ধারাবাহিক উপন্যাস ভুল স্টেশনে নেমে 22 তম কিস্তি

ধারাবাহিক_উপন্যাস_ভুল_স্টেশনে_নেমে_22_তম_কিস্তি


ধারাবাহিক উপন্যাস ২২তম কিস্তি 

ভুল স্টেশনে নেমে

সমীরণ সরকার

----  হঠাৎ আবার শিয়াল ডাকছে কেন?

পলাশের এই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে নন্দিনী হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠলো। অনেকদিন পরে নন্দিনীর এই পরিচিত পুরনো হাসিটা যেন পলাশকে মুহূর্তে আনমনা করে দিল। কিন্তু পলাশ সে ভাব গোপন করে একটু গম্ভীর স্বরে বলল, "তুই হাসলি কেন? আমি  হাসির মত কি বললাম?"
------- তুমি আর আমি দুজনেই ছোট থেকে গ্রামে বড় হয়েছি।
----তো?
---- শিয়ালের ডাক শুনে বুঝতে পারলে না যে ওরা রাতের তৃতীয় প্রহর ঘোষণা করল।
----ও।
---- চলো, এবার জঙ্গলে ঢুকি।
----- তুই 'হিজলের' গল্প টা বললি নাতো।
----- যেতে যেতে বলব। নাও ,আমার হাতটা ধরো।
----- আমি একাই পারব।
------ থাক ,অত বাহাদুরি দেখিয়ে কাজ নাই। একটু আগে যা খেল দেখালে!
-------- এই অন্ধকার রাতে অচেনা জায়গায় পায়ের উপর দিয়ে ঐরকম বড় একটা সাপ গেলে যে কোনো মানুষ ঘাবড়িয়ে যাবে।
------বেশ, এখন ছাড়ো ওসব কথা।হাতটা দাও দেখি এবার।
পলাশ আর কথা না বাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। মুহূর্তে পলাশের করতল মুঠোবন্দী করে নন্দিনী।
তারপর নিজে উঠে দাঁড়িয়ে এক হ্যাঁচকা টান মারে পলাশের হাত ধরে, বলে, চলো, এগোই।
পলাশের হাত ধরে জঙ্গলের ভেতরে ঢোকে নন্দিনী । নন্দিনীর হাতটা  ঈষৎ ভেজা।
জঙ্গলের বাইরে এতক্ষন যে হালকা আলোর আভাস ছিল , জঙ্গলে ঢুকতেই তা হারিয়ে গিয়ে নিকষ কালো অন্ধকার যেন গ্রাস করলো পলাশকে। কিন্তু নন্দিনী সেই অন্ধকারের ভিতর দিয়ে পলাশের হাত ধরে অনায়াসে এগিয়ে চলল। পলাশের মনে হল জঙ্গলের রাস্তাটা যেন নন্দিনীর চেনা। কিন্তু কিভাবে?
কিছুটা যেতেই হঠাৎ বদলে গেল চিত্রটা। গাছের গায়ে অথবা পাতার ফাঁকে ফাঁকে খেলা করছে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ জোনাকি। হাজার হাজার   খদ্যোতের দেহ নিঃসরিত বিন্দু বিন্দু আলো সারা জঙ্গলটাকে যেন  এক রূপকথার জগতে পরিণত করেছে। সে আলোর দ্যুতি চোখধাঁধানো নয় ,কিন্তু মায়াময়,প্রশান্ত। আর সেই আলোকমালায় জঙ্গলের নিকষ কালো অন্ধকার যেন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। পলাশ দাঁড়িয়ে পড়ে। বিস্মিত নন্দিনী জিজ্ঞাসা করে, কি হলো, দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?
------একটু দেখতে দে।
------কি?
----- জোনাকির খেলা।
নন্দিনী অবাক হয়। পলাশদা এখনো আগের মতই আছে,বদলায়নি। তাহলে কি শুধু সে বদলে গেছে? কিন্তু এ বদল তো  চায়নি নন্দিনী। তার জীবনটা তো অন্যরকম হতে পারতো। তাহলে এত বছর পরে তার পলাশদাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দটা উপভোগ করতে পারত। কিন্তু সত্যি পারত কি? পলাশদা কি তাকে মনে রেখেছে এখনো?আজো কি কেউ আসেনি  পলাশদার জীবনে?
 ---- কি হলো, চুপ করে গেলি কেন? কিছু ভাবছিস?
-----না,কিছুনা।
----- তোর মনে আছে  আমাদের গ্রামের উত্তরে কোপাই নদীর পাড়ে ভবা বৈরাগীর আশ্রমের কথা?
------ খুব মনে আছে।
-------- আশ্রমের বাইরে নদীর পাড়ে পুরনো বটগাছটার কথা মনে আছে?
----আছে।
------ সন্ধ্যা হলেই গাছটার চারপাশে জোনাকির মেলা বসে যেত।
------ কাকিমা মাঝেমাঝেই সন্ধ্যাবেলায় ভবা বৈরাগীর আশ্রমে যেত লতা বোষ্টমীর কীর্তন শুনতে। 
----গ্রামের অনেকেই যেত।
----- হ্যাঁ, কাকিমার সঙ্গে তুমিও যেতে। সবাই কীর্তন শুনতো আর তুমি আশ্রমের বাইরে মাচায় বসে থাকতে ।
------- জোনাকিদের খেলা দেখতাম।
------- এখন চলো। এই সারা জঙ্গল জুড়ে অসংখ্য জোনাকি দেখতে পাবে।

 পলাশ ও নন্দিনী হাঁটতে শুরু করে জোনাকি পুঞ্জের ভিতর দিয়ে পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে।
এক সময় রাত শেষ হয়ে আসে । ভোরের আভাস পেয়ে শুরু হয় ঘুম ভাঙ্গা পাখিদের ব্যস্ততা । সম্মিলিত কূজনে মুখরিত হয়ে ওঠে চারিদিক । জঙ্গলের বাইরে আসে ওরা দুজনে।
নন্দিনী বলে, আর কিছুটা গেলেই স্বামী সর্বানন্দের আশ্রমে পৌঁছে যাব আমরা।আর তাহলেই........!
 নন্দিনীর কথা শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ দুটো মোটরবাইক এসে ঘিরে ধরে ওদের।

(চলবে)

Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন