ধারাবাহিক উপন্যাস
ভুল স্টেশনে নেমে
(৪০ তম পর্ব)
সমীরণ সরকার
---কি হল তারপর?
---- কি আর হবে, প্রচণ্ড রেগে গেল মামিমা। আমাকে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগলো। আমি 'আমার বাবাকে খেয়েছি', এখন নাকি 'মামার সর্বনাশ করার জন্য এই বাড়িতে এসেছি ' , স্কুল থেকে ফিরে আমি নাকি 'কোথাও ফস্টিনস্টি করতে গেছিলাম ', আমার নাকি 'স্বভাব চরিত্রের ঠিক নেই 'ইত্যাদি নানা কথা গলগল করে ভলে চললো।
চুপ করে শুনছিলাম সব। কিন্তু মামিমা হঠাৎ বলে বসল যে, আমি নাকি আমার বাবার মত হয়েছি।তারও নাকি চরিত্রের ঠিক ছিল না।তাই সে বাড়ির অমতে আমার মায়ের মত একটা বাজে মেয়েকে বিয়ে করেছিল ।
এটা শোনার পরে আর চুপ করে থাকতে পারিনি আমি ।শরীরের সমস্ত জোর গলায় এনে চিৎকার করে উঠেছিলাম, খবরদার মামিমা !আমার মা -বাবা সম্পর্কে একটাও খারাপ কথা বলবে না তুমি।
আমার চিৎকার শুনে মামিমা প্রথমটা ঘাবড়ে গেলেও পড়ে রে রে করে তেড়ে এসে বললো, কি, আমাকে খবরদার করছিস! এত সাহস তোর? আমার খাবি আমার পরবি আর আমাকে চোখ রাঙাবি!
আমি বলে ফেললাম, আমরা তোমারটা খাই না বা পরিনা মামী।আমাদের মুখে অন্ন জোগায় আমার মামা ।
---কি, যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা ! কথা শেষ করেই মামিমা আমার গালে সশব্দে চড় মারলো একটা ।
ঠিক সেই মুহূর্তেই বাড়িতে প্রবেশ করলো বিশু মামা। প্রচণ্ড রেগে গেল বিশুমামা।
মামিমা দ্বিতীয়বার চড় মারার জন্য হাত তুলতেই বিশু মামা ছুটে এসে হাত ধরল মামিমার। চিৎকার করে বলল, খবরদার বলছি মঞ্জু ,আজ যা করলে, তার ক্ষমা নেই।তবে এরপর কোনদিন যদি আমার ভাগ্নির গায়ে হাত তোল, তবে সেই দিনই হবে এ বাড়িতে তোমার শেষ দিন! vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
মামীমা ঝাঁঝিয়ে উঠলো, কি, পরের মেয়ের জন্য আমাকে এত বড় কথা বললে তুমি!আমি পঞ্চায়েতে যাব, থানায় যাব, নালিশ করব তোমার নামে ।
বিশু মামা শান্ত গলায় বলল, তোমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও মঞ্জু ।তবে আমি একটা কথা বলে রাখি শোনো, বিনা কারণে এই বাড়ির উঠোন পেরিয়ে বাইরে গেলে ,ঐ আমি আর কোনদিন তোমাকে ঘরে ফিরতে দেবনা। তাতে আমার যা হওয়ার হোক। এমনিতেই বন্ধু বান্ধব রা আমাকে বহুদিন বলেছে ....
--- কি বলেছে তোমার বন্ধুরা?vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
--- থাক, সে কথা আমি এখানে বলতে চাই না !---------আমি জানি, আমি জানি !আমি সব জানি।আমি মা হতে পারিনি বলে তোমাকে আবার বিয়ে করতে বলেছে ।
বিশু মামা সেই কথার কোন জবাব না দিয়ে বলল ,আমি দরজার বাইরে থেকে তোমার সব কথা শুনেছি মঞ্জু। তুমি তো মেয়েটাকে শুধু শুধু দোষারোপ করছিলে। তুমি জানো কোথায় গেছিল ও ?স্কুলের পরে হেডমাস্টার মশায়ের বাড়িতে গেছিল প্রাইভেট টিউশনি পড়ার ব্যবস্থা করতে।
--- হুঁ, তা তো করবেই। মামার পয়সা ধ্বংস করতে হবে না !
---আবার ভুল বলছো তুমি। মামার পয়সা যাতে খরচা না হয় ,তাই ও হেডমাস্টার মশাইকে অনুরোধ করে বিনি পয়সায় টিউশনি পড়ার ব্যবস্থা করে এসেছে।
--- সব মিথ্যা কথা !vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
---সেটা আমি বুঝব। তোমাকে যেটা বললাম, ,সেটা খেয়াল রেখো। আর কোনদিন যেন আমার দিদি বা ভাগনির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে তোমাকে না দেখি।
বিশু মামার শেষ কথাটা শুনে মামী ধুপ ধাপ শব্দ করে দ্রুত পা ফেলে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল ।
----তারপর ?
---তারপর ছোটখাটো টুকটাক ঝামেলা হলেও মামিমা কোন বড়োসড়ো অশান্তি আর করেনি ।আমি ফার্স্ট ডিভিশনে হায়ার সেকেন্ডারি পাস করে স্থানীয় কলেজে ইংলিশ অনার্স নিয়ে ভর্তি হলাম ।
--- তারপর সেই তোর মামিমার ভাই ত্রিপুরা থেকে কবে এলো? পলাশ জিজ্ঞাসা করে ।
হো করে হেসে ওঠে নন্দিনী ।
পলাশ অবাক হয়ে বলে ,হাসছিস কেন !স্টেশনে বসে তুই তো বললি ,তোর মামিমার ভাইয়ের কথা ।
---ওটা ছিল একটা বড়োসড়ো সেন্টু ঢপ!vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
---- মানে?
--- একটা যুবতী মেয়ের মুখে ওই ধরনের কথা শুনলে যে কোন পুরুষের বুকের ভেতর সেন্টিমেন্টের পারাটা চড়চড় করে উপরে উঠে ।কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে পুরুষের বুকের ভেতরে ।তাই শিকার ধরতে গেলে ওরকম অনেক গল্প বানিয়ে বানিয়ে বলতে হয়। -------+----------তার মানে ওটা মিথ্যা কথা বলেছিলি ?
----টু হান্ড্রেড পার্সেন্ট!
--- এখানে এই আশ্রমে তোরা কি করে এলি?
--- সে আরেক গল্প ।
---সত্যি না মিথ্যে?vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
--- দেখো, আগে তোমার পরিচয় না জেনে একটা গল্প বানিয়ে বলেছিলাম। কিন্তু এখন তো তা নয় ।
নন্দিনী পলাশের হাতের উপর নিজের হাত রেখে ঈষৎ চাপ দিয়ে বলে, এখন তুমিই তো ভরসা পলাশদা। তুমি ছাড়া এই চক্রব্যূহ থেকে আমি , মা বা বিশুমামা কেউ বের হতে পারব না ।
পলাশ দুই হাতে নন্দিনীর মাথা নিজের দিকে স্বল্প ঝুঁকিয়ে ওর কপালে আলতো চুম্বন করে বলে ,আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো রে,কথা দিচ্ছি। তবে তার আগে আরো কিছু জানা দরকার আমার ।
---কি জানতে চাও বলো?
(চলবে)
****************************** *******
ConversionConversion EmoticonEmoticon