dharabahik uoponyas vul station a neme somiran sarkar 26th kisti

   
dharabahik_uoponyas_vul_station_a_neme_somiran_sarkar_26th_kisti

             

  ভুল স্টেশনে নেমে

সমীরণ সরকার 

ধারাবাহিক উপন্যাস ২৬তম কিস্তি 


  (পাঁচ)

নন্দিনীর কাঁধে ভর করে মন্দিরের এলাকা ছেড়ে
একসময় একটা ফাঁকা মাঠে এসে দাঁড়ায় পলাশ। একটু অবাক হয় সে। নন্দিনী  যে তাকে বলেছিল সর্বানন্দ আশ্রমে নিয়ে যাবে, সেটা তাহলে কোথায়? মন্দির এলাকার পিছনে তো অনেকগুলো বড় বড় বিল্ডিং দেখা গেল।ওগুলো কি তাহলে আশ্রম নয়? মন্দিরের পিছনে এত বড় বড় বিল্ডিং গুলো কিসের জন্য? কে থাকে ওখানে ?কি হয় ওখানে? এমনি হাজারো প্রশ্ন ক্রমাগত খোঁচা মারছিল পলাশের মাথায়।
মন্দিরের পিছনের দিকে প্রাচীরের গায়ে সামনের মতই একটা গেট আছে । তবে এই গেট টা তুলনামূলকভাবে একটা ছোট । সেখানেও পাহারায় আছে একজন  সিকিউরিটি গার্ড। এত গার্ড কেন মন্দিরকে ঘিরে? তবে কি মন্দিরের বিগ্রহের গায়ে প্রচুর গয়নাগাটি আছে? মন্দিরের পিছনের গেটের সিকিউরিটি গার্ডও নন্দিনীকে দেখে কপালে হাত ঠেকিয়ে নমস্কার জানায়। আগের মতোই মৃদু হাসে নন্দিনী ।
গেট পেরিয়ে নন্দিনী পলাশকে নিয়ে মাঠে দাঁড়াতেই আবার অবাক হবার পালা পলশের।
অবশ্য এটাকে ঠিক মাঠ বলা যায় না। কিছুটা ফাঁকা জায়গার পরেই শুরু হয়েছে বাগান। সে বাগানে আম, জাম ,লিচু ,কাঁঠাল, পেয়ারা, জামরুল, নারকেল ইত্যাদি অসংখ্য ফলের গাছ আছে। নন্দিনী পলাশকে সেই বাগানের ভিতর দিয়ে নিয়ে চলল। বিশাল বাগান। বেশ কয়েক বিঘা জায়গার উপরে। কতটা জায়গা হবে পলাশ ঠিক অনুমান করতে পারল না।তাই সে নন্দিনীকে জিজ্ঞাসা করল, এই ফলের বাগানটা কি আশ্রমের?
------ হ্যাঁ।
------ অনেকটা এলাকা হবে।
----- হ্যাঁ।
পলাশ বুঝতে পারছিল না যে, নন্দিনী এত সংক্ষেপে তার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে কেন। ওর মুখটা এত থমথমে গম্ভীর কেন?

                আসলে নন্দিনী তখন মনেমনে আসন্ন ঝড় কিভাবে সামলাবে সেই চিন্তা করছিল। মাতাজি লোক পাঠিয়ে দিয়েছিল তার নতুন শিকার অর্থাৎ পলাশদা কে হাওয়া মহলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে আপত্তি জানিয়ে লোকগুলোকে ফিরিয়ে দিয়েছে।পলাশদা কে ওদের হাতে তুলে না দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে ।লোকগুলো ব্যাপারটা এতক্ষণে নিশ্চয়ই রিপোর্ট করেছে মাতাজিকে। যা হবার হোক। কিন্তু সে সবটা জেনেও পলাশদাকে কি করে ওদের হাতে তুলে দেবে। একবার হাওয়া মহলে ঢুকলে আর তো নিস্তার পাবে না পলাশদা। আজ এত বছর পরে পলাশদাকে খুঁজে পেয়ে সে হারিয়ে যেতে দিতে পারেনা। তান্ত্রিক সাধক কৃষ্ণানন্দের অদ্ভুত খেয়ালের জন্য অনেকগুলো লোক আটকে আছে ওই হাওয়া মহলে। লোক গুলো জীবন্মৃত অবস্থায় আছে। সে তার পলাশদা কে ওই অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিতে পারে না। তবে কি সে মস্ত ভুল করল পলাশদাকে ধরে নিয়ে এসে? কিন্তু না এনে করতটা কী? কৃষ্ণানন্দের লোকগুলো তো ফলো করছিল তাকে। সে পলাশদাকে ধরে না নিয়ে এলে তো অত্যাচার হত মা আর বিশুমামার উপরে।
কিন্তু এখন সে পলাশদা কে ওদের হাত থেকে বাঁচাবে কি করে?

নন্দিনীকে   হঠাৎ চুপচাপ হতে দেখে পলাশ জিজ্ঞাসা করে, কি রে তোর আশ্রম আর কত দুরে ?
----অ্যাঁ?
----- তুই কি ভাবছিস কিছু?
-----নাতো।
----- তাহলে ওই লোকদুটো চলে যাওয়ার পর থেকে তুই এতো গম্ভীর হয়ে গেলি কেন?
----- ও কিছুনা।
----- কে ছিল লোক দুটো?
----- ওরা আশ্রমের লোক।
------ আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছিল  ওরা?
 ----- কোত্থাও না।
---- মাতাজি কে?
-----এই আশ্রমের  মাতাজি।
----- সে আমাকে হাওয়া মহল এ নিয়ে যেতে চাইছিল কেন?
----ও কিছুনা।
----- তুই কি কিছু গোপন করছিস আমার কাছ থেকে?
-----না। 
----- আশ্রম আর কত দূরে?
------ ওই তো দেখা যাচ্ছে।
দূরে অঙ্গুলি নির্দেশ করে নন্দিনী। পলাশ তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকায়। বাগানটা প্রায় শেষ হয়ে আসছে। অনতিদূরে দেখা যাচ্ছে   জেলখানার মতো উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা একটা বিশাল এলাকা। প্রাচীরের রং টুকটুকে লাল।

(চলবে)

Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন