vul station a neme bengali uponyas

vul_station_a_neme_bengali_uponyas

 

ভুল ষ্টেশনে নেমে

 সমীরণ সরকার

  (৫২ তম পর্ব)

 

বিশু মামা চাপা গলায় বললেন, ঠিক আছে, এখন তাড়াতাড়ি এখান থেকে 

পালিয়ে চলো। যত শিগগির সম্ভব এই এলাকার বাইরে যেতে হবে আমাদের।

------ হ্যাঁ মামা , আপনি সামনে আমাদের পথ দেখান। পলাশ বলে।

------ এসো আমার পিছু পিছু।

বিশু মামা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। তাকে অনুসরণ 

করে অতি সন্তর্পনে বাকিরা এগিয়ে চলল। কিছুক্ষন এভাবে চলার পর একটা 

মস্ত লম্বা, ঝাঁকড়া গাছের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন বিশু মামা।

পলাশ ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করল, এখানে দাঁড়ালেন কেন?

বিশু মামা চাপা গলায় বললেন, এই গাছটার ওপরে চেপে আমি দেখতে পেয়েছিলাম, 

আশ্রমের এই জঙ্গল টার পরে একটা ফাঁকা জায়গা আছে। ওই ফাঁকা যায়গাটার পর 

একটা ছোট্ট নদী আছে। নদীর ঘাটে একটা ডিঙ্গি নৌকা বাঁধা আছে। সম্ভবত ওই 

নৌকায় চেপে আশ্রমের লোকেরা প্রয়োজনে ওপারে যায়, জরুরী প্রয়োজনে।

পলাশ বলল, আশ্রম এলাকার শেষ প্রান্তে কোন প্রাচীর বা কাঁটাতার জাতীয় কিছু 

নেই তো মামাবাবু?

-------- প্রাচীর যে নেই এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

তবে কাঁটাতারের বেড়া জাতীয় কিছু আছে কিনা, খেয়াল করিনি।

------- কৃষ্ণানন্দ যেখানে আশ্রমের সুরক্ষার জন্য এত রকমের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা 

করেছে এবং সিকিউরিটি এলার্ম এর সাহায্যে রক্ষীদের সুরক্ষিত ও কন্ট্রোলরুমে 

যোগাযোগ ব্যবস্থা করেছে ,সে ক্ষেত্রে আশ্রমের পিছন দিকটা যে একেবারে অরক্ষিত 

থাকবে ,এটা ভাবা বোধহয় ভুল হবে!

------- কিরকম সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে পারে বলে মনে করছো তুমি?

--------- সেটা এখন বুঝতে পারছি না। তবে আমাদের খুব সতর্ক হয়ে এগোতে 

হবে। তা না হলে যে কোন মুহূর্তে আমাদের সামান্য ভুলে আশ্রম কর্তৃপক্ষ সজাগ 

হয়ে যাবে এবং আমরা ধরা পড়ে যাব।

------- আমি বলি কি পলাশ, এবারে তাহলে তুমি সামনে থাকো ,আমরা তোমাকে 

ফলো করছি।নন্দিনী তার বিশু মামা কে সমর্থন করে বলে, তুমি একদম ঠিক বলেছ 

মামা। পলাশদা,তুমি সামনে এগিয়ে চলো।

পলাশ ফিসফিস করে বিশু মামাকে জিজ্ঞাসা করল, এই গাছ থেকে কত দূরে আশ্রমের

 সীমানা শেষ হয়েছে সে বিষয়ে‌একটা ধারণা দিতে পারেন মামাবাবু?

------ বেশি দূরে নয়, এই গাছ থেকে হাত তিনেক  দূরে  গাছপালা শেষ হয়েছে। 

তারপরই ফাঁকা মাঠ। আমার মনে হয়, গাছপালা যেখানে শেষ হয়েছে, ওটাই আশ্রম 

এলাকার শেষ প্রান্ত।

 ---- ঠিক আছে, আপনারা এই গাছটার কাছেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকুন মামাবাবু।

আমি একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে আসছি যে, শেষ প্রান্তে কোন বাধা আছে কিনা।

নন্দিনী বলে, আমি তোমার সঙ্গে যাব পলাশদা?

----- দরকার নেই। তুই ওঁদের পাহারায় থাক।

পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন


             পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ছোট্ট আলো জ্বেলে এগিয়ে যায় 

পলাশ। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে ওরা তিনজন ,পলাশের ফিরে আসার প্রতীক্ষায়। মিনিট

 পাঁচেকের মধ্যেই ফিরে আসে পলাশ।বিশু মামা ব্যগ্র হয়ে জিজ্ঞাসা করেন,

 কি দেখলে পলাশ?

------ আমি যা ভেবেছিলাম, ঠিক তাই। শেষপ্রান্তে কাঁটাতারের বেড়া আছে। শুধু তাই 

নয়, আমার মনে হল, ওই কাঁটাতারের বেড়াতে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও করা আছে।

বিশু মামা  শিউরে উঠে বললেন, কি সব্বনাশ! ভাগ্যে তুমি চেক করে এলে পলাশ ,

তা নাহলে তো মস্ত বিপদ হয়ে যেত। 

----হুম।

নন্দিনী হতাশ কন্ঠে বলল, তাহলে এখন উপায় কি হবে মামা? আমরা নদী পর্যন্ত যাব 

কি করে?

------ সেই তো রে।

পলাশ বলল ,আমি  একটা উপায় ভেবেছি।

-----কী?

------ আমি খেয়াল করে দেখেছি যে, এই গাছটা থেকে হাত দুয়েক দূরে বাঁদিকে 

আরেকটা বড় গাছ আছে ।

----তো?

------ ওই গাছটা সীমানার দিকে আরেকটু এগিয়ে আছে ।ওই গাছটার একটা মোটা 

ডাল তারকাঁটার বেড়ার উপর দিয়ে পার হয়ে বাইরের দিকে গেছে। সম্ভবত কেউ 

খেয়াল করেনি, তা না হলে কেটে দিত ডালটা।বিশু মামা বললেন, ওটা দিয়ে কি হবে?

পলাশ বলল, ওই গাছের ডালটাই আমাদের শেষ ভরসা। গাছে উঠে ওই ডালটা ধরেই 

বাইরে লাফিয়ে পড়তে হবে আমাদের। তবে খুব সাবধানে করতে হবে কাজটা, যাতে 

কোনোভাবেই তারকাঁটার সঙ্গে আমাদের শরীরের কোন অংশের স্পর্শ না হয়।

বিশু মামা বললেন, তুমি -আমি -নন্দিনী নাহয় গাছে উঠে বেরিয়ে যাব, কিন্তু দিদি কী 

করবে?

------ কাকিমার ভার আমার উপর ছেড়ে দিন।

----- মানে?

------ কাকিমা আমার গলা ধরে ঝুলে থাকবেন। আপনারা কাকিমার গায়ের চাদরটার 

সাহায্যে কাকিমাকে আমার কাঁধের সঙ্গে টাইট করে বেঁধে দেবেন । আমি ওঁকে নিয়ে 

গাছে উঠে ডাল ধরে ঠিক পেরিয়ে যাব।

------ কি বলছ পলাশ, এটা পারবে তুমি?

  --- ক্যারাটে আর রক ক্লাইম্বিং--- দুয়ের ই প্রশিক্ষণ আছে আমার। একসময় শখ 

করে শিখেছিলাম, আজ কাজে লাগবে। কাকীমা, আপনি শুধু ছোট্ট বাচ্চার মত আমার 

গলা ধরে  ঝুলে থাকবেন। কি, পারবেন তো?

-----পারব।

 পলাশের নির্দেশ মত গাছে উঠে একে একে পেরিয়ে যায় বিশু মামা ও নন্দিনী। 

অন্নপূর্ণা দেবী কে শরীরের সঙ্গে আগেই বেঁধে নিয়ে অপেক্ষা করছিল পলাশ। এবার 

ধীরে ধীরে উঠে পরলো গাছে। খুব সাবধানে গাছের ডাল টা ধরে ও মাথা পর্যন্ত চলে 

গেছিল পলাশ। কিন্তু ঝাঁপ দেওয়ার  সময়ে হঠাৎ অন্নপূর্ণা দেবীর পা থেকে একপাটি 

চটি খুলে গিয়ে উপর থেকে পড়ে নিচে কাঁটাতারের বেড়ার এক জায়গায় আটকে গেল।        

আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকাটায় তারকাঁটার বেড়া বরাবর বিভিন্ন জায়গায় হলুদ 

রঙের অসংখ্য ছোট ছোট আলোর বিন্দু দপ দপ করে জ্বলতে  থাকলো। মুহূর্তের জন্য 

ঘাবড়ে গেল পলাশ। তারপরই সে তার কর্তব্য ঠিক করে নিল ।তাড়াতাড়ি গাছের ডাল 

থেকে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। অন্নপূর্ণা দেবী কে গলা থেকে তাড়াতাড়ি খুলে নিচে 

দাঁড় করিয়ে দিয়ে নন্দিনী কে বলল চটকরে পিস্তলটা দে আমাকে ।  

  সবটা দেখে অজানা আশঙ্কায় নন্দিনী কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে দাঁড়িয়ে গেছিল। পলাশ 

ওর কোমরের কাছ থেকে একটানে পিস্তলটা বের করে নিয়ে চটিটার যে অংশটা 

আটকে গেছিল কাঁটাতারে, সেই জায়গাটা লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ল। মুহুর্তের মধ্যে চটির 

ওই অংশটা ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে গেল। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হলুদ আলোর দপদপ 

করে  জ্বলা বন্ধ হয়ে গেল।                         

 আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পলাশ চাপা গলায় নির্দেশ দিল, আর এক মুহূর্ত দেরি না করে 

আমাদের ছুটতে হবে নদীর ঘাটের দিকে। এতক্ষণ ধরে কাঁটাতারের গায়ে জ্বলা হলুদ 

আলো হয়ত কোন মেসেজ পৌঁছে দিয়েছে কন্ট্রোল রুমে। ওরা যে কোন মুহূর্তে এখানে

 উপস্থিত হতে পারে। রান নন্দিনী ,রান!


             ওরা ছুটতে ছুটতে নদীর ঘাটে এসে উপস্থিত হলো। একটা ছই  ঢাকা 

ছোট্ট নৌকা বাঁধা আছে ঘাটে। ভিতরে মৃদু আলো জ্বলছে।

পলাশ নিজে নৌকায় উঠে গিয়ে বলল, সবাই চট করে উঠে এসো নৌকায়,এক মিনিট 

দেরি নয়।ছই  এর ভিতর লন্ঠনের মৃদু আলো জ্বেলে ঘুমিয়ে  ছিল নৌকার মাঝি। পলাশ

 পিস্তলটা ওর কানে ঠেকিয়ে নন্দিনী কে বলল,ওকে ঘুম থেকে ডেকে তোল তাড়াতাড়ি।

নন্দিনী বার দুয়েক ওকে ঠেলতেই ও ঘুম ভেঙে ধড়মড় করে উঠে বসে আতঙ্কিত 

গলায় বলে উঠলো,ডা-কাত --ডাকাত।

পলাশ বলল, হ্যাঁ, ডাকাত। শিগগিরই নৌকা ছেড়ে ওপার চলো ।

----- কে আপনারা?

নন্দিনী বলল, আমরা সর্বানন্দ আশ্রমের লোক।

----- তাহলে উপরে যাবার লাল রঙা 'পাস' দেখান।মাঝি বলল।

পলাশ বলল, আমার হাতের পিস্তলটা দেখতে পাচ্ছ?

মাঝি ভীত গলায় জবাব দিল, হ্যাঁ।

----- এটাই আমাদের পাস। নৌকা ছাড়তে দেরী করলে এক গুলিতে তোমার মাথার 

খুলি উড়িয়ে দেবো। শিগগির নৌকা ছাড়ো।

মাঝি আর কথা না বাড়িয়ে নৌকা ছেড়ে দিল পলাশের প্রহরায়।

নৌকা যখন নদীর ওপারে পৌঁছালো, তখন অন্ধকার রাত্রির গা থেকে দুধের সরের মত 

পাতলা চাদরটা সরে গিয়ে হালকা আলোর আভা দেখা যাচ্ছে। ভোর হয়ে আসছে।

পলাশ বলল, এখান থেকে থানা কতদূর?

----- আজ্ঞে, থানা এখান থেকে মাইল দুয়েক দূরে, চন্দনপুরে। 

------ কিভাবে যাব চন্দনপুর?

------- কিছুটা হাঁটলেই পাকা রাস্তা পাবেন। ভ্যান পাবেন ওখানে । ভ্যান নদীর ঘাটের 

প্যাসেঞ্জার নিয়ে চন্দনপুর যায় ।

----- আচ্ছা।

মাঝি বলে, আমি তাহলে এবারে যাই বাবু।

পলাশ বলল, না। নৌকাটা ঘাটে বেঁধে রেখে তুমি আমাদের সঙ্গে চন্দনপুর থানায় যাবে।

------ আমি থানায় গিয়ে কি করবো বাবু?

------ কিছু করতে হবে না তোমাকে, তুমি আমাদের থানার পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে।

------ আমি ওপারে নৌকা না নিয়ে গেলে আমার খোঁজ পড়ে যাবে, সকাল হলেই।

------- ওসব চালাকি ছাড়ো। আমাদের সঙ্গে থানায় না গেলে,.......

কথা শেষ করে পলাশ পিস্তলটা ওর দিকে তাক করতেই মাঝি ভীত গলায় বলল, 

আর কিছু বলতে হবে না বাবু, আমি আপনাদের সঙ্গে থানায় যাব।

----বাঃ! এইতো বুদ্ধি খুলেছে।


( পরবর্তী কিস্তি শেষ কিস্তি)

Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন