ধারাবাহিক উপন্যাস
ভুল স্টেশনে নেমে
১৩শ কিস্তি
সমীরণ সরকার
নিশ্চয়ই নতুন কোন যাত্রী এসেছে ট্রেন ধরার জন্য। ভালো করে লক্ষ্য করে পলাশ দেখে যে, যাত্রী টি একজন মহিলা। সঙ্গে আর কেউ নেই। এত রাতে একজন মহিলা যাত্রী একা একা? তবে কি------ তবে কি একটু আগে মোটরবাইক চেপে যে লোকগুলো এসেছিল একটি মেয়েকে খুঁজতে--- এ কি সেই মেয়ে? কিন্তু তার পরনে তো বিয়ের সাজ থাকার কথা। ব্যাগ থেকে টর্চ টা বের করে বাঁ হাতের তালুতে দুবার ঠুকে সুইচ টেপা মাত্র ধরা ধরা মহিলাকণ্ঠ কানে আসে," টর্চটা নিভিয়ে দিন, প্লিজ। হ্যাঁ, আপনি মনে মনে যা ভাবছেন, সেটাই ঠিক।
----মানে?
---- একটু আগেই মোটরবাইক চেপে যে তিনজন লোক এসেছিল একটি মেয়ের খোঁজে, আমিই সেই ।
---- তার মানে আপনি পালিয়ে এসেছেন ঘর থেকে? কিন্তু কোথায় ছিলেন আপনি? ওরা তো তন্ন তন্ন করে চারিদিকে খুঁজলো!
----- স্টেশন মাস্টারের রুমের পিছনে একটা ভাঙ্গা অব্যবহৃত লেডিস বাথরুম আছে, সেখানে লুকিয়ে ছিলাম।
----- সেকি! এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে একা ওখানে লুকিয়ে থাকতে ভয় করেনি আপনার?
--- হ্যাঁচ্চো !হ্যাঁচ্চো!
মেয়েটি বার দুয়েক হাঁচে।খুক খুক করে কাশেও।
---- ঠান্ডাও তো লাগিয়েছেন দেখছি।
----- হ্যাঁ, অনেকক্ষণ ধরে ভিজেছি তো, তাই। হ্যাঁ,
কি যেন বলছিলেন----ভয়?-- সেটা থাকলে তিন মাইল পথ অন্ধকারে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে তো আসতে পারতাম না।
---- সেকি!---- জঙ্গলের ভিতর দিয়ে কেন?
---- এই স্টেশনের এলাকাটা পেরোলেই একটা ছোট্ট ফাঁকা মাঠ আছে। সেটা পেরোলেই একটা বিশাল জঙ্গল।
----- জঙ্গল?
------ হ্যাঁ প্রায় তিন মাইল বিস্তৃত। শাল, মহুয়া, পলাশ, অর্জুন, হরীতকী, বহেড়া আরো নানা বৃক্ষে পরিপূর্ণ সেই জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে গেছে আঁকাবাঁকা পায়ে চলা রাস্তা।
---- জঙ্গলের হিংস্র জীবজন্তু নেই তো?
------ সেরকম কিছু তো শুনিনি। তবে শিয়াল, ভাম, বুনো বিড়াল ,সাপ ---এসব তো থাকতেই পারে। ওই পেরিয়েই কুমারপুর গ্রাম।
------ আপনার বাড়ি?
----- হ্যাঁ, তা এখন বলতে পারেন।
-----মানে? ঠিক বুঝলাম না তো।
---- আসলে ওটা আমার মামাবাড়ি।
---- মামাবাড়ি! তাহলে আপনার বাড়ি কোথায়?
---- কি হবে জেনে?
----- কিছু না। এমনি জানতে চাইলাম। নিছক কৌতুহল বলতে পারেন।
------ তার আগে বলুন তো আপনি এখানে কেন?
কোথায় যাবেন আপনি?
---- সে এক মজার ব্যাপার, শুনলে হাসবেন।
----- কিরকম?
--- আমার যাওয়ার কথা ছিল চন্দ্রপুর-- না না, চন্ডিপুর বোধহয় চন্ডিপুর স্টেশন।
----- দুটোই ঠিক।
----- মানে?
------ ওই স্টেশনের নাম চন্দ্রপুর- চন্ডিপুর স্টেশন।
----- কেন, এরকম অদ্ভুত নাম কেন?
------ আসলে স্টেশনটা যে জায়গায় অবস্থিত সেই জায়গাটার নাম চন্দ্রপুর। কিন্তু ওখান থেকে মাইল দেড়েক দূরেই চন্ডিপুর নামে একটা বিখ্যাত গ্রাম আছে। যেখানে জাগ্রত দেবী মা চন্ডীর মন্দির আছে। দূরদূরান্ত থেকে লোক আসে ওই মন্দিরে পুজো দিয়ে মায়ের কৃপা ভিক্ষা করতে। তাই ওই বিখ্যাত গ্রামটির নামও
চন্দ্রপুর স্টেশনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
------ এরকম আবার হয় নাকি,?
------ অনেক জায়গাতেই হয়। আপনি কোনদিন শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা দেখতে গেছেন?
------ হ্যাঁ।
----- কিভাবে গেছেন বাসে গাড়িতে না ট্রেনে?
----- ট্রেনে।
------- কোন স্টেশনে নেমেছেন?
------ বোলপুর স্টেশনে।
------- আজ্ঞে না মশাই, ওই স্টেশনের নাম বোলপুর--শান্তিনিকেতন।
চমকে ওঠে পলাশ।এভাবে ' আজ্ঞে না মশাই' বলে কথা বলতো একজন। কিন্তু সে তো এখন অনেক দূরে। তবু এই অপরিচিতা মেয়েটির বলা কথা হঠাৎ তাকে মনে করিয়ে দিলো।
------ কি হলো, চুপ করে আছেন কেন? মজার ব্যাপারটা কী হয়েছে বললেন না তো।
------ আমি ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই ঘুমিয়ে গেছিলাম। যখন ঘুম ভাঙলো, দেখলাম পলাশপুর পৌঁছে গেছি।
----- ভালোই তো হয়েছে।
-----মানে?
----- ভাগ্যিস ভুল স্টেশনে নামলেন, তাইতো এমন বন্ধু পেলাম।
---- শত্রুও তো হতে পারি।
----- সেটা জে নয়,তা আমি হলপ করে বলতে পারি।তা চন্ডিপুর যাচ্ছিলেন কেন? না,মানে বলতে অসুবিধা থাকলে না হয়--
-- না ,কোন অসুবিধা নাই।
(চলবে)
"
শব্দমঞ্জরী একটি bengali literary blogzine.all about bengali story,poem, articale, mythology , novel, and many more. আমদের এই ব্লগটি সাধারণত বাংলা সাহিত্য নিয়ে।
ConversionConversion EmoticonEmoticon