ভুল স্টেশনে নেমে
সমীণ সরকারর
( 37 পর্ব )
----তারপর?
----- তোমাকে তো আগেই বলেছি যে, আমার মা যখন খুব ছোট ছিল, তখন একটা মারাত্মক দুর্ঘটনায় আমার মায়ের মা ও বাবা একসাথে মারা যায়। তখন আমার মায়ের মাসি আমার মাকে তার কাছে নিয়ে যায়। আমার বিশু মামা মায়ের ওই মাসির একমাত্র ছেলে ।ছোট থেকেই পিঠাপিঠি ভাইবোন এর মতই বড় হয়েছে দুজনে। বিশু মামা মাকে নিজের বোন বলেই মানে। vul station a neme
বাবা মারা যাবার সময় হাসপাতালেই মায়ের ফোনটা হারিয়ে গেছিল। থানায় ডায়েরি করা হয়েছিল। কিন্তু মায়ের ফোন টা ফেরত পাওয়া যায়নি। মায়ের ফোনেই বিশু মামা সহ অনেক আত্মীয়-স্বজন এর ফোন নাম্বার লোড করা ছিল। কাজেই বাবা মারা যাওয়ার খবর টা মামাকে দিতে পারেনি মা ।আর তারপর ঠাকুরমা আমাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরে ওখান থেকে বেরোবার সুযোগ হয়নি। কাজেই বাবার মৃত্যু থেকে শুরু করে যে ঝড় আমাদের উপর দিয়ে বয়ে গেছিল, তার বিন্দু বিসর্গ জানতোনা বিশু মামা।
হঠাৎ কোনো খবর না দিয়েই উঠেছিলাম বিশু মামার বাড়িতে। মায়ের বিধবা বেশ দেখে খুব অবাক হয়ে গেল বিশু মামা । রেগে গেল খুব। রাগত স্বরে মাকে বলল ,এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল তোর জীবনে, অথচ আমি কোন খবর পেলাম না! এই তুই ভালোবাসিস আমাকে? vul station a neme [পুর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
মা নানাভাবে বিশু মামাকে বোঝানোর চেষ্টা করল ।তবু রাগ পড়ে না তার।
শেষে উপায়ান্তর না দেখে হাল ধরলাম আমি। বাবার আকস্মিক মৃত্যু, ঠাকুমার আদেশে কাকার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া, ঠাকুমার মৃত্যু এবং তারপরে কাকা ও কাকিমাদের দুর্ব্যবহারের কথা, সব একে একে বিশদে বললাম বিশু মামাকে। সব শুনে বিশু মামা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল থমথমে মুখে। বিশু মামার মনের ভিতরে কি চলছিল সেটা বোঝা যাচ্ছিল না বলে মা আর আমি দৃষ্টি বিনিময় করছিলাম। মনে মনে আশঙ্কা হচ্ছিল কোন কারণে যদি বিশু মামা আমাদের এখানে থাকতে না দেয়! কোথায় যাব আমরা ?
কিছুক্ষণ পরে বিশু মামা হঠাৎ বাবার নাম ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।
বিশু মামার কান্না দেখে মাও কেঁদে উঠলো সশব্দে ।আমার চোখে অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল বিশু মামার আকুল কান্না দেখে। কিছুক্ষণ পরে,কিছুটা সামলে উঠে বিশু মামা মাকে বলল,তোর দেওরদের নামে কেস করব আমি, তোকে আর তোর মেয়েকে জমির ভাগ না দিয়ে পার পেয়ে যাবে ভেবেছে?ছেড়ে দাও দাদা। আসল মানুষটাকে যখন ভগবান কেড়ে নিলেন সামান্য জমি দিয়ে আর কি হবে ?vul station a neme [পুর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
------শোন অন্নপূর্ণা, আজ থেকে তোর আর তোর মেয়ের ভার আমার। মনে রাখবি, তোর এই বিশুদাদা যতদিন বেঁচে থাকবে ,ততদিন বুকে আগলে রাখবে তোদের ।
মা বললো ,তোমার ভরসাতেই তো এখানে এসেছি দাদা ।আমাদের তো আর কেউ নেই ।-----------কিছু চিন্তা করিস না বোন, আমি আছি ।আমি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললাম, তুমি আজ দোকানে যাওনি মামা ?
বিশু মামা জবাব দিল, আজ বৃহস্পতিবার ।আজ আমাদের এখানে বাজার বন্ধ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, মামিমা কোথায়? তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না!
---- তোর মামীমা কি কাজে যেন পাশের বাড়িতে গেছে। একটু পরেই চলে আসবে।
বিশু মামার কথা শেষ হতে না হতেই প্রাচীরের দরজা খুলে, উঠোনে পা দিল মামিমা।
হঠাৎ আমাদের দেখে ভূত দেখার মত মুখ করে বলল, একি তোমরা হঠাৎ?
মা বলল ,হ্যাঁ বৌদি, এলাম। vul station a neme [পুর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
---- ও! তা ঠাকুর জামাই কে খেলে কবে? কিছু জানাওনি তো!
মা শান্তস্বরে জবাব দিল, না , হঠাৎ করে চলে গেলেন উনি। জানানোর সময় পাইনি।
----- তাই বুঝি দাদার ঘাড়ে এসে উঠলে?
ও ,তোমার তো আবার শ্বশুরবাড়িতেও যাওয়ার মুখ ও নেই ।
মা কিছু বলার আগে আমি বললাম, ঠাকুরমা আমাদের দেশের বাড়িতে নিয়ে গেছিল।
----- তো, সেখানে বুঝি মন টিকলো না বুঝি?
----ঠাকুরমা আর নেই গো মামিমা!
---- তা তোর তো দুটো কাকা ছিল! তারাও কি টেঁসে গেছে নাকি?
আমি কিছু বলার আগেই বিশু মামা বলল, এত কথায় কাজ কি? আমার বাড়িতে আমার বোন আর ভাগ্নি এসেছে, এত প্রশ্নের কি আছে?vul station a neme [পুর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন]
---- ও তার মানে স্বামী কে খেয়ে এখন তোমার ঘাড়ে চাপল ?
----ছি ছি প্রমিলা, এত নিষ্ঠুর তুমি! আমার বোনটা কিছুদিন আগে স্বামী হারিয়েছে, বাচ্চা মেয়েটা পিতৃহারা হয়েছে। তবুও তাদের জন্য মায়া নেই তোমার?
--- না, নেই!আর বোন বোন করো নাতো! তাও যদি নিজের মায়ের পেটের বোন হত তো বুঝতাম।
----- প্রমিলা!
---- আমাকে ধমকিও না। সেই তো গতর খাটিয়ে ওদের জন্য আমাকে রাঁধতে বাড়তে হবে!
মা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, না না বৌদি, আমাদের জন্য কিছু করতে হবে না তোমাকে। আমি তোমাকে সাহায্য করব।
------ আমাকে না করতে হলেই ভাল!
সেই শুরু। আস্তে আস্তে গোটা সংসারের সমস্ত কাজের দায়িত্ব চাপল মায়ের কাঁধে। মাকে সাহায্য করতাম আমি। যদিও তাতে খুবই আপত্তি করতো মা।
(চলবে)
ConversionConversion EmoticonEmoticon