রোহণের দিকে তাকিয়ে বলল , " আচ্ছা হ্যারি ,ওহ জাদুকর ,দ্যা গ্রেট ম্যাজিসিয়ন হ্যারি ..."বলেই হেসে উঠল । তার হাসির বিদ্রূপে রোহণও হেসে উঠল , "ওহ আচ্ছা বিশ্বাস হয় না বুঝি? আচ্ছা ধর এই সময়কে বদলে দিই যদি যেমন ধর তুই আমার প্রেমকা আর আবির আমার বন্ধু ।" বলেই চুটকি বাজাল ।
মেঘনা যেন একটু কেঁপে উঠল অদ্ভুত ভাবেই আবহাওয়ার পরিব্ররতন হয়ে গেল ।তাদের দিকে ফিরেই অপেক্ষা করছিল আবির । একটু এগিয়ে গিয়ে রোহন মেঘনার কাঁধ চেপে ধরে গালে চকাৎ করে একটা চুমু খেল । দারুণ ভয়ে আর লজ্জ্বায় মেঘনা আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে গোল গোল চোখ করে ।কিন্তু ভয়টা তৎক্ষণাৎ কেটে গেল । আবির লাজুক হেসে রোহনকে বলল, "তোদের লজ্জ্বা করে না ! এটা পাব্লিক প্লেসে ।" কিসের লজ্জ্বা নিজের বউকে চুমু খেয়েছি ।
তারা একটা সিঁড়ি দিয়ে দূর্গের উপরে উঠে যাচ্ছে । আবির একটু এগিয়ে গেছে ।মেঘনা রোহণের হাত ধরার চেষ্টা করতেই রোহন সাবধান করে দিয়ে বলল, এই মেঘনা সময় কিন্তু আবার বদলে গেছে । এইবার মেঘনার একটু রাগ হল কিন্তু কিছুই বলল না রোহন কে । ধ্বংসস্তূপ গুলো পেরিয়ে যেতে যেতে দেখল । কিছু পাথরের টুকরো দিয়ে খেলার ছলে অজস্র ঘর বানিয়ে রেখেছে কেউ । আবির বলল, "দেখো মেঘনা বাচ্চারা কি সুন্দর ঘর বানিয়েছে ।" মেঘনা বলল, "হুম! খেলাঘর !" রোহন বলল , "হ্যাঁ খেলাঘরই বটে । তবে আমরা যেমন ভাবি তেমনটা নয় ।" আবির আর মেঘনার চোখে কৌতুহল দেখে রোহন আবার বলল," এখানকার মানুষের বিশ্বাস আছে যে কেউ এই পাথরের টুকরো দিয়ে ঘর বানিয়ে রেখে যাবে তার নিজস্ব ঘরবাড়ি হবে । "আবির হাসতে হাসতে বলল," যতসব কুসংস্কার ।" মেঘনা কিছু ভেবে বলল, "এই আবির আমরাতো ভারা ঘরে থাকি ..."
''তুমিও কি পাগল হলে নাকি ! ধ্যাৎ !" বলেই এগিয়ে গেল পৌরাণিক ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপত্যের দিকে । মেঘনা কয়েকটা পাথর তুলে নিয়েছে কিছুতেই দাঁড় করাতে পারছে না । রোহন এসে মেঘনার হাতে হাত রাখল ।একটা একটু বড় পাথর দিয়ে ছাদ করে দিল । ক-তলা ঘর চাই ! দো-তলা ! হাসতে হাসতে মেঘনা বলল, " হুম , একতলা হলেই যথেষ্ট । " গম্ভীর আর উদাস হয়ে রোহণ বলল, "এই ঘরে আমাকে কোথায় রাখবি মেঘনা ।" বেলা পড়ে এসেছে মন্ডোর উপত্যকায় ।
পশ্চিমের পাহাড় ছুঁই ছুঁই সূর্য । শেষ কিরণ ভরিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ওদের তিনজনকে । উঁচু একটা বড় পাথরে বসে আছে ওরা ।দূরে কোথাও পুবের পানে ধোঁওয়া উঠছে আকাশের দিকে কুণ্ডলীকৃত । আবির সেদিকে তাকিয়ে আছে । কয়েকটা নীল গাই আর কৃষ্ণসার তখনও কাঁটা গুল্মের পাতা বাছছে । রোহণ আর মেঘনা একে অপরের ঠোঁটের ওম নিচ্ছে ।
আজ আবার বাড়ি ফিরে দরজায় নক করছে আবির অনেক খন ধরে । দরজা খুলছে না মেঘনা । বেশ বিরক্তকর ব্যাপার এমনিতেই আজ একটু বেশি টায়ার্ড ।এক ঘণ্টা কাজ বেশি করতে হয়েছে আবিরকে ।বাড়ি ফেরার সময় কিছু বাজারও করে নিয়ে আসতে হয়েছে । ফলত বেশ দেরিই হয়েছে আজ । ভেতরে কারও সাথে ফিসফিস করে কথা বলছে মেঘনা । নিশ্চয় ফোনে কথা হচ্ছে তাই বলে কলিং এর আওয়াজ কানে যাবে না । বেশ অবাক লাগছে । অনেক খন পর দরজা খুলতে আবির দেখল ।
সমস্ত ঘর অগাছালো আর মেঘনাকেও উসকোখুসকো বিধস্ত লাগছে । ব্যাপারটা কি বুঝতে পারে না আবির । আবির খুব শান্ত মাথায় জিজ্ঞেস করে , "আর ইউ ওকে মেঘনা।" মেঘনা ঢুলু ঢুলু চোখে আবিরের দিকে মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে বলল, "আমার কি হবে।" আবিরের মনে সংশয় দেখা দেয় ।মেঘনাকে আগে কখনও এমন অবস্থায় দেখেনি । দরজা খুলতে এত দেরি হওয়া এত অগোছালো ভাব । অথচ ক-দিন আগে পর্যন্তও পরিপাটি সাজগোজ করে তার জন্যে অধীর অপেক্ষা করেছে ।পাঁচ মিনিট দেরি হলেই হাজার প্রশ্ন । এই ক-দিনে মেঘনা এত বদলে যেতে পারে না !
অনেকটাই রাত হয়েছে স্যোশ্যাল মিডিয়া থেকে বেরিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতেই পারেনি । পাশ ফিরতে গিয়ে ঘুম ভেঙ্গে দেখে মেঘনা পাশে নেই । বাথরুমে গেছে হবে । কিন্তু অনেক ক্ষণ না আসতে উঠে পড়ল আবির । দেখল বারান্দায় আলো জ্বলছে । ভালো করে দেখার চেষ্টা করল আবির । না কেউ নেই । সমস্ত ঘর খুঁজেও কোথাও দেখতে পেল না মেঘনা কে । আবির একটু ভয় পেল । যা, বাবা কোথায় গায়েব হয়ে গেল নাকি । কিছু একটা আওয়াজ পেয়ে পাটিপে টিপে ছাদে গিয়ে দেখে অবাক হয়ে যায় আবির । ধীরে ধীরে ফিরে আসে সে । নীচে থেকে ডাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । যাতে মেঘনা কিছু বুঝতে না পারে । তার যে ভিন্ন রূপ সে দেখে ফেলেছে সেটা সে এই মুহুর্ত্বে মেঘনাকে বুঝতে দিতে চায় না ।
ডাক পেয়ে মেঘনা হুড়মুড় করে নেমে এল ।তার মুখের দিকে তাকিয়ে মেঘনা বুঝে গেছে আবির তাকে সন্দেহ করছে । তেমন কিছুই জিজ্ঞেস করল না আবির । কিন্তু মেঘনা হুর হুর করে তার সাজানো কৈফিয়ৎ দিয়ে চলেছে ।
অফিসে কাজের ফাঁকে বিগত এই ক-দিনের কথা মনে করে কেমন যেন ভয়ে শিউরে উঠল । হাসি খুশি আবিরের মনে একদম আর শান্তি নেই । হঠাৎ করে মেঘনার কি এমন হয়ে গেল । ছুটির পর মন খারাপ দেখে অফিসের কলিগ সুরজ আবিরকে জিজ্ঞেস করল , "কি ব্যাপার মন খারাপ কেন ? " মুচকি হেসে আবির জবাব দেয় ,"না ,তেমন কিছু নয় ।"
''হ্যাঁ , তেমন কিছু নয় মানে কিছুতো একটা ব্যাপার আছে । আরে বলেই ফেলো না গুরু । মনটা একটু হালকা হয়ে যাবে ।" না নিজের ব্যাক্তিগত কথা কারও সাথে শেয়ার করতে খুব একটা পছন্দ করে না আবির । একটু আশ্বস্ত করে সূরজ বলল, " তার চেয়ে চলো , রাজুর ঠেকে ,একটু গলা ভিজিয়ে বাড়ি ফিরি ।মন মগজ আর শরীর শান্ত হয়ে যাবে । আরে বেশি টেনশন নিয়ে লাভ কি ।আর বলে দিলে মনটা হালকা হবে । হতেও পারে আমার কাছে কোন সলিউশন পেয়ে যতে পারো ।" স্টেশন থেকে একটু দূরে একটা ফাঁকা জায়গায় রাজুর ঘর ।
বেশ পরিপাটি করে সাজানো একটা বার কোন চমক নেই একেবারে ঘরোয়া পরিবেশ । দুটি বিয়ার সামনে দুটো গ্লাসে বুদবুদ উঠছে । আবিরের মন অস্থির হয়ে উঠছে । সে নেশা করতে আসেনি এখানে ।এসেছে সূরজের কাছে যদি কোন ভালো পরামর্শ পায় । গ্লাসে চুমুক দিয়ে আহ যেন মনে প্রানে কি শান্তি এল এমন ভান করে বলল, " নাও নাও চুমুক দাও সব টনশন দূর হয়ে যাবে ।" আবির চুমুক দিয়ে, না বিয়ার ঠাণ্ডা হওয়ার কারনে ততধিক তিতো লাগছে না যদিও । তবুও মুখ কুঁচকে বলল, " বেশ কয়েকদিন ধরে মেঘনা উল্টোপাল্টা বিহেব করছে ।'' অবাক হয়ে গ্লাসটা রাখতে রাখতে সূরজ বলল,"কিরকম?"
"আমার সাথে কথা কম বলে । মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে কি সব বকে আর ..."
"সেকি এতো মেন্টাল প্রব্লেম কোন সাইকায়াট্রিস্ট এর সাথে কথা বলো ।ওর বাবা মা ..."
"সেতো বলাই যায় কিন্তু মেঘনা রাজি হবে না । ফোন করে সব জানিয়েছি আসবে দুচার দিনের ভিতর ।"
" এছাড়া আর কি উপায় আমারতো জানা নেই ।"
বেশ চিন্তিত মনে কাজ করছে আবির । একবার ফোন করতেই হবে মেঘনাকে ।কিন্তু একটু ভয়ও পাচ্ছে কিভাবে সে বলবে । না ফোন করে লাভ নেই ।আজ একটু তারাতারি ছুটি নিয়ে এসেছে । তারপর দুজনে বেরিয়ে পড়ল । মেঘনা অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে কোথায় যাচ্ছে তারা আবির কোন জবাব দেয় না । চেম্বারের সামনে এসে বলল মেঘনা তোমার জন্যে একজন সাইকায়াট্রিস্টের এপয়েণ্টমেন্ট নিয়েছি । শুনেই যেন আকাশ থেকে পড়ল মেঘনা । কি বলছ তুমি ?আমার? কি হয়েছে ?মেঘনা সেখান থেকে পালিয়ে আসাতে চাইলে আবির একটু রাগত স্বরে বলেই বসল , "মাঝ রাতে তোমার ছাদে গিয়ে বিড়বিড় করা কোন সুস্থতার লক্ষণ নয় । বুঝেছ এসেছি যখন ডাক্তারের সাথে একটু কথা বলে নাও । " খুব অবাক হয়ে যেন ভেঙ্গে পড়ল মেঘনা ।সামনে চেয়ারে থপ করে বসে পড়ল ।
ডক্টর শ্রীনিবাসনের সামনে আবির তার সমস্যার কথা একএক করে বলতে থাকল । আর মেঘনা অবাক হয়ে দেখছে আবিরের দিকে । চোখে মুখে একটাই বিষ্ময়ময় অভিব্যাক্তি আবির কি ভাবে তাকে পাগল প্রামন করতে পারে !
তার সারাদিন উসকোখুসকো হয়ে থাকা , বন্ধ ঘরে একা একা বক বক করা মাঝে মাঝে বিড়বিড় করা আর হ্যারি হ্যারি বলে চেঁচিয়ে উঠা ।
ডক্টর শ্রীনিবাসন জানালেন রিকারেন্ট ডীলুউশনে । এমন একটি মানসিক পরিস্থিতি যা কখনও ঘটেনি ঘটেছে বলে মনে হয়। এমন মস্তিষ্ক বিকৃতি প্রায় দেখা যায় মানুষ যখন খুব একা হয়ে যায় ।ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে । এতটাই কল্পনার জগতে ডুবে যায় যে কল্পনাকেই বাস্তব বলে মনে করে ।
ট্রিটমেন্ট চলতে থাকে ।আবির ঠিক করল ক-দিনের ছুটি নিয়ে মেঘনাকে ওর মা-বাবার কাছে রেখে আসবে ।কিছুদিন আপন জনের সাথে কথা বার্তা বললে হয়ত ঠিক থাকবে । ফিরে এল কোলকাতায় । মেঘনার বাবা মা সব শুনে ভেঙ্গে পড়ে । তারা অন্য এক ডাক্তার রেকমেন্ড করেন ।মেঘনার হালত আরো খারাপ হতে থাকে ক্রমশ । এখন আর আবিরকে দেখতে পারে না মোটেও । সারাদিন ঘরেরে দরজা বন্ধ করে কার সাথে যেন বীড় বিড় করতে থাকে । মা কিছু জিজ্ঞেস করলে রেগে যায় । কিছুই বলে না । চুপ করে থাকে । ঘর থেকে বেরোয় না ।
আবির জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা মা ! হ্যারি বলে কি কেউ ছিল মেঘনার জীবনে ।" কেমন যে ঘাবড়ে গেলেন তিনি একটু ইতস্তৎ করতে করতে বললেন ,"কলেজের এক বন্ধু ছিল ওর শুনেছিলাম ।তারপর আর কিছু জানি না । "
আবির কিছুই বুঝতে পারছে না । তার কি করা উচিত ! রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল পূরানো বন্ধুদের সাথে দেখা হয় যদি কথা বললে মনটা একটু হালকা হয়ে যেত পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে নিল ।
মেঘনা মায়ের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে কাঁদছে । মা বললেন, "আচ্ছা তোর কি হয়েছে বল আমাকে । কেন তুই এমন করিস ?আবির কে দূর দূর করিস ।তোর সম্মতিতেইতো বিয়ে করেছিস । "
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে মেঘনা বলে, "আমি হ্যারিকে ভালবাসি মা । হ্যারি রোজ আমার কাছে আসে ।আমি আবিরের থেকে দূরে থাকতে চাই ।" ডাক্তার সব দেখে শুনে একটা সিদ্ধান্ত নিল । হ্যারির সাথে দেখা করা যাক ।
পরদিন ডাক্তারের পরামর্শ মতই শমিত বাবু মেয়ের কাছে বশে খুব আদরে মাথায় হাট বুলিয়ে দিয়ে বললেন ,"আচ্ছা মেঘনা , চল আমরা সবাই মিলে হ্যারির ঘরে যায় । তার সাথে কথা একটু কথা বলি পরিচয় করি ।দেখিতও কেমন ছেলে ।"
"সত্যি বলছ তোমরা যাবে । বেশ , বেশ । তাহলে চল ।"
অবশেষে তারা এসে পৌঁছল হ্যারির বাড়িতে । রাস্তা থেকে কিছুটা দুরেই একটা গ্রিলের গেট সামনে কিছুটা বাগান তার পরেই ঘরটা । কিন্তু এই ঘরে বহুকাল কেউ থাকে বলে মনে হল না । শমিত বাবু গ্রিলের গেটটা খুলতে যাবে । একটা কম বয়সি ছেলে এসে বলল, "আরে কাকু কোথায় যাবেন । এ বাড়িটা কিনেছেন বুঝি !থাক্তে পারবেন না ভূত আছে ভূত " ভয়ে কেমন যেন চমকে উঠলেন শমিত বাবু ।
একটু ম্যা ম্যা করে , তারপর জোর গলায় বললেন ,''ভুত আছে মানে ?" এখানে যে হ্যারি বলে ছেলেটা... বাকি কথা আর বলতে দিলনা ছেলেটা । " হ্যাঁ , সে আর তার দাদু থাকত । ছোটবেলা থেকেই চিনি । ওরা পাড়ার কারও সাথে তেমন মিশত না ।কোন আত্মীয় স্বজনও বোধ হয় ছিল না ।কীসব মাঝে মাঝে জাদু টোনা করত । ছেলেটা ওই হ্যারি রহস্য জনক ভাবে উধাও হয়ে যায় তার কয়েক দিন পরে বুড়োও মারা যায় । তবে বলতে পারবনা কি হয়েছিল । শেষে মিউনিপাটীর গাড়ী এসে নিয়ে যায় । একেবারে পচে গেছিল লাসটা ।"
এইসব শুনে আরও ধীর আর শান্ত হয়ে শমিত বাবুর দিকে তাকিয়ে থাকে মেঘনা । কাঁদতে কাঁদতে বাবার বুকে মাথা রাখে মেঘনা । "ও মিথ্যে বলছে , হ্যারি মরেনি ...... এই অবস্থায় আবির তার মাথায় হাত রেখে স্বান্তনার পরশ দেয় । মেঘনা তার হাত সরিয়ে দেয় । আরও বেশি উন্মাদ হয়ে গেছে সে । হসপিটালে ভর্তি করা হল তাকে । বেশ কয়েকদিন ট্রিটমেন্ট চলতে থাকে মেঘনার ।
বেশ কয়েকদিন পর ব্যাল্কুনিতে দাঁড়িয়ে আছে মেঘনা সে ভুলে গেছে আজ হ্যারি বা রোহন বলে কারও অস্তিত্ব আছে । শুধু পেরিয়ে আসা একটা অতীত । ভুলে যেতে চায় সে। দুহাত মেলে দিয়ে গভীর এক নিশ্বাস নেয় বুক ভরে ।কি সুন্দর ফুরফুরে হাওয়া বইছে । আজ সে ফ্রি ।দারুণ সুখানুভূতি হচ্ছে ।এমন সময় একটা ভারী দমকা হাওয়া এসে যেন তাকে জড়িয়ে ধরল । ভালো লাগছে তার । একটা বুনো গন্ধ তার নাকে লাগছে গন্ধটা খুব ভালো লাগছে তার ।খুব চেনা তার এই গন্ধটা । মোহিত হয়ে যাচ্ছে সে ।এক আশ্চর্য আবেশ তাকে জড়িয়ে ধরছে চারপাশ থেকে ।
[ সমাপ্ত ]
ConversionConversion EmoticonEmoticon