dharabahik upnyas vul station a nem 35th episode

 
dharabahik_upnyas_vul_station_a_nem_35th_episode

ভুল স্টেশনে নেমে 

সমীরণ সরকার

ধারাবাহিক উপন্যাস --৩৫ তম পর্ব
নন্দিনী একটু সময় চুপ করে কি যেন চিন্তা করে। পলাশ যেন একটু বিরক্ত হয়। আর তা প্রকাশ পায় তার কথায় ।গলায় যথেষ্ট ঝাঁজ এনে বলে, তোর ব্যাপারটা কি বলতো? এতক্ষণ তো সাহায্য চাই, সাহায্য চাই বলে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলি,আর যেই একটা কথা যখন জানতে চাইলাম, অমনি  মুখে কুলুপ এঁটে দিলি! 
-----হ্যাঁ হ্যাঁ ,বলছি, দাঁড়াও ।
----মানে?
------একটু পরে তোমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। তার আগে আরো কিছু জানানো দরকার তোমাকে।
-----শুনি, কি জানাতে চাস তুই।
------ চন্দ্রশেখর রায়ের কাহিনী বলব আমি ।
 -------সে আবার কে?
------ ডাকসাইটে জমিদার রায়বাহাদুর  মহেন্দ্র প্রতাপ রায় এর একমাত্র ছেলে ।
      ব্রিটিশ রাজত্বে সাহেবদের খুব কাছের লোক ছিলেন মহেন্দ্র প্রতাপ। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে জমিদারি চালানোর পাশাপাশি নানা রকম ব্যবসা করতেন মহেন্দ্র প্রতাপ। প্রচুর অর্থ রোজগার করেছিলেন তিনি। সেই অর্থ দিয়ে প্রচুর সম্পত্তি কিনেছিলেন মহেন্দ্র প্রতাপ। সারাবছর নানারকম উৎসব অনুষ্ঠান লেগে থাকত তার বাড়ীতে।  সেই অনুষ্ঠানে দেশীয় বড়লোকদের সঙ্গে সাহেব সুবোরাও আসতেন। প্রত্যেক অতিথিকে নানারকম উপঢৌকন দিতেন মহেন্দ্র প্রতাপ। বিভিন্নভাবে সাহেবদের খুশি করে তিনি রায় বাহাদুর উপাধি লাভ করেছিলেন। অথচ জমিদার হিসেবে গরিব প্রজাদের জন্য কোনরকম সহানুভূতি বা মায়া দয়া ছিল না তাঁর।         
               এহেন মহেন্দ্র প্রতাপ এর একমাত্র পুত্র চন্দ্র শেখর রায়  ছোট থেকে নামী সাহেবি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এমনকি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিগ্রী টাও  নিয়েছেন বিদেশ থেকে। দেশে ফিরে সরকারি চাকরি নিলেন তিনি। মস্ত ধনী পরিবারে বিয়ে হলো তাঁর। চন্দ্রশেখর যেমন তার বাবার একমাত্র পুত্র ছিলেন ,ঠিক তেমনি চন্দ্রশেখর এর স্ত্রী মালবিকা তার বাবার একমাত্র মেয়ে ছিলেন ।এই চন্দ্র শেখর রায় হলেন শুভ্রকমল আর কৃষ্ণকমল এর বাবা।
----- মানে তোর সর্বানন্দ আর কৃষ্ণানন্দের    বাবা---তাইতো?[ভুল স্টেশনে নেমে ]
------ হ্যাঁ। চন্দ্রশেখর শিক্ষিত ছিলেন, ধনী ছিলেন, সুপুরুষ ছিলেন ।সমাজের উঁচু স্তরে যাতায়াত ছিল  ।অসংখ্য নারী বন্ধু ছিল তাঁর। কৃষ্ণমলের জন্মের কিছুদিন পরে হঠাৎ একদিন বাড়ীর ভিতরে সুইমিং পুলে স্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যান মালবিকা ।অথচ মালবিকা খুব ভালো সাঁতার জানতেন। ব্যাপারটা রহস্যজনক হলেও লোকাল থানার সঙ্গে চন্দ্রশেখর এর খুব ভালো সম্পর্ক থাকায় ব্যাপারটা নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া হয়নি।
 চন্দ্রশেখর ও মালবিকার জ্যেষ্ঠ সন্তান শুভ্রকমল তার মাতুলালয়ে বড় হয়েছে বৈষ্ণব ভাবধারায় ।
শুভ্রকমল সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত ।তিনি বিয়ে থা করেননি ।
         আগেই বলেছি যে ,চন্দ্রশেখর এর বাড়ির নেপালি  দারোয়ানের তরুণী বোন শিশু বয়স থেকে কৃষ্ণ কমল কে দেখাশোনা করেছে। ওই তরুণী রুবিনা কৃষ্ণ কমল এর ধাইমা বা 'আইমা'। রুবিনার সঙ্গে চন্দ্রশেখর এর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বলে শোনা যায়।
পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন  [ভুল স্টেশনে নেমে ]
            আইমার প্রশ্রয়ে ছোট থেকেই খুব দুর্দান্ত ছিল কৃষ্ণ কমল ।লেখাপড়ায় ক্ষেত্রে খুব ভালো ছিল সে।  ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় এক সহপাঠিনীর প্রেমে পড়ে কৃষ্ণ কমল ।সেই মেয়েটির প্রতি  আবার  আসক্ত ছিল তাদের অন্য এক ধনী সহপাঠী। মানে ত্রিকোণ প্রেম আর কি। শোনা যায় কৃষ্ণ কমল মেয়েটিকে পাওয়ার জন্য তার সহপাঠীকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে ।যদিও টাকার জোরে আর জোরালো প্রমাণের অভাবে কৃষ্ণ কমল এর মাত্র তিন বছর কারাবাস হয় ।জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর ওই আইমার সঙ্গে তাদের  বাড়ি নেপালের কোন এক গ্রামে বেড়াতে যায় কৃষ্ণ কমল। সেখানেই নাকি এক তান্ত্রিক গুরুর দেখা পায় সে ।শুরু হয় তন্ত্র সাধনা ।হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন চন্দ্রশেখর। কৃষ্ণ কমল ও শুভ্র কমল দুজনেই বাড়িতে ফিরে আসে।[ভুল স্টেশনে নেমে ]
       চন্দ্রশেখর মারা যান ।
------এটা কি তাহলে ওদের পৈত্রিক ভিটে, মানে চন্দ্র শেখর রায়ের বাড়ি?
----- না,, এটাকে ঠিক পৈত্রিক ভিটে বলা যায়না। তবে চন্দ্র শেখর রায়ের  শ্বশুরবাড়ি সম্পত্তি । চন্দ্র শেখর রায়ের পৈতৃক ভিটে ব্যান্ডেল এর কাছে । শুভ্র কমল রায় তার মামাবাড়ির সূত্রে প্রাপ্ত এই সম্পত্তিতে রাধামাধব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন ।শুভ্র কমল রায় মানে স্বামী সর্বানন্দ  তার ভাই কৃষ্ণ কমল কে খুব ভালোবাসেন। তাই চন্দ্র শেখর রায়ের মৃত্যুর পর কৃষ্ণ কমল যখন আবার সাধনার জন্য নেপাল চলে যেতে চেয়েছিল শুভ্র কমল তার ভাই কে আটকে দেয় আইমার সাহায্যে ।
------কিন্তু এর মধ্যে তোর বিশু মামা আর মামি মা  কি করে এলো ?
------বলছি ,সেই গল্পটা বলছি এবার।

(চলবে)
Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন