dharabahik uponyas vul station a neme 43th episode

     
dharabahik_uponyas_vul_station_a_neme_43th_episode

  

 ভুল স্টেশনে নেমে 

সমীরণ সরকার

(৪৩ তম পর্ব)


----- বাদ দে ওসব। তারপরে কি হলো সেটা বল। তোর বিশু মামা কি মামীমাকে স্বামী কৃষ্ণানন্দের আশ্রমে যাওয়ার জন্য অনুমতি দিয়েছিল? ---------------ওটাকে ঠিক অনুমতি বলবো না, বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছিল।
--- মানে?
---- স্বামী কৃষ্ণানন্দ চলে যাওয়ার পর সারাদিন মামীমা কিছু খায়নি। এমনকি মা জোর করে শরবত খাওয়াতে গেছিল বলে মাকে যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান করেছিল। দুপুরে বিশু মামা দোকান থেকে ফিরে এসে সব শুনে মামীমাকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো ।মামীমা বিশু মামার কথায় কর্ণপাত করলো না। বিশুমামা ও একরকম প্রায় না খেয়েই আবার দোকানে চলে গেল।
--- তোরা কি করলি?
--- এই অশান্তির মধ্যে আমি আর মা কি করে খাই বলতো?
--- তারপর ?
---দোকান বন্ধ করে রাত্রিবেলা বাড়ি ফিরল বিশু মামা ।আবার মামীমা কে অনুরোধ করলো কিছু খেয়ে নেবার জন্য। মামীমার সেই এক কথা- যতক্ষণ না পর্যন্ত স্বামী কৃষ্ণানন্দের আশ্রমে গিয়ে দীক্ষা নেওয়ার অনুমতি পাচ্ছে, ততক্ষণ সে দাঁতে কুটোটি পর্যন্ত কাটবে না ।
শেষে মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে বিশু মামা অনুমতি দিলো এক শর্তে।
--- মামীমার সঙ্গে বিশু মামা ,মা আর আমিও যাব স্বামী কৃষ্ণানন্দের আশ্রমে। যদি সে অনুমতি পাওয়া যায়, তাহলে মামীমা স্বামী কৃষ্ণানন্দের আশ্রমে গিয়ে দীক্ষা নিতে পারে। দীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর মামীমাকে ফিরে আসতে হবে আমাদের সঙ্গে। মামীমা রাজি হল ।আবার খবর পাঠানো হলো মামীমার বাপের বাড়ির সেই 
কুলগুরু ভদ্রলোককে । তিনি স্বামী স্বরূপানন্দের আশ্রমে গেলেন এবং স্বামী কৃষ্ণানন্দ কে সব জানিয়ে তার অনুমতি পেলেন।  তিনি ফিরে এসে জানালেন , স্বামী কৃষ্ণানন্দ নাকি বলেছেন যে,একদিন নয়, দীক্ষার সমগ্র অনুষ্ঠানটি শেষ করতে তিন দিন সময় লাগবে ।
---দীক্ষা দিতে তিন দিন লাগবে কেন ?
----আমি ঠিক জানিনা ।তবে এখানে আসার পর আমাকে, বিশু মামাকে আর মাকে একটা ভালো ঘরে রেখে মামী মাকে যেন কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমাদের তিনজনকে যথেষ্ট খাতির যত্ন করা হচ্ছিল ।ভালো ভালো খাবার দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু মামিমার খবর পাচ্ছিলাম না। আমাদের পাশের ঘরে ছিলেন মামীমার বাপের বাড়ির সেই কুলগুরু ভদ্রলোক। তখন আমাকে ঘরে রেখে বিশু মামা আর মা পাশের ঘরে সেই ভদ্রলোকের কাছে গেলে তিনিও সঠিক খবর দিতে পারলেন না। তখন তিনজনে মিলে বাইরে বেরোলেন খবর আনতে।
-- তুই তখন একা ঘরে ছিলি ?vul station a neme  [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন]
---হ্যাঁ, ছিলাম। মা আমাকে বেরোতে নিষেধ করেছিল।
--- তারপর ?
---প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ওরা তিনজন ফিরে এল ‌।বিশুমামার মুখটা যেন রাগে থমথম করছিল ।মার মুখে চিন্তার ছাপ  ছিল।আর ওই কুলগুরু ভদ্রলোককে কেমন যেন হতভম্ব দেখাচ্ছিলো। ওরা তিনজনেই কথা বলতে বলতে কুলগুরু ভদ্রলোকের ঘরে ঢুকে গেল ।আমার কেমন যেন কৌতুহল হলো। ওই ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে কথা শোনার চেষ্টা করলাম। তখন শুনলাম যে, প্রথম দিন নাকি স্বামী কৃষ্ণানন্দ মামীমাকে চাল জল করে দীক্ষা দেবেন ।
-----কি বললি , চাল-জল করে দীক্ষা?
 ---হ্যাঁ ।
---কিন্তু চাল-জল করে তো বাউল মতে দীক্ষা দেওয়া হয় ।
---হ্যাঁ ,তাইতো। বিশু মামা আর মা বন্ধ ঘরের মধ্যে সেই কথাই বলেছিলেন কুলগুরু ভদ্রলোককে। উনি আমতা-আমতা করে বলেছিলেন, দেখুন আমি তো জানতাম যে স্বামী কৃষ্ণানন্দ তন্ত্র সাধনা করেন ।কিন্তু ইদানিং যে উনি বাউল মত সাধনা করছেন এটা আমার জানা ছিল না ।বিশ্বাস করুন ,আমি জানতাম না।
--- সব্বনাশ হয়েছে!
---- মানে?
---- আমার তো মনে হয় বাউল পন্থায় সাধনা করা স্বামী কৃষ্ণানন্দ তোর মামীমাকে সাধনসঙ্গিনী করেছে।
--- দাঁড়াও দাঁড়াও, বাউল সাধনা তে যে vul station a neme  [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন]
চাল -জল করে দীক্ষা দেওয়া হয় এটা তুমি জানলে কি করে ?
---দ্যাখ, শুধু চাল- জল করে দীক্ষা দেওয়া নয়।  হঠ যোগের কিছু সাধনা রূপান্তরিত হয়ে বেঁচে আছে বাউল সমাজে ,যা বেশ গোপনীয় সাধনা। ---তুমি এতকিছু জানলে কি করে ?
---আমি একবার আমার এক বন্ধুর সঙ্গে জয়দেব -কেন্দুলি বেড়াতে গেছিলাম। প্রায় পনেরো দিন ছিলাম এক বাউল আশ্রমে। সেখানেই অনেক কিছু জেনেছিলাম। জেনেছিলাম ,বাউল সাধনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে আরো অনেক গোপন সাধনা। উপযুক্ত শিষ্য বা শিষ্যা পেলে গুরু সমস্ত সাধনা শেখান।
 চার -চন্দ্র -ভেদ বাউল সাধনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। "এ তত্ত্ব জানে যে জগতে উত্তম সে
 চার চন্দ্র রোহিনী ভেদে যমে করে মাথা হেঁট।"

(চলবে)






Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন