Mon vangoner pare dharabahik uponyas পর্ব 10

Mon_vangoner_pare_dharabahik_uponyas_পর্ব_10


মন ভাঙনের পাড়ে 

                                            শক্তি সামন্ত

রুপকের চলে যাওয়া

 [দশ] 

Mon vangoner pare dharabahik uponyas পর্ব 10

ছুটির দিন গুলো শেষ হয়ে আসছে রূপকের।উজানও ব্যাস্ত ।বিকুও আজকাল বাবার সাথে দোকান 
নিয়ে থাকে। আনার দুঃখে নাকি মদের নেশা ধরেছে!উজানের মুখেই শুনল সেদিন।একটা অসভ্য 
মেয়ের জন্যে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে বিকু।এই কথা বিকুর কাছে বলা যাবে না। তাহলে আর এক 
কাণ্ড বাঁধাবে।

তাছাড়া রূপকের সাথে দেখা হয় না খুব একটা।যতটুকু সময় কাটে তার, বিতানের 
সাথেই।একা একা ঘরে বসে থাকলে মনটা উদাস হয়ে  যায় রূপকের।বিছানায় আধশোয়া হয়ে 
একটা বই টেনে নেয়। বিকুর জন্যেও খারাপ লাগছে।যাইহোক,অভিমানী ছেলেটা বড় ভালবাসে 
তাকে।সেই ছোটবেলা থেকেই ।

 একবার খুব ছোট তখন রূপক বাড়ি থেকে একটু দূরে বাবার 
পেছন পেছন হেঁটে যাচ্ছিল । নির্জন দুপুর তখন রাস্তায় কেউ ছিল না বললেই চলে। 
রাস্তার পাশেই বৃষ্টির জলে ধস নেমে অনেকটা গর্ত হয়ে গিয়েছিল।কন্সট্রাকশনের কাজ চলছিল সেখানে।
সেই গর্তে রূপক পড়ে যায়।

বৃষ্টি ভেজা নরম মাটি আঁচড়ে উঠে আসার ব্যার্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিল।রূপকের বাবা কানে কম শুনতেন 
বুঝতেই পারেননি রূপক পেছনে হাঁটছিল কি না।একবার পেছনে তাকিয়ে দেখে ভেবেছিল হয়ত রূপক
 বাড়ি ফিরে গেছে।এদিকে রূপক চেঁচিয়ে উঠবে কিনা ভাবছিল এমন সময় সেখানে বিকু এসে হাজির।
 হাত ধরে টেনে তুলে।বিপদ একটা হতেই পারত কোন ভারী বস্তু চাপা পড়ে ।

[Mon vangoner pare dharabahik uponyas পর্ব 10]

সেই থেকে বিকুর উপর একটা ঋন রয়েই গেছে আজন্ম। তাছাড়াও যেকোন ব্যাপারেই 
রূপককে সাহায্য করতে দ্বিদ্ধা বোধ করে না। 
কতবার মারামারি করেছে রূপক, স্কুলে কিংবা পাড়া, বেপাড়ায়  সব ক্ষেত্রেই বিকু তাকে সাপোর্ট 
করেছে। একবারতো মাজি পাড়ার মেয়েগুলো তাকে একলা পেয়ে বিচ্ছিরি ভাবে খেপাচ্ছিল বিকু এসে 
দাঁড়াতেই  সবার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। আর পালিয়ে যায় ভয়ে। তখন অনেকটাই ছোট। 

এমন দুষ্টুমি ভরা সেই ছোটবেলার দিন গুলো রূপকের মনে ছবির মতো ভেসে উঠে। স্কুলে সহজপাঠ 
হারনোর জন্যে  রূপককে ঘরে মা'র কাছে অনেক বকুনি খেতে হয়েছিল।স্কুলে বিকুই সাহস যুগিয়ে ছিল 
ওর বই নিয়েই পড়ে ছিল সেদিন। তারপর স্কুল ছুটির পর খুব মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরছে। বিকু 
বলল "অনিকেতের কাছ থেকে দুটো পায়রা কিনেছি। নিয়ে আসতে হবে।" এতো বেশ ঝামেলা। 

এমনিতেই মন খারাপ রূপকের। তার ওপর নদীর ওপার থেকে আসা তাদেরই ক্লাসের অনিকেতের  
বাড়ী।সেখানে গিয়ে নিয়ে আসা বেশ ঝামেলার ব্যাপার।কয়েকদিন  থেকেই অনিকেতের নিজেরই 
ধরে নিয়ে আসার কথা ছিল। পয়সাও নিয়ে নিয়েছে।কিন্তু আনছিল না।নানান বাহানা করছিল। 
বিকুর দাদাও গিয়েছিল স্কুলে ছুটির পর ।সুকুদা বলল,"বিকু তোকে যেতে হবে না।খেয়া পারের  
পয়সা বাঁচবে।" রূপক  আর সুকুদা দুজনেই গেল।খেয়া পেরিয়ে ,ঝোপ ঝাড় পূর্ণ রাস্তা পেরিয়ে।

অনিকেত দের বাড়ি।আশ পাশে  তেমন ঘর বাড়ি নেই বললেই চলে লোকজনতো দূরের কথা ।  
অনিকেত দের বাড়ি থেকে একটু দূরে কাঠের খোপ করে দেওয়া আছে। দেখলেই বোঝা যায় 
সখ করে পয়রা পুষে রেখেছে ওরা।সুকুদা বলল,"বুঝলি,অনিকেত মনে হয় বাড়িতে না বলেই বিক্রি 
করেছে। আমাদের তাতে কি?

[Mon vangoner pare dharabahik uponyas পর্ব 10]

পয়সা দিয়েছি যখন একটা হলেও ধরে নিয়ে যাব।" রূপককে রাস্তায় দাঁড়াতে বলে সুকু
একাই পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল খুব সন্তর্পণে। রূপক টের পেল না কিছুক্ষণের মধ্যেই দু 
হাতে দুটো পায়রা ধরে নিয়ে এল খুব হাঁফাচ্ছে। ঘর থেকে "কে রে?কে রে ?"করে বেরিয়ে 
আসছে এক বৃদ্ধা। "চল চল পালাই।" বলেই ছুট লাগাল  সুকুদা । তার পেছনে রূপক। ধরা 
পড়লে মার একটাও বাইরে পড়বে না।সেপাড় থেকে এপাড়ে পায়রা চুরি করতে আসা।  
 
কিছু দূর দৌড়নোর পর সুকুদা বলল,  "এই রাস্তা দিয়ে গেলে যে কেউ দেখে জিজ্ঞেস করবে। 
কাদের পায়রা ধরে নিয়ে যাচ্ছিস। ধরা পড়ে যাব।তারচে জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে চল।" তারা 
জঙ্গলের রাস্তায় ছুটল বাঁশের কঞ্চি আর কাঁটা ঝোপের ডাল-পালা যেন চাবুক মারতে লাগল।
নদীর ঘাটে এসে দেখল রূপকের হাত পা ছরে রক্ত  পড়ছে।

কাঁটা গাছে আঁচড় লেগে এই অবস্থা।
এপাড়ে এসে নদীর পাড় ধরে বাড়ী ফিরছিল ওরা । বিকু তখনও রূপকদের জন্যে অপেক্ষা করছিল 
নদীর চরে। বিকুর সেকি কি আনন্দ পয়রা পেয়ে।বিকুর কাছে রাখাছিল স্কুল ব্যাগ।সেদিন রূপকের 
মা জানতে পারেনি তার এই এডভেঞ্চার সম্মন্ধ্যে। 

এইসব কথা ভাবতে ভাবতে চোখ আবছা হয়ে আসছে বইএর কালো কালো অক্ষর গুলো পিঁপড়ের 
মতো লাগছে যেন। কি বই পড়ছিল মনে নেই।অক্ষর গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে যেন। আনমনেই 
বন্ধ করে সরিয়ে রাখল।চোখ জালা করছে।ভাবল একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যাক।এমন সময় মোবাইল 
বেজে উঠল,বিতানের কল।

[Mon vangoner pare dharabahik uponyas পর্ব 10]

উজানের কারখানায় বসেছিল বিকু , বিতান , আর উজান। রূপক যেতেই হৈ হৈ করে উঠল ওরা।
উজান বলল কাল চলে যাবি! চল  চা খেয়ে আসি আবার কতদিন পর তোকে পাব! হাঁটতে হাঁটতে 
গণেশদার দোকান।আজ চার কাপ চা আর তিনটে সিগারেট জ্বলছে।বিকুকে আজ হাসি খুশি লাগছে।
তাহলে কি আনার ব্যাপারটা ভুলে গেছে। যাইহোক রূপকের মনেও একটু যেন স্বস্তি হল।এমনটাই 
ভাবছে রূপক।
 
তখনই বিতান বলে উঠল, "দেখ বিকু বাদ দে আনার কথা। একটা ফালতু মেয়ের জন্যে নিজের 
জীবন বর্বাদ করিস না।" 
রূপক বলল, " কি এমন আছে ওর মধ্যে? অনেক ভালো মেয়ে পাবি।" 
বিকু দাঁত বের করে হাসছে আর বলছে ," শালা , ভালো মেয়ে পেলেও ওকে কি আর পাব?" 
রূপক খুব শান্ত স্বরে বলল, "তুই শুধু একটা মেয়ের জন্যে বেঁচে আছিস তোর বাবা, তোর মা, 
আর আমরা বুঝি তোর কেউ নই। একটা কথা মনে রাখিস তোর জন্যেও কেউ বেঁচে থাকে। 
একটা জীবনেই মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায় না।" 

"সব ভুলে গেছি আমি ঐ সব আর আমার মাথায় নেই।" বলতে বলতেই সিগারেটের টান দিল।
"ভালো কথা " উজান বলল। 
রূপক বলল,"উজান,কাল আমাকে একটু স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে আসবি।" 
উজান জিজ্ঞেস করল,"কখন বেরবি?"

"রাতের দিকে। সারে এগারোটার এক্সপ্রেস ধরতে হবে হাওড়া থেকে।" বলেই চুপ করে রইল।   
বিতান বলল, " কিরে মন খারাপ!" 
হাসতে হাসতে রূপক বলল, "তা একটু হচ্ছে বলতে পারিস।" 

ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে রূপক, খুব একটা ভারি নয়। আজ সারাটা দিন মনখারাপের ভিতর দিয়ে 
কেটেছে। বিশেষ করে সকালটা সুনিতার স্কুল পথে দেখা হয়েছিল চোখ ফেরায়নি এতটুকুও।কাছে 
পাওয়া তো দূরের কথা আজ সে আরও দূরে চলে যাচ্ছে।তাদের মাঝে অস্পষ্ট এক দেওয়াল কখনও 
এক হতে দেবে না।মুখ শুকিয়ে আছে চোখ ছলছল করছে। ময়ের চোখে জল। 

উজান অপেক্ষা করছে। 
সময় হয়ে আসছে বেরিয়ে পড়ল। উজানের বাইকের পেছনে বসে আছে রূপক নার্ভাস লাগছে তার।
বহুদূর যেতে হবে একা একা। কেমন এক মন খারাপের মেঘ ছেয়ে আছে তার মনে।   
কোলাঘাট স্টেশনে বসে আছে দুজনে। লোকাল আসতে এখনও দেরি আছে। রূপক কিছু একটা বলতে 
যাবে উজানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল।দেখল তার চোখ মুখ ছলছল করছে।

এই বুঝি কেঁদে 
ফেলে। রূপক উজানের কাঁধে হাত রেখে বলল, "আরে কি হল? এই! আমি কি একেবারে চলে যাচ্ছি? 
আরে দেখবি কয়েক মাস পরেই চলে আসব।"
এবার স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল উজান। তারপর দুজনেই চুপ। তীক্ষ্ণ আওয়াজ করে একটা মেল 
ট্রেন চলে গেল।

রূপক হালকা স্বরে বলল, "আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল যদি না রাগ করিস।" 
"বল না । রাগ করবো কেন তোর উপর!" একটু যেন আশর্য হয়ে উজান বলল। 
" আচ্ছা সারার সাথে তোর কি কিছু একটা ব্যাপার আছে? না, মানে!কেন জানি না আমার 
মনে হচ্ছিল ক-দিন ধরেই।

[Mon vangoner pare dharabahik uponyas পর্ব 10]

এবার মুচকি মুচকি হাসছে উজান, "কেন? তোকে কে বলেছে এই সব কথা?"
" না,কেউ বলেনি। তবে মনে হল, তুই ডোরাদের বাড়ি প্রায় যাস।আর ওখানেই ওই মেয়েগুলোর 
আড্ডা সেই জন্য বলছিলাম।"
উজান গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে মুখ করে বলল, "হ্যাঁ , তুই যা ভাবছিস ঠিক। আসলে নিতুবৌদি 
যেভাবে ......" 
রূপক হাসতে হাসতে বলল, "নিতুবৌদি তোদের মধ্যস্ততা করেছে না?ডেসপারেট মাল একটা।" উজান 
হাসছে।রূপক আরও বলল, " তুই হাসছিস? জানিস কি? এই নিতুবৌদি যেমন তোকে বলেছে সারা 
তোকে ভালবাসে।আবার সারার  কাছে বলেছে তুই সারাকে ভালবাসিস।" 

উজান বিষয়টা মানতে নারাজ বলল, "তাতে ওর কি লাভ?" 
"লাভ লোকসান কে আর দেখছে মজা পাওয়ার জন্যেই এমনটা করেছে। অবশ্য তোদের একজন আর 
একজনের উপর দূর্বলতা একটা ছিল। সেটা আলাদা ব্যাপার।" 
উজান বলল, "নারে,এটা ভুল কথা।তোকে কে বলল এত সব?"

রূপক বিজ্ঞের মতো বলল, "আরে ,আমিও একটু আধটু খবরাখবর রাখি। 
এমনিতে তুইতো আজকাল আমার থেকে অনেক কথা লুকিয়ে রাখিস।" রূপকের গলায় অভিমানের সুর।
পাঁশকুড়া-হাওড়া লোকাল আসছে উজানের আরও বেশি মনখারাপ হয়ে যাচ্ছে।রূপকের নার্ভাস লাগছে। 
আবার একা একা কতদূর তাকে যেতে হবে।

এই সময়ের লোকাল প্রায় খালিই   
থাকে।জানলার পাশে একটা সিট দেখে বসে পড়ল।উজানকে হাত দেখাতে দেখাতে ট্রেন ছেড়ে দিল। 
উজান ফিরে যাচ্ছে।ঝমঝম আওয়াজ করে রুপনারায়ন ব্রিজ পেরিয়ে যাচ্ছে লোকাল।নদীর ঠাণ্ডা 
হাওয়া চোখে মুখে এসে লাগছে রূপকের। 
জলের ঢেউএ আলো পড়ে চিক চিক করছে।রূপক চেয়ে রইল সেই দিকে। 
                                             


 মানুষের পর এই প্রানীর বেশি বুদ্ধি ! দেখুন ভিডিওতে

                  ************** 
Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন