ভুল স্টেশনে নেমে
সমীরণ সরকার
ধারাবাহিক উপন্যাস ২৮ তম কিস্তি।
নন্দিনী ঘরের ভিতরে ঢুকে পলাশকে ডাকে, এসো ,ভেতরে এসো পলাশদা।
পলাশ চারদিকটা একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখে। ওর মনের ভিতর অনেক প্রশ্ন কিলবিল করছে তখন। দু চোখের তারায় বিস্ময় এবং শংকার সহাবস্থান।
নন্দিনী আবার তাড়া দেয়, কি হল তোমার পলাশদা, তুমি কি বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি?
পলাশ ঘরের ভেতর ঢুকে দেখে একটা মাঝারি আকৃতির ঘর। ঘরের একধারে একটা ওল্ড ডিজাইন এর সেগুন কাঠের সিঙ্গেল খাট। ধবধবে বিছানা পাতা। একটা ছোট টেবিল, সুদৃশ্য কাঠের চেয়ার ,একটা কাঠের টুল, একটা আলমারি ইত্যাদি আছে ঘরে। ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে পলাশ বলল, এ কোথায় আমাকে নিয়ে এলি তুই?
-------- এটাই তো স্বামী সর্বানন্দের আশ্রম।
-------- সেতো বুঝলাম। কিন্তু এ কেমন আশ্রম?
-----মানে?
------ এখানে এমন কি হয় যে নিরাপত্তা নিয়ে এত কড়াকড়ি?
----- সব পরে বলবো তোমাকে। এখন একটু রেস্ট নাও, সারারাত ঘুমাওনি তো।
------- সেতো তুই ও জেগে আছিস সারারাত।
----- আমার অভ্যাস আছে,তোমার তো নেই।
----- মানে! তোর সারারাত জাগা অভ্যাস আছে?
নন্দিনী একটু থতমত খেয়ে বলে, হ্যাঁ, এখানে আশ্রমে তো মাঝে মাঝেই সারারাত ধরে অনেক প্রোগ্রাম হয়, তখন তো রাত জাগতেই হয়।
------- দ্যাখ নন্দিনী, আমি বোকা ঠিকই, কিন্তু তুই যতটা ভাবছিস ততটা নয়।
-------কি বলতে চাও তুমি?
------ কাল থেকেই তোর বেশ কিছু কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি আমার। আর আজ সকাল থেকে যা যা দেখছি, তাতে তো বেশ সন্দেহ হচ্ছে আমার! এই আশ্রমে ঠিক কি কি হয় খুলে বলতো আমাকে।
নন্দিনী নিরুত্তর। কি জবাব দেবে সে । এক্ষুনি সবটা সে কিভাবে খুলে বলবে পলাশদাকে।সে পলাশদাকে নিজের ঘরে নিয়ে আসছে বলে 'আইমা' বুড়ি যেভাবে বিরক্তি প্রকাশ করল তাতে তার তো সন্দেহ হচ্ছে যে, যেকোনো মুহূর্তে ডাক আসতে পারে তার, দিতে হতে পারে কৈফিয়ৎ।
সে যা হবার হোক, তবু সে তার পলাশদাকে কিছুতেই ওদের হাতে তুলে দিতে পারবে না। পলাশদাকে পাঠাতে পারবে না 'হাওয়া মহলে'। নন্দিনীকে চুপ করে থাকতে দেখে পলাশ আবার বলে, কিরে, কিছু বলবি না আমাকে?
------ সব বলব তোমাকে। তবে এখনই নয়,পরে।
-----কেন?
-------- আর কোন প্রশ্ন করোনা। শুধু একটা কথা জেনে রাখ, আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি।
----- আমরা মানে?
------ আমি ,বিশু মামা, আর আমার মা।
------- কিসের বিপদ? কাকিমা আর বিশু মামা কোথায়?
-------ঠিক জানিনা।
-----মানে?
নন্দিনী সে কথার কোন জবাব না দিয়ে বলে,
এটা আমার ঘর। আমি এখানে থাকি। ঘরের সঙ্গে এটাচ্ড বাথরুম আছে। তুমি সেখানে গিয়ে স্নানটা সেরে নাও। আমি ততক্ষনে কমন কিচেন থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসি তোমার জন্য। কাল সারারাত কিছু খাওয়া হয়নি তোমার।
----- তোরও তো হয়নি।
------ আমি খেয়ে নেব।
নন্দিনী ঘর ছেড়ে যেতেই নন্দিনীর বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে পলাশ। সত্যি শরীরটা খুব ক্লান্ত। ঘাড়ের ব্যথাটাও এখনো বেশ আছে। খুব জোরে মেরেছিল লোকটা।
বিছানায় একটা মিষ্টি গন্ধ পায় পলাশ। এটা কি পারফিউমের গন্ধ নাকি নন্দিনীর গায়ের গন্ধ?ঠিক বুঝতে পারে না সে। কিন্তু গন্ধটা নিতে নিতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে পলাশ।
(চলবে)
হাতির একটা দাঁতের ওজন কত হতে পারে দেখুন ভিডিওতে
ConversionConversion EmoticonEmoticon