অভাবনীয়
শক্তি সামন্ত
Bengali Shorts Story By Shakti Samanta অভাবনীয়
জটলাটা কাটিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিল অর্জুন । কিছু একটা রাজনৈতিক গন্ডগোল। ভালোই ঝামেলা পাকিয়েছে ।এতো পশ্চিম বঙ্গের নিত্য দিনের ঘটনা ।এইসব ঝামেলায় অর্জুন থাকতে চায় না ।বিশেষ করে আজ তো নয়ই ।আজ তার জীবনের গুরুত্বপূর্ন একটা দিন।হন-হন করে এগিয়ে যাচ্ছে সে ।
আর একটু এগোতেই হোঁচট খেয়ে ড্রেনে পরে গিয়ে একেবারে যা তা অবস্থা।ধড়ফড় করে উঠে পড়ে ।না কিছুই তেমন চোট লাগেনি।কাপড়চোপড় একটু নোংড়া হয়েছে মাত্র।না আর দেরি করা যাবেনা ।সন্দীপা তার জন্য অপেক্ষা করছে যে।এই একটু আগে ফোন করে ছিল ।তাড়াতাড়ি পৌঁছতেই হবে ।
আর একটু এগিয়ে যেতেই রাস্তার ধারে একটি খোলা নল থেকে জল বয়েই যাচ্ছে ,কেউ বন্ধ করেনি। অযথা অপচয় হচ্ছে দেখে রাগ হলো অর্জুনের। সারা পৃথিবী্তে যখন পানিয় জলের সঙ্কট তখন এরা........... । যাকগে কিইবা আর করা যাবে, নিজেরা সচেতন না হলে । তাড়া-হুড়ো করে জামা প্যান্টের নোংড়াগুলো ধুয়ে নিল।বার বার ফোন আসছে এখন কথা বলা যাবে না। তাই কেটে দিচ্ছে সে । সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পিঠের বাঁ পাশটা কেমন যেন চিনচিন করছে, কিভাবে চোট লেগেছ হয়তো। খাঁচ ধরছে পেশিতে ।এইসব এখন আর ভাবলে চলবে না।এগিয়ে চললো অর্জুন।হয়তো সন্দীপা পৌঁছে গেছে মন্দিরে , হ্যাঁ আজ তারা বিয়ে করবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে ।
*****
এদিকে ,টেনশনে হাতপা কাঁপছে সন্দীপার, প্রায় ঘন্টাখানেক হয়ে গেলো অর্জুনের কোন পাত্তায় নেই আর । বাবা যদি একবার জানতে পারে রক্ষে থাকবে না আর ।একবার বিয়েটা হয়ে গেলে বাবার আর কিছু করার থাকবে না । তখন না হয় হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা-টমা চেয়ে নেওয়া যাবে ।ওহ ! ফোনও উঠাচ্ছে না, এই অর্জুনটাও কি যে করে না ! উৎকণ্ঠায় নাভিশ্বাস অবস্থা তার । ফোনের পর ফোন রিং বেজেই চলেছে উঠাচ্ছে না অর্জুন ।
সন্দীপা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছে ।ঘড়ি টাওয়ারের নিচে অপেক্ষা করছে সমীর , সন্দীপা কে নিয়ে মন্দিরে যেতে হবে।সমীর অর্জুনের ছোটবেলার বন্ধু সন্দীপারও পরিচিত। বেশ কিছুক্ষণ আগে ফোন এসেছিল যে মন্দিরে তাদের বিয়ে হবার কথা সেখানে নয়।অন্য একটি মন্দিরে সব বন্দোবস্ত করে ফেলেছে অর্জুন। সন্দীপার ধনী বাবা এমন একটি বেকার ছেলের সাথে সম্পর্ক কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। তাই সাধারনত যেমনটা হয়।একটাই অপশন পড়ে থাকে পালিয়ে বিয়ে করা। সেটাই করতে চাইছে তারা।তিন বছরের তাদের প্রেম এতো সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।
*****
আরও একটু এগোতেই অর্জুন একটা পূরানো মন্দির দেখতে পেল । মন্দিরের সামনে টিনের চালা করা একটা ঘর রাস্তা পর্যন্ত । তবে গেট খোলা ছিল বলেই সে দেখতে পেল চেয়ারে বসে সেখানে এক বৃদ্ধ ব্রাম্ভণ বিঁড়ি খাচ্ছেন। পেছনে এক অনেক পুরানো মন্দির। অর্জুনের মনে কিছুটা আশার সঞ্চার হল। একটা পুরহিত পাওয়া গেছে।বিয়েটা তাহলে এই মন্দিরেই সেরে নেবে । তাছাড়া এই শহরের উপকণ্ঠ, কেউ জানতেও পারবে না । অনেকটায় আড়াল হবে বলেই তার মনে হয় ।এখানে খুব বেশি লোকের যাতায়াত নেই বললেই চলে । ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বৃদ্ধের দিকে।হন্তদন্ত-পরিশ্রান্ত অর্জুন কে দেখে বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করল কি ব্যাপার ।সব শুনে তাকে ভিতরে নিয়ে গেল এবং অর্জনের কথায় রাজি হলে ,আশস্ত হয়ে অর্জুন সন্দীপা কে ফোন করল।
*****
প্রায় ঘন্টা চার-পাঁচেক অপেক্ষার পর বাড়ি ফিরে এলো সন্দীপা। অনেকটাই রাত হয়ে গেছে তখন । না ,তারপর আর যোগাযোগে করা সম্ভব হয়নি অর্জুনের সাথে।সন্দীপা নিজেকেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না অর্জুন কিভাবে তাকে ঠকাতে পারে। ঘুম হয় না সারারাত ধরে শুধু অর্জুনের কথা ভেবেছে আর কেঁদেছে । ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল ।সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনটা কেমন ভারী-ভারী লাগছে সন্দীপার। জানলার পর্দাটা সরাতেই ভোরের আলো চোখে এসে পড়লো ।আহ! অসহ্য লাগছে । চোখ বড় করে দেখতে চেষ্টা করল । জানলা থেকে দূরে উঁচু উঁচু ঘরবাড়ি গুলো আর রাস্তার ভিড় দেখে ভাবছে এই শহরে ভিড়ে কোথায় হারিয়ে গেল অর্জুন।
এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো বুকের ভিতরটা কেমন যেন ধরাস করে উঠলো । নিশ্চয় অর্জুন করেছে ! ছুটে এসে মোবাইলটা তুলে দেখল না অর্জুন নয় । ফোন টা রিসিভ করে কানে দিয়ে – হ্যালো তারপর যা শুনলো সমীরের মুখে সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি। এলাপুর রোডের ধারে ড্রেন থেকে অর্জুনের মৃত দেহ পাওয়া গেছে। পুলিশ এমন টাই জানাল ।হাত পা অবশ হয়ে আসছে সন্দীপার স্থির হয়ে রইল সে কতক্ষন…
*****
থানায় বসে আছে সমির আর সন্দীপা। অর্জুনের বাবা, মা,দাদা এসেছে বডি সনাক্ত করার জন্যে।কান্নায় ভেঙে পড়ছে তারা।এদিকে সন্দীপারও একই অবস্থা।থানা থেকে বেরিয়ে শোকার্ত সন্দীপা হাঁটছিল শুধুই অর্জুনের কথায় ভাবছে।সমিরের স্বান্তনা দেওয়া কথা গুলো তার কানে ঢুকছিল না । তাদের প্রথম দেখার দিন গুলো ,কিভাবে অর্জুন তাকে প্রপোজ করেছিল ।পরিস্কার ছবির মতোই চোখের সামনে ভাসছিল। অর্জুনতো রাজিই ছিল না । সন্দীপাই এক প্রকার তাকে অনেক করে সেধে ছিল । তার পর এক জায়গায় থমকে দাঁড়িয়ে বলল, "দেখ সমির ,যত দূর জানি অর্জুনের কোন শত্রু ছিল না । তাহলে কে খুন করতে পারে অর্জুন কে ?"
সমীর ফিরে তাকিয়ে বলল,"আরে শুনলি না কাল ওখানে একটা গন্ডগোল বেঁধে ছিল । ভুল করে গুলিটা অর্জুন কেই লেগেছে হয়তো। " কিছুতেই মন মানছিল না সন্দীপার ।তারই জেদে ,তারপর তারা অর্জুনের উল্লেখ করা সেই পোড়ো মন্দিরের খোঁজে গেল । যেখানে অর্জুনের দেহ পাওয়া গিয়েছিল সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটা পূরানো মন্দিরের খোঁজ পেল ।
এখানে কেউ থাকে বলেতো মনে হয়না ।মাকড়শার জালে ভর্তি বহুদিন কোন পূজা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে।অথচ অর্জুন একজন পূজারীর কথা বলেছিল।এদিক ওদিক দেখতে দেখতে এক জায়গায় একটি ফোন পড়ে থাকতে দেখতে পেল । দু-জনেই অবাক হয়ে গেল এতো অর্জুনের ফোন ! সমির কল করে দেখলো তাতে রিং বাজছে।
ConversionConversion EmoticonEmoticon