vul station a neme dharabahik uponyas 20th episode

 

vul_station_a_neme_dharabahik_uponyas_20th_episode

ধারাবাহিক উপন্যাস 

ভুল স্টেশনে নেমে 

পর্ব ২০ 

সমীরণ সরকার 

 পলাশ নন্দিনীর কথা শুনতে পাচ্ছে, কিন্তু কোনো জবাব দিতে পারছে না। সে তখন চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে তার আরাধ্য দেবতা বিশ্বেশ্বর মহাদেব কে স্মরণ করছে। এই ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মনে মনে আউরে চলেছে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র।

কথা বলতে বলতে নন্দিনী এক সময় বিস্মিত হয়। সে এত কথা বলে চলেছে অথচ পলাশদার তরফ থেকে কোনরকম সাড়া শব্দ নেই!তবে কি পলাশদা পালিয়ে গেল? মুহূর্তে নন্দিনীর চোখের সামনে স্বামী সর্বানন্দের ভাই তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দের ভয়ঙ্কর মুখটা ভেসে উঠলো। আগামীকালের মধ্যে যদি সে পলাশদাকে আশ্রমে নিয়ে যেতে না পারে তাহলে ভয়ঙ্কর শাস্তি অপেক্ষা করছে তার জন্য, এটা সে জানে। এটাও জানে যে, তাহলে ভয়ঙ্কর বিপদে পড়বে তার মা ও বিশু মামা। আর সেটা জানে বলেই নিতান্ত নিরুপায় হয়ে তাকে বেরোতে হয়েছে নৈশ অভিযানে। তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দের পোষা গুন্ডা গুলো প্রতিমুহূর্তে অনুসরণ করছে তাকে। ওদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোন উপায় নেই। আর সে রেহাই পেয়ে যাবেই বা কোথায়? মা আর বিশু মামা তো কার্যত বন্দি ওদের হাতে। আর মামিমা? সে শুধু কৃষ্ণনন্দের প্রধান শিষ্যাই নয়, তার নির্দেশেই এখন আশ্রম টা চলে। হয়তো তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দও।
কিন্তু পলাশদা পালাবে কি করে? এই এলাকার কিছুই তো সে চেনে না। তাছাড়া নন্দিনীর কথা বার্তায় সন্দেহ করার মত পলাশদা তো পায়নি কিছু।আর এই জঙ্গলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পালাতে গেলে শুকনো পাতার উপর দিয়ে চলার শব্দ নন্দিনী অবশ্যই পেত। তাহলে কি পলাশদাকে......??
আতঙ্কগ্রস্ত নন্দিনী সব ভুলে প্রায় চিৎকার করে উঠলো, পলাশদা,তুমি কোথায়?
পলাশ শুনতে পাচ্ছে নন্দিনীর চিৎকার ,কিন্তু উত্তর দিতে পারছে না । আসলে প্রচন্ড আতঙ্কে  তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে । কোন আওয়াজ বেরোচ্ছে না তার গলা দিয়ে। এবারে সত্যি সত্যি ভয় পায় নন্দিনী। সে আন্দাজে পলাশের অবস্থান অনুমান করে সেদিকে এগোতে থাকে। একটু এগোতেই হাতের ছোঁয়ায় পলাশের অস্তিত্ব অনুভব করে। নন্দিনী দু'হাত দিয়ে পলাশকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, কি হল তোমার পলাশদা, সাড়া দিচ্ছনা কেন?
ভীত ,আতঙ্কিত পলাশ তোতলাতে তোতলাতে কোনমতে উচ্চারণ করে,সা-সা-সা-সাপ! তারপর জ্ঞান হারায়।
 নন্দিনীর হাত ছাড়িয়ে মাটিতে পড়ে যায় পলাশ।ধুপ করে একটা শব্দ হয়।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে নন্দিনী। এখন কী করবে সে? কি হয়েছে পলাশদার? ও যে সাপ  সাপ করে কি বলছিল, তবে কি ওকে সাপে...?না না,এটা হতে পারেনা। এভাবে এতদিন পরে পলাশদাকে খুঁজে পেয়ে সে হারাতে পারে না তাকে।তাছাড়া ওকে তো আশ্রমে নিয়ে যেতেই হবে তাকে ।
চট করে মাটিতে বসে পড়ে নন্দিনী। একটু হাতড়েই পলাশকে খুঁজে পায়।   বার কয়েক ডাকাডাকি করার পরেও পলাশের সাড়া না পেয়ে ওর নাকের কাছে হাত নিয়ে কিছু অনুভব করার চেষ্টা করে। নন্দিনী অনুমান করে যে, পলাশ হয়তো ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। একটু জলের প্রয়োজন। পলাশদার ‌কাঁধে তো একটা ব্যাগ ছিল।ওতে তো‌ জলের বোতল থাকলেও থাকতে পারে। পলাশের কাঁধের ব্যাগটা একটু দূরে ছিটকে পড়ে গেছিল। নন্দিনী হাতড়ে হাতড়ে সেটা উদ্ধার করে। হ্যাঁ,  ব্যাগের ভিতর তার অনুমান মতো একটা জলের বোতল খুঁজে পাওয়া যায়। অতি সন্তর্পনে পলাশের মাথা কোলে তুলে নেয় ‍ নন্দিনী।বোতলের জল আলতো করে  ছিটিয়ে দেয় ওর চোখে মুখে।
 একটু পরেই জ্ঞান ফিরে আসে পলাশের।

(চলবে)
Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন