ভুল স্টেশনে নেমে
সমীরণ সরকার
(৫০ তম পর্ব)
নন্দিনী যখন চাবি দিয়ে মূল মন্দিরের তলায় আন্ডার গ্রাউন্ড ঘরের দরজাটা খুলছিল, তখন ভাবতেও পারেনি যে কি বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে ওর জন্য। খুব সন্তর্পনে দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নাম ছিল নন্দিনী। আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরের এক কোণ থেকে হালকা আলোর আভা ভেসে আসছিল। কিন্তু সেই আলোতে সিঁড়িগুলো ভালো দেখা যাচ্ছিল না। নন্দিনী বিস্মিত হলো। আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে তো কেউ থাকেনা। তাহলে আলো জ্বলছে কেন? নন্দিনী জানে, আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে বিভিন্ন রকম মালপত্র থাকে। তবে কি একটু আগে যারা গাড়ি থেকে বাক্সগুলো নামিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে রাখতে এসেছিল তারা কি আলো নেভাতে ভুলে গেছে?
নন্দিনীর পিছনে নরেশকে কাঁধে নিয়ে আসছিল পলাশ ।সিঁড়ির ধাপ অনুমান করে খুব ধীরে ধীরে পা ফেলে নিচে নামছিল সে। নিচে নামার আগে আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে ঢোকার দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়েছে পলাশ, যাতে হঠাৎ কেউ এদিকে এলেও কোন রকম সন্দেহ করতে না পারে। vul stationa neme
এক সময় সিঁড়ি শেষ হয়ে যায়। ওরা আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরের মেঝেতে এসে দাঁড়ায়। এবার আলোর উৎস লক্ষ্য করে নন্দিনী এগিয়ে চলে। আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরটা বিশাল বড়। ঘরের এদিক ওদিক করে অনেক রকম মালপত্র রাখা আছে। নন্দিনী দূর থেকে দেখে, ঘরের একটা কোনায় একটা ছোট্ট হলদেটে বৈদ্যুতিক ল্যাম্প জ্বলছে । খুব কম পাওয়ারের। কিন্তু ঠিক তার নিচেই মনে হচ্ছে চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে কেউ। এটা কি করে সম্ভব? দরজায় তালা লাগানো আর ভিতরে মানুষ? তবে কি ওরা এখানে কাউকে বন্দি করে রেখেছে? কাকে? তবে কি.........? [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
একরকম প্রায় দৌড়ে নন্দিনী আলোর দিকে যায়। নন্দিনীকে ওইভাবে দৌড়াতে দেখে পলাশ বিস্মিত হয়। পরমুহূর্তে ঘরের মেঝেতে চাদর ঢাকা দিয়ে শুয়ে থাকা দুটো মানুষের অস্তিত্ব দেখতে পেয়ে তার মনেও আশার আলো জাগে। সে তাড়াতাড়ি অচৈতন্য নরেশের দেহটা ঘরের মেঝেতে নামিয়ে দিয়ে নন্দিনীকে অনুসরণ করে। শুয়ে থাকা মানুষদের কাছে এসে নন্দিনী কেমন যেন থমকে দাঁড়ায়। আশা-নিরাশার দ্বন্দ্বে দুলে ওঠে তার মন। একবার ভাবে একটানে চাদর দুটো খুলে সরিয়ে দেখে যে কে শুয়ে আছে সেখানে। পরমুহুর্তেই তার মনে হয় যে, যদি তার অনুমান মিথ্যা হয়? যদি সে যা ভাবছ তা সত্যি না হয়?
পলাশ নন্দিনীর পাশে গিয়ে চুপি চুপি বলে, কিরে, দাঁড়িয়ে গেলি কেন? চাদর সরিয়ে দেখ কে শুয়ে আছে। নন্দিনী সজোরে মাথা নেড়ে বলে ,আমি পারবো না। যদি অন্য কেউ হয় তো? পলাশ বলে, বেশ আমি দেখছি। পলাশ ধীরে ধীরে একটা চাদর সামান্য সরাতেই নিদ্রাজড়িত পুরুষ কন্ঠ শোনা গেল, এত রাতে আবার বিরক্ত করছো কেন? আমাদের কি শান্তিতে ঘুমাতেও দেবে না?vul stationa neme
পুরুষ কণ্ঠটি নিদ্রা জড়িত হলেও নন্দিনী ততক্ষনে তার বিশু মামার গলা চিনতে পেরেছে। তাই আর অপেক্ষা না করে সে একটানে চাদরটা সরিয়ে দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে বলে, আর ভয় নেই বিশু মামা ,আমরা এসে গেছি। নন্দিনীর বিশু মামা নন্দিনীর গলা শুনতে পেয়ে প্রথমে ভাবেন যে তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ততক্ষণে নন্দিনী বিশু মামার পাশে শুয়ে থাকা মানুষটির গায়ের চাদর সরিয়ে দিয়ে তার মাকে আবিষ্কার করে ফেলেছে। নন্দিনীর মা অন্নপূর্ণা দেবী ও বিশু মামা ধড়মড় করে উঠে বসে নন্দিনী ও পলাশ কে দেখে চরম বিস্ময়ে যেন বাক্যহারা হয়ে যান। নন্দিনীর মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন নিঃশব্দে। পলাশ বলে ,কাকিমা, চিনতে পারছেন আমাকে? অন্নপূর্ণা দেবী বলেন, তুমিতো পলাশ। তোমাকে চিনতে পারব না! তুমি এখানে কি করে এলে বাবা,? তোমরা আমাদের খোঁজ পেলে কি করে,?
------ সেসব কথা পরে শুনবেন। আপাতত আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। তবে তার আগে একটা কাজ আছে। vul stationa neme
নন্দিনী বলে, কি কাজ ?
পলাশ নন্দিনীর কথার জবাব না দিয়ে অন্নপূর্ণা দেবী কে বলে, একটু আগে এখানে কয়েকটা বাক্স নিয়ে আসা হয়েছে। আপনারা কি বলতে পারবেন কাকিমা, সেগুলো কোথায় আছে? [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
বিশুমামা নন্দিনী আর পলাশকে দেখে কিছুক্ষণ আগের ভয় জড়তা ইত্যাদি কাটিয়ে দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। তিনি বললেন, আমি দেখেছি। তোমরা এসো আমার সঙ্গে, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।vul stationa neme
বিশু মামা উঠে এগিয়ে যান সামনের দিকে, পিছনে পলাশ। আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরের সিঁড়ি দিয়ে নেমে ওরা বাঁ পাশে ছিল। বিশু মামা পলাশ কে নিয়ে সিঁড়ির ডান দিকে গেলেন। তারপর দেয়ালের পাশে রাখা কতগুলো বাক্স কে দেখিয়ে দিলেন। বাক্সগুলোর রঙ সাদা। পলাশ চিনতে পারল বাক্স গুলোকে। একটু আগে এগুলো নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে রেখেছিল লোক গুলো। কিন্তু সব বাক্সগুলোর গায়ে তো তালা ঝুলছে। তালা না খুললে ভিতরে কি আছে জানা যাবে কি করে?
বিশু মামাকে সে কথা বলতেই উনি বললেন, চিন্তা নেই, আমি তালা খোলার ব্যবস্থা করছি ।
----- কিভাবে?
------যাও নন্দিনীর কাছ থেকে বা ওর মায়ের কাছ থেকে একটা চুলের কাঁটা নিয়ে এসো। [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
পলাশ নন্দিনীর মায়ের কাছ থেকে একটা মাথার চুলের কাঁটা নিয়ে দ্রুত ফিরে এলো। আর সেই কাঁটাটা বাক্সের গায়ে তালার মধ্যে ঢুকিয়ে এদিক ওদিক করে মিনিট দুয়েকের মধ্যেই বাক্সের তালাটা খুলে ফেললেন বিশু মামা । পলাশ নন্দিনীর ঘরে বসেই মোবাইলটা চার্জ করে নিয়েছিল। তাই ও এখন ওটা পকেট থেকে বের করে মোবাইল -টর্চটা জ্বালিয়ে ফেলল। আর সেই আলোতে দেখতে পেল, বাক্সের ভিতর ছোট ছোট প্যাকেটে সাদা পাউডার মত কী ভরা আছে ।পলাশ একটা প্যাকেট তুলে গন্ধ শুঁকে বলল, সম্ভবত এগুলোতে নেশার দ্রব্য আছে।vul stationa neme
আরো দুই একটা প্যাকেট দেখার পর ও বাক্সের ডালা বন্ধ করে বাক্স টা নীচে মেঝেতে নামিয়ে রাখল। ওই বাক্সের নিচের বাক্সটা অপেক্ষাকৃত একটু বড়। তালাটাও বেশ মোটা। কিন্তু পলাশ অবাক হয়ে দেখল, বিশু মামা সামান্য চেষ্টা করে সেই তালাটা ও খুলে ফেলল। ওই বাক্সটার ডালা খুলে পলাশ দেখলো ,বাক্সের ভিতর ছোট ও মাঝারি সাইজের অনেকগুলো আগ্নেয়াস্ত্র আছে। সম্ভবত বিদেশ তৈরি। বাক্সের ডালা আবার বন্ধ করে আগের মতো করে রেখে দিল পলাশ। তালা দুটো ঢুকিয়ে ধ্যধ্যদ্ধ দিলো বাক্সের ভিতরে। এবার পলাশ বিশু মামা কে সঙ্গে নিয়ে
নন্দিনী দের কাছে ফিরে এলো।
নন্দিনী বলল, এবার আমাদের এখান দ্ধ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতে হবে পলাশদা।
পলাশ বলল, তার আগে আমি কাকিমার কাছে দুটো প্রশ্নের উত্তর চাই।
-----কী?
------ কাকিমা, ওরা আপনাদের এভাবে বন্দী করল কেন,?
- বিশু মামা বললেন, কারন আমি আর দিদি 'হাওয়া মহল' এর রহস্য আর 'পিশাচ গাছে'র কথা জেনে গেছিলাম।vul stationa neme
------ পিশাচ গাছ!
অন্নপূর্ণা দেবী বললেন, সে এক বীভৎস ব্যাপার!
----কিরকম?
-------- তান্ত্রিক কৃষ্ণনন্দের নেপালি গুরুদেব কৃষ্ণানন্দকে একটাল্ল গাছের চারা দিয়েছেন। সে এক অদ্ভুত গাছ! [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
পলাশ বলল, গাছটার পাতাগুলো লাল আর পাতাগুলোর আগার দিকটা ক্রমশ সরু হয়ে পাকানো স্প্রিংয়ের মতো দোলে। গাছটা ফুট চার পাঁচ লম্বা। ওর গুড়ির রংটা একটু কালো রংয়ের জমাট বাঁধা রক্তের মত। গাছটার সামনে কয়েকজন গোল হয়ে বসে আছে।
পলাশ যেন একটা ঘোরের মধ্যে কথাগুলো বলে যাচ্ছিল আর নন্দিনীর মা তার মুখের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন। পলাশ থামতেই তিনি বললেন, তুমি এসব কি করে জানলে বাবা পলাশ?
পলাশ উত্তর দিল, জানিনাতো ,আমি স্বপ্নে দেখেছি।
------ আশ্চর্য! একদম ঠিক দেখেছো তুমি। তুমি কি জানো ওই গাছটা কি খেয়ে বেঁচে থাকে? [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন ]
----না,কাকীমা।
-----আমি জানি। মানুষের রক্ত খেয়ে ওই গাছটা আস্তে আস্তে বড় হয়।
------ কী বলছো মা! নন্দিনী বিস্ময়ে চমকে উঠে বলে।
অন্নপূর্ণা দেবী বলেন, হ্যাঁ, তোরা যে লোকগুলো কে ধরে নিয়ে আসিস তাদের বন্ধ করে রাখা হয় হাওয়া মহলে। তারপর নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ওই পিশাচ গাছের কাছে।vul stationa neme
ওই গাছকে ওরা দেবতা জ্ঞান করে পুজো করে। আর তার সামনে ওরা হাতজোড় করে বসে। অসহায় মানুষটিকে গাছের সামনে নামিয়ে দিলে গাছের পাতার স্প্রিংয়ের মতো ঝুলতে থাকা ডগাগুলো মানুষ টাকে জড়িয়ে ধরে তার রক্ত শোষণ করতে থাকে। গাছটাতে কোন জল লাগে না ।প্রতি সপ্তাহের শনিবারে লাগে মানুষের রক্ত। আর সেই রক্ত খেয়ে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে গাছটা। এভাবে বারোটা বছর কেটে গেলে কোন এক আমাবস্যা রাতে গাছে ফুটবে একটা অদ্ভুত লাল রঙের ফুল। আর সেই ফুলটা পাওয়ার আশাতেই এসমস্ত করে চলেছে তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ।
---- কিন্তু কেন মা ?কি হবে ওই ফুল দিয়ে?
------ ওই ফুল যার কাছে থাকবে ,সে হবে অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। ওই ফুল নাকি তাকে করে তুলবে ধনকুবের।
(চলবে)
ConversionConversion EmoticonEmoticon