ভুল স্টেশনে নেমে
সমীরণ সরকার
(অন্তিম পর্ব)
উপসংহার
সারারাত জেগে পাহারা দেবার পর ভোরের আলো ফুটতে দেখে ,চন্দনপুর থানার দুজন কনস্টেবল হাতের বন্দুকটা মেঝেতে দাঁড় করিয়ে, দুই হাত দিয়ে সেটাকে শক্ত করে ধরে কাঠের টুলের উপরে বসে একটু ঝিমোচ্ছিল। হঠাৎ একসঙ্গে পাঁচজন লোক থানার ভেতর ঢোকায় তাদের পায়ের আওয়াজে ওদের ঝিমুনি কেটে যায়।ধড়মড় করে উঠে দাঁড়িয়ে বন্দুকটা হাতে তুলে নিয়ে ওরা প্রায় একসঙ্গে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, কী হয়েছে ,কাকে চাই? নন্দিনী বলল, আমরা বড় বাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। খুব জরুরী দরকার।
দুজনের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত লম্বা সেই পুলিশ টি বলল,
বড়বাবুর সঙ্গে এখন তো দেখা করা যাবে না।
----- কেন ?
-------এখন উনি কোয়ার্টারে আছেন। আপনারা নটার পরে আসুন ।
---- আপনাকে বললাম না যে, খুব জরুরী কারণে আমরা বাধ্য হয়ে এসেছি।
অন্য কনস্টেবলটি তখন বলল,কী হয়েছে?
এবার পলাশ এগিয়ে এসে বলল, আপনারা মহেশপুরের স্বামী সর্বানন্দের আশ্রম চেনেন স্যার?
পলাশ কনস্টেবলটিকে ' স্যার' বলে সম্বোধন করায় সে মনে মনে খুব খুশী হলো। কণ্ঠস্বরকে অপেক্ষাকৃত নরম করে সে এবার বলল, মহেশপুরের আশ্রম তো? সে তো বিশাল ব্যাপার! গতবছর আশ্রমের উৎসবের সময় আমার ডিউটি পরেছিল ওখানে।তা আশ্রমে কী হয়েছে বলুন তো?
ওষুধে কাজ হয়েছে বুঝে পলাশ আরেকটু বিনীত ভাবে বলল, স্যার, আশ্রমের বড় বিপদ! আর তাই তো ভোর হতে না হতেই আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি সাহায্য পাওয়ার জন্য। আর সেই কাজে ওসি সাহেবের অনুমতি ছাড়া তো আপনারা কিছু করতে পারবেন না স্যার! তাই একটু ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করে সবটা জানাতে চাই। এসপি সাহেব স্বামী সর্বানন্দ কে সেরকমই বলেছিলেন যে, কোন সমস্যায় পড়লে তিনি যেন চন্দনপুর থানার ওসির সাহায্য নেন। এসপি সাহেবের নাম শুনে পুলিশটিদ তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,
ঠিক আছে। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আমি দেখছি।
দ্বিতীয় কনষ্টবল টি প্রথম কনস্টেবলের কানে কানে একটু চাপা গলায় কি যেন বলল। নিচু গলায় দুজনে কি যেন আলোচনা করল ।তারপর দ্বিতীয় কনেষ্টবল টি বন্দুক হাতে বেরিয়ে গেল থানা থেকে।
মিনিট পাঁচেক কাটতে না কাটতেই সেই কনস্টেবল টি ফিরে এসে পলাশকে বলল, চলুন স্যারের কোয়ার্টারে।
পলাশ বলল, আমি একা যাবনা স্যার, আমরা দুজনে যাব।
---- বেশ, আসুন আমার সঙ্গে
চন্দনপুর থানার ওসি মনোজ সান্যাল বয়সে তরুণ। বছর খানেক আগে দায়িত্ব নিয়েছেন এই থানার।তবু এর মধ্যেই মহেশপুর আশ্রম এ গেছেন দুবার।একবার নিজে একা, আরেকবার এসপি সাহেবের সঙ্গে একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
স্বামী সর্বানন্দ ভদ্র বিনয়ী এবং অতিথিবৎসল মানুষ।
স্বামী সর্বানন্দের ভাই স্বামী কৃষ্ণানন্দের সঙ্গেওধ্য নাকি বেশ উচ্চশিক্ষিত, কিন্তু ওনার ব্যবহারটা স্বামী সর্বানন্দের মত অত মধুর নয়।
এসব ভাবতে ভাবতেই কনস্টেবল সুধাকর মাইতি দুটি যুবক-যুবতীকে তার সামনে নিয়ে এসে হাজির হলো।
ওসি মনোজ বাবু কিছু বলার আগেই পলাশ হাতজোড় করে বলল, মাফ করে দেবেন স্যার, ,নিতান্ত বিপদে পড়েই এই ভোর বেলায় আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম।
-----আপনারা?
----- আমি পলাশ আর ও নন্দিনী।
------- আপনারা মহেশপুর আশ্রম থেকে এসেছেন?
------ হ্যাঁ স্যার।
------- আপনারা বলছেন যে আশ্রমের খুব বিপদ?
------ শুধু আশ্রমের নয় স্যার ,
অনেকের বিপদ।
----- বুঝলাম না।
----- পুরো ব্যাপারটা খুব গোপনীয় স্যার। আমরা আপনাকে বলতে চাই।
কথা শেষ করে পলাশ তখনও দাঁড়িয়ে থাকা কনস্টেবল টির দিকে তাকায়। ওসি কনস্টেবল সুধাকরের উদ্দেশ্যে বলেন, তুমি এখন যাও সুধাকর,আমি ওদের সঙ্গে কথা বলব।
---- ঠিক আছে স্যার।
সুধাকর নামের কনস্টেবলটি চলে যেতেই ওসি মনোজ সান্যাল ঘরের ভেতর থেকে দুটো ফাইবারের চেয়ার নিয়ে এসে পলাশকে বললেন, আপনারা আগে বসুন। আপনাদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যে খুব ধকল গেছে আপনাদের উপর দিয়ে।
পলাশ হাতজোড় করে বলে, অনেক ধন্যবাদ স্যার। সত্যি খুব ক্লান্ত আমরা। গত দু'দিন যাবত ওই মহেশপুর আশ্রমে অনেক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটতে দেখেছি আমরা। আমাদের জীবন বাজি ধরে কোন মতে ওখান থেকে পালিয়ে এসেছি অনেকের জীবন রক্ষা করতে। আমরা সবটা আপনাকে জানাতে চাই স্যার!
এরপর এক এক করে পলাশ ও নন্দিনী মহেশপুর আশ্রমের সমস্ত গোপন কার্যকলাপের কথা খুলে বলে মনোজ সান্যাল কে ।
সবটা শুনে ওসি মনোজ সান্যাল বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান।তিনি বলেন, বেশ কয়েকমাস যাবত চন্দনপুর থানা এলাকায় এবং পার্শ্ববর্তী দেওয়ানগঞ্জ থানা এলাকায় অনেকগুলি বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও মহিলা মিসিং কেসের ডায়েরি হয়েছে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সেই সমস্ত কেস সলভ করা যায়নি । অনেকগুলো মানুষ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এসপি সাহেব সহ গোটা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট কে বিভিন্ন ভাবে অপদস্থ হতে হচ্ছে এই কারণে।
আমার মনে বলছে, এবারে সব সমস্যার সমাধান হবে। তবে মহেশপুর আশ্রমে অপারেশন চালানোর আগে আমি আরেকবার আপনাদের জিজ্ঞেস করছি , আপনার সবটা জেনে বলছেন তো?
----- হান্ড্রেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি স্যার।
----- আপনারা চা বা কফি কিছু খাবেন?
নন্দিনী বলে, ধন্যবাদ স্যার, কিছু খাওয়ার মত অবস্থায় আমরা এখন নেই। তাছাড়া বললাম না স্যার, থানায় আমার মা , বিশু মামা আর ওই নৌকার মাঝি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
--- থানার ঠিক পাশেই একটা চায়ের দোকান আছে। খুব সকালেই খোলে দোকানটা।আপনারা ওখানে সবাই চা খেতে পারেন।
আমি কয়েকটা ফোন করে প্রিপারেশন নিচ্ছি। এসপি সাহেব কে ফোন করে সবটা জানাতে হবে। আমার থানায় এবং মহেশপুর ফাঁড়িতে যা ফোর্স আছে তা যথেষ্ট নয়, দেওয়ানগঞ্জ থানার হেল্প নিতেই হবে। আপনারা থানায় অপেক্ষা করুন,প্লিজ! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা
বেরিয়ে যাব অপারেশনে।
মিনিট চল্লিশ পরেই আর্মড পুলিশ ফোর্স সহ তিনটে গাড়ি বেরিয়ে গেল চন্দন পুর থানা থেকে। ঠিক প্রায় একই সময় দেওয়ানগঞ্জ থানা থেকেও সশস্ত্র পুলিশ বোঝাই দুটো গাড়ি রওনা হল মহেশপুর আশ্রমের উদ্দেশ্যে। এসপি সাহেবের গাড়ি ও বেরিয়ে পড়লো প্রায় এক সময়ে।
যেমনটা ভাবা হয়েছিল, তেমন বাধা পাওয়া গেল না আশ্রমের তরফ থেকে। কারণ প্রায় সারা রাত ধরে 'চক্র আসরে' অত্যাধিক মদ্যপান করে এবং নারীসঙ্গ নিয়ে ফুর্তি করার পর সবাই যখন গভীর ঘুমে তলিয়ে ছিল ,ঠিক সেই সময় পুলিশ অভিযান চালালো আশ্রমে। আশ্রমের ভাড়া করা সিকিউরিটির লোকেরা অত সশস্ত্র পুলিশ কে একসঙ্গে আশ্রমে দেখে কার্যত আত্মসমর্পণ করলো। মন্দিরের নীচে আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরের তালার চাবি ওসি মনোজ বাবুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন নন্দিনীর মা অন্নপূর্ণা দেবী। আন্ডারগ্রাউন্ড ঘর থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলো হেরোইনের প্যাকেট এবং সাতটা ট্রাংক বোঝাই বেআইনি অস্ত্র পাওয়া গেল। হাওয়া মহল থেকে উদ্ধার করা হলো পনের জন বিভিন্ন বয়সী লোক ও সাতজন যুবতীকে।
আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী সর্বানন্দ, তার ভাই কৃষ্ণানন্দ, রাধামাধব মন্দিরের প্রধান পুরোহিত,আইমা রুবিনা, নন্দিনীর মামিমা প্রমিলা ওরফে মঞ্জু দেবী সহ কয়েকজনকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হল চন্দনপুর থানায়।ওদের সাময়িকভাবে থানার লোহার গারদের পিছনে, ঠাঁই হল।
'হাওয়া মহল' থেকে যাদের উদ্ধার করা হলো তাদের অনেকেই খুব অসুস্থ ছিল। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা হল। 'হাওয়া মহল' থেকে যাদের উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের প্রত্যেকের গলায় কালো সুতোয় লাল রঙের চাকতি ঝুলছিল। সেই চাকতিতে ১, ২,৩,৪
এরকম নাম্বার লেখা ছিল। এই ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছিলেন না কেউ। অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরেও সর্বানন্দ বা কৃষ্ণানন্দ মুখ খুলছিলেন না।তখন নন্দিনীর মামিমা গরাদের পিছন থেকে বললেন,আমি জানি এর রহস্য।
মনোজ বাবু বলেন,আপনি যদি জানেন তো বলুন আমাদের।
মঞ্জু দেবী মাথা হেঁট করে বলেন, অনেক ভুল করেছি আমি । কিন্তু 'হাওয়া মহলে' বন্দী লোকগুলোর উপরে যা অত্যাচার করা হয়েছে,তা কোনদিন ভালো লাগেনি আমার।
মঞ্জুর কথা শুনে কৃষ্ণানন্দ জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকালেন তার দিকে।
মনোজ বাবু বলেন,জানেন তো বলুন তাড়াতাড়ি।
মঞ্জু দেবী চিৎকার করে উঠলেন,পিশাচ গাছ।গলায় ঝোলানো চাকতির নাম্বার দেখে বোঝা যায় যে কাকে কতবার ওই পিশাচ গাছের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রক্ত শুষে নিতে।
----কী বলছেন আপনি!
----- একদম ঠিক বলছি স্যার। আপনি কি ওই পিশাচ গাছটা দেখেছেন? অনেক লোকের রক্ত খেয়েছে ওই গাছ।
---- ওই গাছটার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে হবে।
---- যা হয় কিছু একটা করুন স্যার।
মঞ্জু দেবীর কথা শেষ হতে না হতেই একজন কনস্টেবল এসে বড়বাবুকে স্যালুট ঠুকে বলে, একজন বয়স্ক ভদ্রলোক এসেছেন এসপি সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে ।েএ
মনোজ বাবু বলেন, নাম জিজ্ঞাসা করেছ?
------ হ্যাঁ, নাম বললেন অরুণ চৌধুরী।
এসপি বললেন, অরুণ বাবু এসেছেন? যাও, ,শিগগিরই ওনাকে নিয়ে এসো ওখানে।
----- আমি এক্ষুনি যাচ্ছি স্যার।
মনোজ বাবু বলেন, অরুণ বাবু কে স্যার?
এস পি বলেন, অরুণ বাবু পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া ঝাড়খন্ডের একটা শহরে থাকেন। এক বিখ্যাত জমিদার বংশের উত্তরাধিকার বহন করছেন উনি । উনি নিজে মস্ত ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, নামকরা সমাজসেবী। অনেকগুলো অবৈতনিক স্কুল , গোটা দুয়েক দাতব্য চিকিৎসালয় চালান। দরিদ্র অসহায় মেয়েদের জন্য একটা আশ্রম চালান উনি। সেখানে মেয়েদের হাতের কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করানোর চেষ্টা করা হয়।
বছর দশেক আগে একটা ভয়ানক এক্সিডেন্টে ওঁর একমাত্র পুত্র এবং পুত্রবধূ মারা যায় । ওই দুর্ঘটনায় ওর একমাত্র নাতির জীবন কোনোক্রমে রক্ষা পায় । উনি নাতিটিকে বুকে আগলে বড় করেন।
মাস তিনেক আগে ওঁর একমাত্র নাতি বেঙ্গলে একটা বিয়েবাড়ীতে এটেন্ড করতে এসে মিসিং হয়ে গেছে।
এসপি সাহেবের কথা শেষ হতে না হতেই ঘরে ঢুকলেন দীর্ঘদেহী পলিতকেশ এক বৃদ্ধ।তিনি ঘরে ঢুকে বললেন, কাদের উদ্ধার করেছেন এসপি সাহেব?কোথায় তারা ? দয়া করে আমাকে নিয়ে চলুন ওদের কাছে।
------ ওদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে দিতে হয়েছে, বাকী কয়েকজনকে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
------কোথায়?আমি এক্ষুনি যাব সেখানে।
------- আসুন আমার সঙ্গে। বড়বাবু বলেন।
ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে যান। কয়েক মিনিট পরে একটি সুদর্শন যুবক কে প্রায় বুকে জড়িয়ে ঘরে ঢোকেন বৃদ্ধ অরুণ বাবু। হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে অরুণ বাবু এসপির উদ্দেশ্যে বলেন,আমি আপনার কাছে চির ঋণী হয়ে রইলাম এসপি সাহেব। আপনার জন্য আমার নাতিকে ফেরত পেলাম আমি।
এসপি সাহেব বললেন, না অরুণ বাবু, এই কৃতিত্ব আমার নয়।
----- তাহলে কার?
একটু দূরে একটা চেয়ারে বসে থাকা পলাশ কে দেখিয়ে এসপি সাহেব বললেন, সব কৃতিত্ব এই ইয়াং ম্যানের। নিজের জীবন বাজি রেখে ও এই বিরাট গ্যাংকে ধরিয়ে দিয়েছে, বাঁচিয়েছে অনেকগুলো প্রাণ।
---- কিরকম?
এসপি ওসিকে বলেন, তুমি সবটা ওঁকে খুলে বল
মনোজ।
------ আচ্ছা স্যার।
মনোজ সান্যাল পলাশের ভুল স্টেশনে নামা থেকে শুরু করে এক এক করে পুরো ঘটনাটা বলেন।ত্র সবটা শুনে বৃদ্ধ চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলেন পলাশকে। তারপর বললেন, তুমি তো স্কুলে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিলে?
----- হ্যাঁ স্যার।
------ আমি আমার মায়ের নামে একটা ফ্রী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল খুলবো ঠিক করেছি, আমার এলাকার গরিব ছেলে মেয়েদের জন্য।
তুমি কি ওই স্কুলের দায়িত্ব নেবে?
------মানে?
------ দেখো, আমি খুব বেশি মাইনে তোমায় দিতে পারব না। আমার বাড়িতে তোমার ফ্রী থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হবে আর মাসে হাজার দশেক টাকা দেবো তোমাকে। কি নেবে স্কুলের দায়িত্ব?
এই অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব শুনে পলাশের চোখে জল এসে যায়। সে কোনমতে ঘাড় কাত করে বলে, নেব স্যার,আমি আপনার স্কুলের দায়িত্ব নেব।,
এসপি সাহেব বললেন,বাঃ! তবে একটা কথা বলি অরুণ বাবু, পলাশ সাহস ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যে কাজটা করেছে তার জন্য আশা করি পুলিশ পদক তো ও পাবেই। আমি আরো চেষ্টা করব যাতে আমার ডিপার্টমেন্টে ওকে সহকর্মী হিসেবে পাই।
------সে এসপি সাহেব,আপনি চেষ্টা করুন, তদ্দিন পলাশ আমার স্কুল টা দাঁড় করিয়ে দিক তো।
এই সমস্ত আলোচনা শুনে নন্দিনী মার কাঁধে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে ফেলে । আনন্দে ,স্বপ্ন পূরণের আশায়,ভালোবাসায়।
ঠিক সেই সময় একটু দূরে লোহার গরাদের আড়ালে আরো একজন কাঁদছিল। সে নন্দিনীর মামিমা ,মঞ্জু দেবী। অনুতাপ আর অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছিলো সে।
(শেষ)
ConversionConversion EmoticonEmoticon