Bangla Premer Golpo মন ভাঙনের পাড়ে episode 3

  
Bangla_Premer_Golpo_মন_ভাঙনের_পাড়ে_episode_3

মন ভাঙনের পাড়ে

শাক্তি সামান্ত

আনাদের ছাদে 

  [তিন] 

Bangla Premer Golpo মন ভাঙনের পাড়ে  episode 3 

তিন তিন বার রেড কভার দিতে পারল না উজান।পটলা রেগে টং।
"কি হয়েছে আজ তোর?"একটা স্ট্রোক  ঠিকমতো পারছিস না।বোর্ড ছাড় 
খেলতে হবে না তোকে।" বোর্ড ছেড়ে বসে পড়ল উজান ।বিকু তাকে একটা 
বিঁড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলল,"নে টান।"

বাইরে বেরিয়ে এল তারা দুজন ।অন্ধকার গাঢ় হয়ে আছে। ঝিঁঝিঁ ডাকছে। ক্লাবের উপর 
ছাতার মতো অশথ গাছে অসংখ্য জোনাকি মিটমিট করছে।বিকু বিঁড়িতে টান দিতে দিতে 
বলল, "কি হয়েছে মন খারাপ কেন?"  
"কোথায় মন খারাপ? না তো।" 

একটু চুপ করে থেকে বিকু বলল, "তাহলে চল একবার আনার 
সাথে দেখা করে আসি।"
"পাগল আছিস নাকি ?এই রাতে লোকে দেখলে ক্যালাবে।"  
"কিছুই হবে না । এত ভয় পাচ্ছিস কেন ? চল না।"  
অনেক জেদাজেদির পর উজান রাজি হয়ে গেল বলল, 
"ঠিক আছে যেতে পারি তবে আমি দূরে থাকব ।আর কিছু ঝামেলা হলেই সরে পড়ব।" 
"ঠিক আছে চল ।তুই যে এত ভিতু, জানতাম না।"  
"জানার দরকার নেই।আমার একটা মান সম্মান আছে বুঝলি।তোর মত অবুঝ নই।"  
"ঠিক আছে , ঠিক আছে ।তোর মত অনেক বুঝদার দেখেছি। চল এইবার।" 
 
উজান ভালো মতোই চিনে তার মতো আনাড়িকে ।তার কথা না শুনলেও মুশকিল।শুনলেও 
বিপদের সম্ভাবনা। আজ আর ক্লাবে আসতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। মনটা খারাপ হয়ে ছিল।বিকুই 
ফোন করে ডাকল।নিতু বৌদির কথা গুলোই বার বার মনে পড়ছে।একবার ভাবল নিতু 
বৌদিই বা কেন তাকে এইসব বলল। সারা নিজেওতো বলতে পারত।এটাও হতে পারে ঐযে 
বলে না মেয়েদের 'বুক ফাটলেও মুখ ফুটে না।' কিন্তু আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এই কথাটা 
কি আদৌ প্রযোজ্য? জানেনা উজান । সে কিছুই জানতে চায় না। একবার না  বলে দিয়েছে
 মানে কাহিনী খতম।'মুখের কথা আর বন্দুকের গুলি একবার বেরিয়ে  গেলে আর ফিরে 
আসে না।' তার মধ্যে এমন কিছুই গুণমান নেই যে একটা মেয়ে বার বার তাকে সাধবে।
এইসব নিয়ে আর ভাববে না সে। 

 Bangla Premer Golpo মন ভাঙনের পাড়ে  episode 3 

 
আনাদের বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। আর একটু এগিয়ে পেছনের দিকটায় গিয়ে 
দাঁড়াল তারা । কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বাইকটা দাঁড় করাল। বারান্দার আলোয় ঘরের 
সামনেটা আলোকিত হয়ে আছে।বাড়িতে তেমন কেউ নেই। এই সময় সাধারণত আনার 
বাবা কিংবা দাদারা বাড়ির বাইরেই থাকে। থাকার মধ্যে আনার ঠাকুমা মা আর এক 
বৌদি। আনার এই সময় বাইরে এসে দাঁড়ানোর কথা ছিল।

 কিন্তু কাউকে দেখতে না 
পেয়ে উজান বিরক্ত হয়ে বলল,"কোথায় তোর আনা।" বিকু আশ্বস্ত করতে বলল,"একটু 
অপেক্ষা করাই যাক না।" বিকু আনার নম্বরে ডায়াল করল। না আনা আসতে রাজি হয়নি।
সন্ধ্যার পর মা নাকি বাড়ির বাইরে যেতে মানা করেছে। রাগে ফুঁসছে বিকু।এটাই ভয় 
পেয়েছিল উজান।কে জানে,এবার কি সাংঘাতিক কাণ্ড ঘটায় সে! তার মতো ডাকাবুকো 
ছেলে এতল্লাটে নেই।বিকু আর এক মহুর্ত্বও  দেরি না করে এক লাফে আনাদের ঘরের 
প্রাচীর চড়ে বসল।ঝুপ করে একটা আওয়াজ হল, বাগানে ঢুকে পড়েছে সে।আজ একটা 
কেলেঙ্কারি বাধিয়েই ছাড়বে মনে হচ্ছে।এক উৎকণ্ঠায় বাইকের সিটে বসে মোবাইল চালু 
করল উজান। আর বারবার মুখ তুলে দেখছে বিকু ফিরল কি না।  
  
তখন পড়তে বসেছিল আনা এমন সময় ফোনটা বেজে উঠে। নিশ্চয় বিকুর ফোন এই ছেলেটা না, 
আজকাল খুব জ্বালাচ্ছে।এদিকে সন্ধ্যের পর মা বাইরে যেতে দিতে চায় না। বড্ড জেদি  
বিকুটা।অনিচ্ছাতেও ফোনটা তুলল।সে জানে বিকুকে জবাব দেবার ভাষা তার কাছে নেই ।
সে নিজেই দুপুরে ফোন করে ডেকেছিল তাকে। আর এখন না পারছে বিকুকে বারন করতে
 না পারছে বাইরে যেতে । কিছু একটা আঁচ পেয়েছে মা।

 সন্ধ্যের পর কড়া নিরাপত্তায় 
থাকতে হচ্ছে তাকে। ঠাকুমা, বৌদি,মা তিন জনেই নিচে আছে ।বেরোতে গেলেই ধরা পড়ে 
যাবে।কোন বাহানা দিলেই হাজার কৈফিয়ত চাইবে নাহলে ঠাকুরমা কে গার্ড হিসেবে 
পাঠাবে।ধ্যাৎতেরিকি কিযে বলবে এখন বিকুকে, তারপর  ও যা রগচটা। চাপা গলায় 
খুব ধীরে ধীরে বলল ,"বলো? আমি আসতে পারব না।" এক রুক্ষ গলায় জবাব 
এল,"ডেকেছিলি কেন?আসতে পারবি না যখন।" রীতিমতো তর্ক বিতর্ক চলছে। 

কথা বলতে বলতে আনা ছাদে চলে এল যাতে নিচে তার কথা বার্তা না পৌঁছয়।বিকু 
জিজ্ঞেস করল,"তুই কথায় আছিস? দোতলায়?" 
আনা বলল,"না ছাদে।"  
"দেখ ঐ নারকেল গাছ থেকে ভূত নেমে আসছে।" 
"আমি ভুতের ভয় পাই না।" বলেই ফোনটা কেটে দিল আনা। চুপ করে আছে সে।কিছুক্ষণ 
দাঁড়িয়ে রইল সেখানে।ঠাণ্ডা হাওয়ায় মন ভরে যাচ্ছে।ছাদের অন্ধকার কোন গুলো থেকে 
সত্যিই যেন ভূত বেরিয়ে আসছে।গা ছমছম করছে আনার।ধুর কিসব ভাবছে ভূত বলে 
কিছুই হয় না।পেছন ফিরে সিঁড়ির দিকে নারকেল গাছটার উপর তাকাল।অন্ধকারে 
পাতাগুলো দুলছে। 
   
মনে মনে ভাবছে হুঁ, আমাকে ভয় দেখাচ্ছে ভুতের।এগিয়ে গেল পড়ার ঘরে যেতে হবে 
তাকে। নইলে ঠাকুমা আবার  খোঁজ নিতে আসবে। না দেখতে পেলেই চেঁচা-মেচি 
শুরু করবে।কিছু একটা আওয়াজ পেয়েই নারকেল গাছটার দিকে মুখ তুলে 
তাকাতেই ভয়ে চমকে উঠল।একি নারকেল গাছে ওটাকি?অন্ধকারে ঠিক বোঝা যায় না ।
একটা কালো ছায়া।"ভূত" বলে চেঁচানোর আগেই ঝুপ করে ছাদের উপর এসে পড়ে 
ছায়াটা ,আনার মুখটা চেপে ধরে কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে চাপা গলায় বলল,"আরে আমি। 
আমি বিক্রম ,চুপ চুপ।" এত জোর ভয় পেয়েছে আনা তার বুকের ধুকপুকানি শুনতে 
পাচ্ছে বিকু। একি আনা কি জ্ঞ্যান হারাল?এইরে বিপদে পড়েছে সে।হালকা হালকা 
গালে থাপ্পড়  মারতে মারতে, উৎকণ্ঠায় বিকু বার বার ডাকছে,"এই আনা ,আনা,
 কি হল?" এইবার সেও ভয় পেয়েছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই নড়ে উঠল আনা।বিকুর 
যেন ধড়ে প্রান এল।
 
"তুমি, অসভ্য ,জংলি, জানোয়ার, বাঁদর'' ইত্যাদি বলছে আর রাগে ফুঁসছে আনা। 
ঝিকমিক তারা ভরা আকাশের নিচে শুয়ে আছে ওরা।বিকু আনাকে জড়িয়ে ধরে 
অনেক আদর করছে,রাগটা কমে এসেছে।এই মুহুর্ত্ব থেকে কেউ বেরিয়ে যেতে চায় 
না ওরা।বিকু দেখল আনার চোখ,মুখ আশ্চর্য অনুরাগে ভরে আছে।খামছে ধরে 
আছে তার কাঁধ।ঘন ঘন নিশ্বাস পড়ছে ।অদ্ভুত অন্ধকারে ডুবে আছে তাদের শরীর। 
হাওয়া বইছে মৃদু মন্দ।সবে মাত্র আকাশের কোনে উঁকি দিচ্ছে একফালি বাঁকা চাঁদ।
অদূরে ভুতের মতো দাঁড়িয়ে থাকা দেবদারু গাছ থেকে ভেসে আসছে বাদুড়ের ডানা 
ঝাপ্টানো, চিঁ-চ্যাঁ আওয়াজ।ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে যেন সব লালা শুসে নিচ্ছে বিকু।এইভাবে 
কতক্ষণ হয়ে গেল তারা নিজেরাও জানে না।"এইটুকু কাছে পাওয়ার জন্যেইতো সব।কি 
করে ছেড়ে থাকি বল?এজীবন ডুবিয়ে দেব তোর জীবনে ,এ শরীর তোর শরীরে..." 
আরও কিছু বলতে যাবে বিকু, আনা তাকে সাবধান করে
 
দিয়ে বলল, "সর্বনাশ কেউ আসছে বুঝি সিঁড়িতে কার পায়ের আওয়াজ, পালাও।" 
ধড়ফড় করে উঠে বসল আনা। তখনই সিঁড়ি দিয়ে একটা ডাক এল,"আনা ছাদে 
কি করিস?" বিকু তড়িঘড়ি এক লাফে আবার নারকেল গাছ চড়ে নামতে থাকল।

বিকু শুনতে পাচ্ছে,"কার সাথে গল্প করছিলি?"
"ওহ ঠাকুমা তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
এত রাতে কে এখানে আসবে?" 
"তবে কার গলার আওয়াজ পাচ্ছিলাম?" 
এবার রেগে গিয়ে আনা  নিজের দোষ ঢাকতে চেঁচিয়ে বলে উঠল,
"ভুতের ,ভুতের সাথে কথা বলছিলাম।"
এতক্ষণে নিচ থেকে মা,বৌদি ছুটে এলে বাক বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। 

প্রায় ঘন্টাখানেক হয়ে গেল এখনও আসছে না বিকু। বেশ টেনশনে আছে উজান।
মোবাইলে টাইম দেখে বুঝতে পারল প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেছে। টেনশন হওয়ারই কথা, 
যদিও সে  নিরাপদ দূরত্বে আছে।হঠাৎ বুঝতে পারল কিছু একটা গণ্ডগোল বেঁধেছে 
আনাদের বাড়িতে। নড়েচড়ে উঠল উজান । মোবাইলটা বন্ধ করে দিয়ে বাইকে 
চেপে বসল ভালো করে।

 বিকু এলে স্টার্ট দিয়ে পালাতে হবে। একেবারে রেডি  
হয়ে আছে নাহলে রক্ষে নেই।জানলা থেকে যে আলো বেরিয়ে আসছে তার আভায় 
উজান দেখতে পাচ্ছে আনাদের দোতলা বাড়ির একেবারে 
গা ঠেসে দাঁড়িয়ে থাকা নারকেল গাছ বেয়ে নেমে   
আসছে বিকু। ছাতি ঢিব ঢিব করছে উজানের ।

বাইকের চাবি ঘুরিয়ে অন 
করতেই লাল হয়ে ব্যাক লাইট জ্বলে উঠল। এতেই বিকু বুঝতে পারবে উজান 
রেডি হয়ে আছে। সাহস পাবে সে। এইতো আর একটু প্রাচীরটা টপকাতে পারলেই 
হল।আর তার নাগাল পাবে না কেউ। মাটি থেকে তখনও অনেকটা উপরে তাড়াহুড়ো 
করতে গিয়ে ধপাস করে পড়ে গেল।যেটা ভয় পেয়েছিল উজান, তাই হল কি হবে  
এবার! হাত পা নিশ্চয় ভেঙ্গেছে! ধরা পড়ে যাবে ।

মান সম্মান সব যাবে ছিঃ।কি 
অবস্থা! এই জন্যেই বিকুর পাল্লায় পড়তে নেই। এখন কি করবে সে? এগিয়ে গিয়ে 
দেখবে নাকি পালাবে? ভেবে পাচ্ছে না উজান।নাকি ক্লাবের ছেলেদের কে ফোন 
করবে?গন্ডগোল হলে ওরা সামলে নেবে।আর হাসপাতালেও নিয়ে যেতে হবে বুঝি! 
বেশ উৎকণ্ঠায় আছে উজান।একটু এগিয়ে গিয়েই দেখা যাক।তখনই দেখতে পেল 
বিকু প্রাচীরের উপর উঠে বসে লাফ দিল।"ওহ" এতক্ষণে একটু স্বস্তি পেল উজান। 
বিকু ঝুঁকে ঝুঁকে ছুটে আসছে। বাইকে চড়ে বসে বলল, "চল চল , খুব বাঁচার 
বেঁচে গেছি।" গাড়িতে স্টার্ট দিল উজান। 

[এরপর কি হবে আনার ? আনার বাড়িতে কি জেনে যাবে বিকুর ব্যাপারে? জানতে হলে অবশ্যই
পরেরে পর্ব পড়ুন]
              *************


Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন