vul station a neme kolome somiran sarkar 21st episode

vul_station_a_neme_kolome_somiran_sarkar_21st_episode

 ধারাবাহিক উপন্যাস

একুশতম পর্ব 

ভুল স্টেশনে  নেমে 

সমীরণ সরকার 

 জ্ঞান ফিরে পাবার পর পলাশ প্রথমটায়  মনে করতে পারে না যে সে কোথায় আছে। কিন্তু পরমুহুর্তেই নন্দিনীর উৎকন্ঠিত কন্ঠ  কানে পৌঁছায় তার।

----- এখন কেমন লাগছে পলাশদা?
----- ভালো।
---- কি হয়েছিল তোমার?
  পলাশ উত্তর দেয় না। ধীরে ধীরে সব মনে পড়ে যায় তার। তার পায়ের উপর দিয়ে চলে যাওয়া বিশাল সরীসৃপের কথা মনে পড়ে যায় তার ।
নন্দিনী আবার জিজ্ঞাসা করে, কি হয়েছিল  তোমার পলাশদা? তুমি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলে কেন?
নন্দিনীর প্রশ্ন শুনে পলাশ বুঝতে পারে যে , সে তাহলে শেষ মুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেছিল। পলাশ এটাও   অনুভব করতে পারে যে, এখন তার মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে নন্দিনী। নন্দিনীর পোশাক ঈষৎ সিক্ত।
বহু বছর আগে মেলা দেখে ফেরার সময় এক ভগ্ন মন্দিরে বর্ষণসিক্ত পোশাকে নন্দিনীকে নবরূপে আবিষ্কার করার কথা মনে পড়ে যায় তার। আর সঙ্গে সঙ্গেই এও মনে পড়ে যায় যে, সেদিন এক সরীসৃপ নন্দিনীকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল।আর আজকেও এক সরীসৃপের জন্যই তার এই অবস্থা। তবে কি সে ও আজ....…?
----- কই, বললে না তো কি  হয়েছিল তোমার!
নন্দিনীর কন্ঠে ক্ষোভ ঝরে।
পলাশ উঠতে যায়। নন্দিনী বাধা দিয়ে বলে,না না,একদম উঠোনা। তোমার কি হয়েছিল না জেনে তোমাকে উঠতে দেবো না আমি।
---- উঠে না বসলে কথা বলব কি করে?
----শুয়ে শুয়ে বুঝি কথা বলা যায়না?
------ তোর মুখ না দেখে কথা বলব কি করে?
হাঃ হাঃ করে হেসে ওঠে নন্দিনী।
-----হাসছিস কেন?
----- মুখ না দেখে কথা বলা যায় না বুঝি? তাছাড়া এই নিকষ কালো অন্ধকারে আমার মুখ তুমি দেখবে কি করে?
পলাশ এই কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলে, চুয়াডাঙ্গার মাঠে মেলা দেখে ফেরার পথে সেই বটগাছের নিচে ভাঙ্গা মন্দিরে আশ্রয় নেওয়ার কথা মনে আছে তোর?
নন্দিনী প্রায় ফিসফিস করে বলে, সে কথা কি ভোলা যায় কখনো?
মুহূর্তে নন্দিনীর মন পিছিয়ে যায় বেশ কয়েক বছর আগে। তার জীবনের প্রথম পুরুষের ছোঁয়া সে ভোলে কি করে? আজ এত বছর পরেও তার জীবনে তো দ্বিতীয় কোনো পুরুষ আসেনি।আর এখন যে ফাঁদে সে  ও তার মা জড়িয়ে পড়েছে, সেখান থেকে মুক্তি পাবার তো কোন উপায় নেই। আর তাই তার উপায়ও নেই কোন সাধারণ জীবনে ফিরে যাওয়ার। আর পলাশদা?তাকে তো সে নিজেই ঠেলে দিচ্ছে  বিপদের মুখে ।
তবু মুহূর্তের জন্য তার চোখের সামনে যেন ভেসে উঠলো তার আর পলাশদার একটা মিলিত সুখী জীবনের স্বপ্ন।
নন্দিনীকে প্রশ্নটা করার পরেই পলাশের মনে হল, সেদিনের কথা নন্দিনীকে মনে করিয়ে দিয়ে হয়তো কোনো বড় ভুল করল সে। তার জীবনে না হয় নন্দিনীর পরে আর কোন দ্বিতীয় নারী আসেনি, কিন্তু নন্দিনীর জীবনে তো অন্য পুরুষ আসতেই পারে।আর তাই হয়তো সেদিনের কথা মনে করিয়ে দেওয়া নন্দিনী বিরক্ত হয়েছে তার উপরে। আর তাই সে কোন কথা বলছে না।
পলাশ বলে, কিরে, রাগ করলি আমার উপরে?
----ধুস, রাগ করিনি। আসলে তুমি সত্যি কথাটা না বলায় খুব দুঃখ হচ্ছে আমার!
---- কোন সত্যি কথা?
---- তুমি হঠাৎ ভয় পেলে কেন?
---- জঙ্গলের মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে হঠাৎ মনে হল, একটা বিশাল সাপ আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল। বেশ লম্বা আর ভারী।
-----  এই কথাটা আগে বললে না কেন?
----- আগে বললে কি হত?
----- তোমাকে ভয় পেতে বারণ করতাম।
-----মানে?
------ আমার মনে হয় যে,তোমার সঙ্গে 'হিজল' এর দেখা হয়েছে। ও খুব শান্ত। কারুর কোন ক্ষতি করে না ও। মনে হয় খুব খিদে পেয়েছে ওর। তাইও খাবার খুঁজতে বাইরে বেরিয়েছে।
---- 'হিজল'টা  আবার কে?
----- ও একটা ময়াল। এই জঙ্গলের নৈঋত কোণে একটা মস্ত জলাশয় আছে। ওই জলাশয়ের চারিধারে প্রচুর হিজল গাছ আছে। ওই হিজল গাছের জঙ্গলে ও থাকে বলে ওকে সবাই 'হিজল' নামে ডাকে! ও আগে কিন্তু এত শান্ত ছিল না।
---- মানে?
----- সে এক গল্প।
---- বল ,শুনি।
গল্পের কথা শুনে  চট করে উঠে বসে পলাশ।
‌ আর সেই মুহূর্তে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিয়ালের ডাক ভেসে এলো,হুক্কা হুয়া.... হুক্কা হুয়া হু...য়া..আ...আ....আ.......!

(চলবে)
Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন