ধারাবাহিক উপন্যাস মন ভাঙনের পাড়ে Episode 7

 

ধারাবাহিক_উপন্যাস_মন_ভাঙনের_পাড়ে_Episode_7

 

মন ভাঙনের পাড়ে 

                   শক্তি সামন্ত

ধারাবাহিক উপন্যাস  মন ভাঙনের পাড়ে Episode 7

পর্ব 7 আনার ব্রেকআপ


উজানের মনটা আজ ভালো নেই। ভালো না থাকারই কথা।আনার সাথে বিকুর ব্রেকআপ হওয়ার পর 
থেকে বিকুও আর যেন কারও সাথে তেমন একটা কথা বলে না। উজানের সাথেও না।নিজেকে কেমন 
যেন অপরাধী মনে হয়।সেদিন যদি ভিডিওটা না দেখাত বিকুকে। এই ঘটনাটা আর ঘটত না।

আসলে ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। আজ নয় কাল বিকুর চোখে পড়তই। তখন উজানকেই দোষ পেতে 
হত। আগে দেখাসনি কেন? কৈফিয়ত দিতে দিতে মাথা খারপ হয়ে যেত।তার সাথেই ঝগড়া করত। 
বিকুকে ভালো মতো চেনে সে। একটুতেই রাগ যত অভিমান।

মনে পড়ে উজানের 
একবার উজানের দাদার শ্বশুর বাড়িতে 
বিকুর সাথে ঝগড়া হয়ে যায় খুব সামান্য কারণে। বিকু রাগ করে পালিয়ে এসেছিল অনেক রাত্রেই। 
নির্জন গ্রামের রাস্তা। অত রাতে  মাঝি খেয়া বন্ধ হয়ে গেছিল অনেক আগেই।কি করে ফিরবে 
চিন্তায় উজান আর রূপকের সারা রাত ঘুম ধরেনি।আসলে সেদিন উজান,আর রূপক বিকুর সাথে 
বিকুর মামাবাড়ি গিয়েছিল অষ্ঠম প্রহরের নাম-সংকৃত্তন ছিল।বয়স তখন অনেকটায় কম।  
সাইকেল নিয়ে তিন জন নদী পেরিয়ে অনেকটা গ্রামের রাস্তা।

[ধারাবাহিক উপন্যাস  মন ভাঙনের পাড়ে Episode 7 ]

কথা ছিল এক দিন থেকে বাড়ি ফিরবে পর দিন।ওরা যখন পৌঁছল তখন অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে।বিকুর 
ঠিকমত মনেই ছিল না তারিখটা।ওরা সেদিনই ফিরে আসবে এমনই চিন্তা ভাবনা করছে।বিকুর 
মামার মেয়ে রূপসার অনুরোধে সেদিন রয়ে গিয়েছিল ওরা। 

কথা হল পরদিন সকালে রূপসাদের জয়পুরে ছেড়ে দিয়ে আসতে হবে।কথা মতো তাই হল। বিকুর 
সাইকেলে মামিমা বসল,আর উজানের সাইকেলে রূপসা,রুপকের পিছনে রূপসার মামার মেয়ে।ঝিখিরা 
বাজার থেকে কালো পিচ রাস্তা ধরে তিনটি সাইকেল ধীর গতিতে এগিয়ে চলল। দুধারে ঝাউ আর 
ইউক্যালিপ্টাসের সারী তারপর সবুজ মাঠ।

উজানের একটু আধটু মনে পড়ছে রূপসা দারুণ মজার 
মজার সব কথা বলছিল।ভালোলাগছিল উজানেরও তারপর কখন যেন রাস্তাটা শেষ হয়ে গেল। 
জয় পুরে রূপসাদের নামিয়ে দিয়ে ওরা ফিরছে।  
রূপক হঠাৎ একটা গান গেয়ে উঠেছিল, "ও আকাশ সোনা সোনা...।"উজানরা হেসে উঠেছিল। 
হয়ত কোন এক খুশিতে ভরে যাচ্ছিল রূপকের মন। কিভেবে একটা জায়গায় ওরা দাঁড়াল গাছের 
তলায়।খুব জল তেষ্টা পেয়েছিল।এমন নির্জন রাস্তায় জল পাবে কোথায়!অদূরে দেখা গেল মাঠে 
এক বয়স্কা মহিলা ।ওখানে গেলে এক ঘোঁট করে জল পাওয়া যেতেও পারে! 

[ধারাবাহিক উপন্যাস  মন ভাঙনের পাড়ে Episode 7 ]

মহিলাটি ওদের দেখে করুণ চোখে তাকালেন। ভেবেছিল পাইকার হবে হয়ত।জল না পেয়ে ওরা 
একটা তরমুজ কিনে নিয়েছিল।মহিলাটি বিনা পয়সাতেই দিতে চাইলেন বললেন, "এবছর এমনিতেই 
অবিক্রি নিয়ে যাও তোমরা ।"  
 হাতে করে ফাটিয়ে খেয়ে তেষ্টা মিটল।বাড়ি ফিরতে হবে।হঠাৎ 
উজানের মনে হল কাছেইতো  তার দাদার শ্বশুর বাড়ি একবার দেখা করে আসতে বলেছিল 
বৌদি।রূপক প্রথমে যেতে রাজি হয়নি পরে  উজানের জেদে গিয়েছিল।উজানের দাদার শালি 
সুমিতা তখন অনেকটাই ছোট। সুমিতার সাথে ওদের বাড়িতে এসেছিল পাশের বাড়ির নন্দিতা। 

নন্দিতা বিয়ে করেছিল প্রেম করেই বাড়ির অমতে।মাসখানেক পর নাবালিকা নন্দিতা স্বামি আর 
শ্বশুর বাড়ির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পালিয়ে এসেছিল। ক্ষণিকের পরিচয়ে বন্ধুত্বও হয়ে গেল ওদের।  
তখন রাত্রি ন-টা দশটা হবে সুমিতা, নন্দিতার সাথে ওরা তিন জন গল্প করছিল।হটাৎ কি   
মনে করে বিকু নন্দিতাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে। লজ্জ্বায় নন্দিতা খিল খিল করে হেসে  উঠে। 
সম্ভবত নন্দিতা সিরিয়াস নেয়নি ব্যাপারটা। এত লোকের মাঝে এই ভাবে..। 




নিশ্চয় ইয়ার্কি মারছে বিকু।
আর উজান ইয়ার্কির ছলে 'ভাগ' বলে এক লাথি মারল বিকুর পায়েই লেগেছিল লাথিটা।বিকু 
নিজেকে খুব অপমানিত ভেবেই তক্ষুনি পালিয়ে এসেছিল সেখান থেকে।
পরদিন উজান আর রূপক ওর মামা বাড়িতে খোঁজ নেয়। একসাথে তিজন বাড়ি ফিরে। 
সেই সব পূরানো কথা সরিয়ে রেখে উজান একটু হালকা হতে চাইল।কাজে মন লাগছে না 
কিছুতেই।কারখানা থেকে পালিয়ে এল।কতদিন হয়ে গেল রূপকের সাথে কথা হয়নি। 

ক্লাবের পাশের অশ্বত্থ গাছটার পাতা নাড়িয়ে বিকেলের মিষ্টি বাতাস বয়ে যাচ্ছে।উজান আনমনে 
বাড়ির দিকেই হেঁটে যাচ্ছে। বাড়ির কাছাকাছি ডোরার মুখোমুখি।

"আরে উজানদা আজকাল আমাদের বাড়ি আসছনা কেন? মা বলছিল উজানটা কি রাগ করল!
"কোঁকড়ানো চুলের ছোট করে ছাঁট, সদা শান্ত স্বভাবের মেয়েটাকে তার বড্ড ভালো লাগে।এক 
অদ্ভুত স্নেহ জাগে। আর এই মেয়েটাও উজানদা উজানদা বলে মাথা খারাপ করে দেয়। প্রতি 
বছর রাখি আর ফোঁটার দিনে ফোঁটা দেওয়া চায়।

[ধারাবাহিক উপন্যাস  মন ভাঙনের পাড়ে Episode 7 ]

"আরে না রাগ কিসের!এখন সময় হয় না।কাজে ব্যাস্ত থাকিতো। ঠিক আছে আসব খন।"
"তবে আজই চলে এসো।আচ্ছা একটু দাঁড়াও কোত্থাও যাবে না কিন্তু।মোড়ের দোকান থেকে 
কয়েকটা জিনিস নিয়ে আসছি তারপর একসাথেই যাব।" বাধ্য ছেলের মতো উজান দাঁড়িয়ে রইল।  
বাড়িতে ঢুকতেই পারুল কাকিমা জিজ্ঞেস করলেন, "কী ব্যাপার উজান কারখানার কাজ কেমন চলছে?" 
"ভালোই কাকিমা, চলে যাচ্ছে।"   

ডোরা কিচেনের দিকে চলে গেল কিনে আনা জিনিসগুলো  সাজিয়ে রাখছে। ডোরাদের বাড়ি মানেই 
ছাদের আড্ডা টবের ফুল পায়রা আর পাখিদের কূজন। উজান সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল ।ছাদে পা 
রাখতেই দেখতে পেল,টবে ফুঁটে থাকা অজস্র বিটুমিনাস হাত বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে সারা।উজানের পা 
আর এগোল না সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।

দেখছে একটা সাদা বাদামি রঙের পায়রা ধরে মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সারা। এই পায়রা 
গুলোও বেশ পোষ মেনে গেছে ভালোই,অল্পেতেই ধরা দিয়ে দেয়।সারার মুঠো একটু আলগা হতেই 
ফরফর করে উড়ে গেল।
চমকে উঠল সে আর তখনই চোখ পড়ল উজানের চোখে। লাজুক হেসে সারা জিজ্ঞেস করল ,"তুমি? 
কখন এলে?"   
উজান শান্ত হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে বলল,"এইতো এলাম।"    
    
সারার নজর ঝুঁকে আছে লজ্জ্বায়।ওড়নার খুঁট ধরে পাক দিচ্ছে। উজান অবাক হল। সে এক অন্য 
সারাকে দেখছে। এত লাজুক'তো সে কই আগে ছিল না!আজকি সারাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে!
তার ফর্সা গাল দোপাটি ফুলের মতো লাল হয়ে আছে।খোলা ঈষৎ বাদামি চুলে বিকেলের রোদ পড়ে 
চিকচিক করছে। ধ্যাৎ,এইসব ভাবছেইবা কেন সে?একবার যাকে না বলে দিয়েছে..।মুখ ঘুরিয়ে নিল। 

পশ্চিমের আকাশটা  আশ্চর্য রকমের লাল হয়ে আছে।কিছু মেঘ এমন ভাবে জমে উঠেছে যেন পাহাড়ের 
চূড়া আর তার পেছনে সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে। উজান সেদিকে তাকিয়ে তন্ময় হয়ে যাচ্ছে।    
কাঁধে একটা হাতের চাপ পেয়ে পিছু ফিরে তাকাতেই দেখল, সারা একটা গোলাপ হাতে বলল,"এটা 
তোমার জন্যে।"

অবাক হয়ে গেল উজান আরে সেতো মানা করে দিয়েছিল নিতুবৌদিকে তাহলে সারা এমন পাগলামো 
করছে কেন?সে নিশ্চয় ভালো মতো বোঝে লাল গোলাপ দেওয়ার মানে!
রূঢ় গলায় উজান বলল,"দেখো সারা এইসব ঠিক নয়।তোমার সাথে আমার, মানে ,এটা , ঠিক সম্ভব 
নয়। তোমার ফ্যামিলি এইসব মেনে নেবে না।পরে অনেক ঝামেলার সম্মুখিন হতে হবে।সেটা ভেবে 
দেখেছো?"

খুব সাবলীল স্বরে সারা জবাব দিল ,"পরে কি হবে সে সব এখন ভেবে কি হবে উজান? এটা আমার 
জীবন উজান।সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমার আছে।"
খুব টেনশন হচ্ছে উজানের, আজ না এলেই কি ভালো হত!কে জানে! কি হতে চলেছে? যেটা সে 
এড়িয়ে থাকতে চাইছে সেই গর্তেই এসে পড়ছে আবার।

"তাছাড়া তুমি এখনও নাবালীকা সারা।" এবার যেন উজনের গলার স্বর কাঁপা কাঁপা লাগছে।
"কে বলেছে সামনের বছরই আঠার হয়ে যাবে।" সারার ঠোঁট কাঁপছে।উজানের একেবারে সামনে বুক 
উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলছে, "দেখো আমাকে কি তোমার বাচ্চা মনে হচ্ছে? উজান!"        
উজান আর কোন জবাব খুঁজে পায় না। কি বলবে সে সারাকে?সব কিছু ভুলে যাচ্ছে সে । 

এই মুহুর্ত্বে সারা ছাড়া আর কোন কিছুর অস্তিত্বই যেন নেই। "ওহ উজান!" বলেই জড়িয়ে ধরল। 
উজানের বুকের উপর নিশ্বাস পড়ছে গভীর। তারা হারিয়ে গেল একে অপরের গহীন হৃদয়ে। এক 
ঝটপট আওয়াজে তারা চমকে উঠল। একটা সাদা পায়রা সারার 
মাথায় উড়ে এসে বসেছে।সারা মাথা নাড়তেই আবার উড়ে গেল। 

"কি করছিস সারা?" ওদের দেখেই লজ্জ্বায় জীভ কাটল ডোরা। বলল, "এইরে আমি বুঝি ডিস্টার্ব 
করলাম তোদের?" 
চোখ বড় বড় করে দাঁড়িয়ে রইল যেন ভুত দেখেছে।সারা ছিটকে উজানের থেকে দূরে সরে দাঁড়াল,
"আরে না না।" ভীষণ লজ্জ্বা পেয়েছে সারা।

              **************


                           
Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন