ভুল স্টেশনে নেমে
সমীরন সরকার
( ধারাবাহিক উপন্যাস/ পর্ব --30)
অনেক বছর আগে ভাঙ্গা মন্দিরে নন্দিনীকে আদর করতে করতে হঠাৎ মাঝপথে থেমে যেতে হয়েছিল পলাশকে, আকস্মিক অঘটনের কারণে। নন্দিনীকে নিয়ে ছুটতে হয়েছিল হাসপাতালে। তাই সেদিনের সেই আশাভঙ্গের বেদনাটুকু যেন আজ মুছে দিতে চায় নন্দিনী তার দুই ঠোঁট দিয়ে। ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে পরিতৃপ্ত করতে চায় তার দয়িতকে,মনের মানুষকে।
" আজি বিদ্যা মধুপূর্ণ অধর যুগলে।
চুম্বন করিল পান শৃঙ্গারের কালে ।।
কম্পিত প্রদীপ আভা বিনোদ বদনী।
গ্রহণান্ত চন্দ্র যেন মুখচন্দ্রখানি ।।"
.......( বিদ্যাসুন্দর/ ভারতচন্দ্র)
দুজনের বুকের ভিতরে লুকিয়ে থাকা দীর্ঘদিনের সুপ্ত বাসনা লাভাস্রোত এর মতো বেরিয়ে আসতে চাইছে দুর্নিবার গতিতে। বাধা বন্ধনহীন সেই স্রোতপ্রবাহ বোধহয় ভাসিয়ে নিয়ে যেত দুটি শরীরকে অনন্ত সুখসাগরে।
কিন্তু মহাকালের বোধহয় সেরকম ইচ্ছে ছিল না। তাই হঠাৎই ঘরের দেওয়ালের এক কোণে একটি লাল রঙের আলো দপ দপ করে জ্বলতে লাগলো। ভেসে এলো 'বিপ' 'বিপ' আওয়াজ কোন এক অদৃশ্য যন্ত্র থেকে। সেই আওয়াজ থামতেই ভারী পুরুষ কন্ঠ ভেসে এলো,' কলিং ফোর থ্রি টু.... কলিং ফোর থ্রি টু..........।
প্রায় ঝাঁপিয়ে পলাশের শরীরের উপর থেকে নেমে পড়ে নন্দিনী। অবিন্যস্ত পোশাক এবং চুল ঠিক করতে করতে বলে, আমাকে এক্ষুনি একবার যেতে হবে পলাশদা।
----- কোথায়?
------' আশ্রম মাতা'র ঘরে।
------ কি করে বুঝলি?
----- ওইযে লাল আলো টা জ্বলছে, দেখতে পেয়েছ?
--- হ্যাঁ।
----- আশ্রম মাতা কাউকে ডাকলে তার ঘরে ওই আলোটাই দপ দপ করে জ্বলে।
------ কিন্তু তোকে ডাকছে বুঝলি কি করে?
------ ফোর থ্রি টু আমার কোড নাম্বার।
------- মানে?
----- পরে বলব। টেবিলের উপরে তোমার খাবার ঢাকা আছে, খেয়ে নিও।
---- আচ্ছা।
----- স্নানটা সেরে নিও।
------ বেশ।
------- আমার একটু দেরি হতে পারে, চিন্তা কোরো না। ফিরে এসে একসঙ্গে লাঞ্চ করব।
----- একটা কথা আমাকে বলে যা নন্দিনি।
------ কি?
------- আমাকে এখানে নিয়ে এসে তুই কি কোনো বিপদে পড়েছিস?
------- বুঝতে পারছি না।
------ আমাকে তাহলে ধরে রেখেছিস কেন?
------- জানিনা।
-------- কি চাইছিস তুই ?
--------ফিরে এসে সব বলব।
দ্রুতগতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় নন্দিনী।
খুব খিদে পেয়েছে পলাশের। কিন্তু হাজারো একটা প্রশ্ন কিলবিল করছে মাথায়। ব্যাগ থেকে গামছা বের করে বাথরুমের দরজা খুললো পলাশ।
(চলবে)
ConversionConversion EmoticonEmoticon