best romantic bengli dharabahik uponyas episode 38th

 
best_romantic_bengli_dharabahik_uponyas_episode_38th

ভুল স্টেশনে নেমে

সমীরণ  সরকার

(পর্ব--৩৮) 

কথা বলতে বলতে হঠাৎ থেমে যায় নন্দিনী। পলাশ বলে,
 কি হল, চুপ করে গেলি কেন ?তারপরে কি হল বল ?
-------বলছি।আসলে মায়ের কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো গো। কতদিন দেখিনি মা কে। মা কোথায় আছে ,কেমন আছে, কিছুই তো   জানিনা।
            মায়ের কথা বলতে বলতে হঠাৎ কেঁদে ফেলে নন্দিনী। বুকের সাগর ছেঁচা অশ্রু মুক্তা গড়িয়ে পড়ে কপোল বেয়ে ।পলাশ নন্দিনীর একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে ঈষৎ চাপ দিয়ে  বলে, আমি বলছি তোকে, কাকিমার কিচ্ছু হবে না ।আমি উদ্ধার করবোই কাকিমাকে। কিন্তু তার আগে পুরো ঘটনাটা আমার জানা দরকার। তুই যত টুকু জানিস, পুরোটা খুলে বল আমায়। হয়তো কোনো ক্লু পেতে পারি সেখান থেকে। vul station a neme [পুর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
                একটু সময় চুপ করে থেকে নন্দিনী আবার বলতে শুরু করে, সংসারের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব মা নিজের ঘাড়ে তুলে নেওয়ায় মামীমা খুশি ছিল ।কিন্তু সমস্যাটা বাঁধলো মামা আমাকে কুমারপুর হাই স্কুলে ক্লাস ইলেভেনে ভর্তি করার ইচ্ছে প্রকাশ করায়। সেদিনটা ছিল বৃহস্পতিবার ।মামার দোকান বন্ধ ছিল।
    সকালবেলায় জল খাবার খেতে বসে মামা হঠাৎ মাকে বলল, "কিরে অন্নপূর্ণা ,তোর মেয়েকে দিয়ে শুধু ঘর সংসারের কাজ করাবি ,লেখাপড়া শেখাবি না?" 
----ওর বাবার ও তো খুব ইচ্ছে ছিল ,মেয়েকে উচ্চশক্ষিত করার ।কিন্তু সে নিজেই তো হঠাৎ আমাদের ছেড়ে ........!
কথা বলতে বলতে  ডুকরে কেঁদে  উঠলো মা। আঁচল চাপা দিল চোখে।
     বিশুমামা মাকে ধমক দিয়ে বলে, "ফের ওসব কথা বলছিস .?কতবার  না তোকে বলেছি, আমি যতদিন বেঁচে আছি তোদের কোনো অসুবিধা হতে দেব না। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, হরেন বেঁচে থাকলে তার মেয়ের জন্য যা করতে পারতো ,ততটা হয়তো আমি করতে পারবনা ।ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই আমার।আসলে আমার ব্যবসা তো কোন রকমে টুংটাং করে চলে। এই কুমারপুর গ্রামে আরো তিনটে দোকান আছে আমার দোকানের মত। বাপ পিতামহের রেখে যাওয়া চাষের জমি, পুকুর এসব ছিল বলে কোন রকমে দিন চলে যায়।  তোর মেয়ের তো মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করেছিল ।স্কুলে ভর্তি হলে অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পাশটা করতে পারত। ইদানিং তো মেয়েদের লেখাপড়া করার জন্য সরকার থেকে নানারকম সুবিধা সুযোগ vul station a neme [পুর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
দিচ্ছে ।"
মা আপত্তি করে বলেছিল, "না না , ওসবের কোন দরকার নেই দাদা।তোমার দয়ায় মাথা গোঁজার ঠাঁই আর চারবেলা পেটপুরে খেতে পাচ্ছি ,এই ঢের। যদি পারো তো একটা সাধারণ ঘরের ভালো ছেলে দেখে, ,মেয়েটার বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও দাদা !"
------কি বলছিস তুই অন্নপূর্ণা, এত অল্প বয়সে বিয়ে দিবি মেয়ের?
------ তা ছাড়া আর উপায় কী বল।যার যেমন কপাল !vul station a neme  [পুর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
-----খবরদার বলছি ,ওসব কপাল টপাল বলবিনা। মানুষকে নিজের ভাগ্য নিজে তৈরি করতে হয় ।কে বলতে পারে যে ,আমাদের নন্দিনী মা একদিন লেখাপড়া শিখে  ভালো চাকরি করবে না ।আর সেদিনই ওর বাবার স্বপ্ন সফল হবে।  আমি কালকেই নন্দিনীকে নিয়ে কুমারপুর হাই স্কুলের হেডমাস্টার মশায়ের বাড়িতে যাব ।পুরো ঘটনাটা  বলবো ওনাকে। মাধ্যমিক পাস করার পর কেন এতদিন লেখাপড়ায় ছেদ পড়েছে ,তার কারণটাও জানাবো। উনি বিচক্ষণ এবং ছাত্র দরদী।
 আশা করি ,উনি নন্দিনী মাকে ঠিক ভর্তি করে নেবেন ক্লাস ইলেভেনে।
-------কি বললে? কে স্কুলে ভর্তি হবে?
      মামীমা স্নান সেরে  ভিজে কাপড়ে বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বললো কথাটা।vul station a neme [পুর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
-ঘরে কুয়ো, টিউবওয়েল এসব থাকা সত্ত্বেও সকালবেলায় নদীতে স্নান করতে যেত মামিমা। এটা নাকি মামীর অনেক দিনের অভ্যাস ।নদীর শীতল জলে স্নান না করলে নাকি মামীর শরীরে জ্বালা কমে না। 
   সেই মামীমা বাড়ির উঠোনের তারে কাপড় মেলে দিতে দিতে বলল, " কিছুতেই না, ওই মেয়েকে আমি স্কুলে ভর্তি হতে দেবো না!এই সাফ কথা বলে দিলাম "।
বিশু মামা প্রথমটায় নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলো মামীমাকে। কিন্তু মামীমা  যেন ধনুর্ভাঙ্গা পণ করেছিলেন যে ,তিনি কিছুতেই বুঝবেন না ।হঠাৎ বিশু মামা প্রচন্ড রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো,  "কারুর কোন কথা শুনবো না, ,নন্দিনীকে আমি স্কুলে ভর্তি করব ,করব, করবই!vul station a neme [পুর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
 বিশু মামা কে এতটা রেগে যেতে বা এত জোরে কথা বলতে আমি কখনো শুনিনি ।
    পরদিন সকালেই আমাকে সঙ্গে নিয়ে কুমার পুর হাই স্কুলের হেডমাস্টার মশাইয়ের বাড়িতে গেল বিশু মামা। কুমারপুর হাইস্কুলর হেড মাস্টার মশাই খুব রাশভারী লোক। বিশু মামা  মনের ইচ্ছে খুলে বলল তাঁকে। 
    ইতোমধ্যে আমি তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছি। তিনি আশীর্বাদ ও করেছেন আমায় । বিশুমামার মুখে সবটা শোনার পরে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন তিনি।কি যেন ভাবলেন তারপর আমার নাম জানতে চাইলেন।নাম  বলতেই  বললেন,"বাঃ! রক্তকরবীর নন্দিনী।খুব ভালো নাম। "         
   এরপর তিনি ইতিহাস আর ভূগোল থেকে কয়েকটা ছোট ছোট প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তর গুলো আমার জানা ছিলো ।বলে দিলাম। খুব খুশি হলেন তিনি।vul station a neme [পুর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
  বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের জীবনে  যা যা ঘটেছে ,সবটাই খুলে বলল বিশুমামা। 
 তিনি ন দিয়ে  চুপ করে শুনলেন‌সবটা।তারপর মামাকে বললেন,
 তুমি কিচ্ছু চিন্তা করোনা বিশু, তোমার ভাগ্নির ভর্তির ব্যবস্থা আমি করে দেব।দরকার হ'লে জেলার সদরে গিয়ে ডি. আই .সাহেবের পারমিশন নিয়েও ভর্তি করব।
 বিশু মামা তো মহাখুশি।  ফেরার পথে  গ্রামের নবীন ময়রার দোকান থেকে এক হাঁড়ি রসগোল্লা কিনে বাড়ি ফিরলেন ।


(চলবে)


Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন