ভুল স্টেশনে নেমে
ধারাবাহিক উপন্যাস ২৫ তম কিস্তি
সমীরণ সরকার
চলতে চলতে হঠাৎ পলাশের মাথাটা কেমন যেন ঘুরে ওঠে। চোখের সামনেটা অন্ধকার হয়ে যায়। পড়ে যেতে যেতে কোনোরকমে নিজেকে সামলে রাস্তায় বসে পড়লো পলাশ। মুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত শব্দ বের হলো তার। আর তাতেই আকৃষ্ট হয়ে নন্দিনী পিছন ফিরে তাকিয়ে ওভাবে পলাশকে মাটিতে বসে থাকতে দেখে প্রায় ছুটে আসে তার কাছে। উৎকন্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে, কি হল তোমার পলাশদা, শরীর খারাপ লাগছে খুব?
পলাশ মুখে কিছু না বলে ইঙ্গিতে বোঝায় যে , সে আর চলতে পারছে না, মাথা ঘুরছে তার।
------ কিন্তু আরও কিছুটা তো যেতে হবে আমাদের। আশ্রমে পৌঁছতে না পারলে তো যেকোনো সময় বড় বিপদ হতে পারে।
পলাশ নিরুত্তর। কথা বলার শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছে সে। আসলে খুব খিদে পেয়েছে তার।সেই কখন বাড়ি থেকে খেয়ে বেরিয়েছে। তেমন কিছু খাওয়া হয়নি ট্রেনে। এখনতো একটা গোটা রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেছে।তাছাড়া ঘাড়ের কাছটাও ব্যথায় খুব টনটন করছে। পিস্তলটা দিয়ে খুব জোরে আঘাত করেছে লোকটা।
পলাশ কে নিরুত্তর দেখে নন্দিনী খুব চিন্তিত হয়। তবে কি পলাশদার ঘাড়ের আঘাতটা খুব মারাত্মক?
কিন্তু পিস্তলটা ফেরত নেওয়ার জন্য ওই গুন্ডা গুলো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দল বেঁধে যে কোন সময়ে উপস্থিত হতে পারে এখানে। তখন কি হবে? কি করে সে বাঁচাবে তার পলাশ দা কে?
না , ঘাবড়ে গেলে চলবে না। যেমন করেই হোক পলাশদাকে রক্ষা করতেই হবে।
নন্দিনী পলাশকে বলে, আমি সাহায্য করলে কি তুমি হাঁটতে পারবে?
পলাশ কোনমতে জবাব দেয়, হ্যাঁ, পারব।
নন্দিনী হাত বাড়িয়ে দেয়। পলাশ সেই হাত ধরে অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু পা টলমল করছে তার। নন্দিনী এবার পলাশের পিঠের উপর দিয়ে নিজের বাঁ হাতটা বেষ্টন করে মৃদু আকর্ষণ করে পলাশের মাথাটা নিজের কাঁধের উপরে রেখে বলে, এবারে আস্তে আস্তে যেতে পারবে তো?
----পারব।
ওই অবস্থাতেই হাঁটতে শুরু করে নন্দিনী। পা টেনে টেনে চলতে শুরু করে পলাশ।
রাধামাধব মন্দিরের কাছে পৌঁছে অবাক হয়ে যায় পলাশ। এই ইন্টেরিয়ার এলাকায় এমন মন্দির!
কি বিশাল গেট মন্দিরের! রুপোলী রং করা ধাতব গেটের দু'ধারে পাহারাদার।
কিন্তু কি আশ্চর্য! ওরা নন্দিনীকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে নমস্কার জানায়।
নন্দিনী ওদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢোকে। ভিতরে ঢুকে আবারো অবাক হবার পালা পলাশের। অনতিদূরে অপূর্ব কারুকার্য করা ধবধবে সাদা বিশাল মন্দির। গেটের মুখ থেকেই একটা প্রশস্ত বাঁধানো রাস্তা এগিয়ে গেছে মন্দিরের দিকে। রাস্তার দু'পাশে নয়ন মনোহর ফুলের বাগান। কিছুটা যাওয়ার পর রাস্তাটা দু'ভাগ হয়ে গেছে। একটা এগিয়ে গেছে মন্দিরের দিকে। আরেকটা রাস্তা মন্দিরকে বাঁদিকে বেষ্টন করে পিছনের দিকে চলে গেছে। নন্দিনী পলাশকে নিয়ে দ্বিতীয় রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল। কিছুটা যেতেই হঠাৎ যেন মাটি ফুঁড়ে ষন্ডামার্কা দুটো লোক এসে উপস্থিত হয়। ওরা পলাশের দিকে এগোতেই নন্দিনী বলে, না, ওকে ছুঁয়োনা।
ওদের মধ্যে একজন বলল, মাতাজি যে নয়া মেহমান কে 'হাওয়া বাড়িতে' রাখতে হুকুম দিলেন।
------ না, ও এখন আমার সঙ্গে যাবে।
---- কিন্তু......
---- কোন কিন্তু নয় ,যাও বলছি এখান থেকে!
রীতিমতো ধমকে ওঠে নন্দিনী।
লোক দুটো কোনমতে ' ঠিক হ্যায় বহেনজী'
বলে প্রায় দৌড়ে পালিয়ে গেল।
( চলবে)
ConversionConversion EmoticonEmoticon