ধারাবাহিক উপন্যাস
ভুল ষ্টেশনে নেমে
সমীরণ সরকার
সপ্তম কিস্তি
ক্ষণপ্রভার চোখ ধাঁধানো আলোর রেশ মিলিয়ে যাবার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বজ্রপাতের গগনবিদারী
শব্দে থর থর করে কেঁপে উঠলো ধরিত্রী। তিন দিক ঘেরা রেলওয়ে শেডের নিচে বসে সেই কম্পনের তীব্রতা
অনুভব করল পলাশ। আর হঠাৎই মনে পড়ে গেল নন্দিনীর কথা।
এমনই এক ঝড়-বৃষ্টির সন্ধ্যায় তুমুল বজ্রপাতের গগনবিদারী শব্দে ভয় পেয়ে তাকে দুই হাতে সবলে জড়িয়ে
নন্দিনী। তখন পলাশের শরীরে একটু একটু করে পরিবর্তন আসছিল ।গোঁফের রেখা স্পষ্ট হচ্ছিল। গলার স্বর
কেমন যেন ভাঙ্গা ভাঙ্গা হয়ে গেছিল। পরিবর্তন আসছিল পলাশের সবসময়ের ছায়াসঙ্গী হরেন মাস্টারমশাইয়ের
মেয়ে নন্দিনীর শরীরেও। নন্দিনী তখন চোদ্দ ছুঁয়েছে।
হরেন মাস্টারমশাইয়ের স্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে গিয়ে ছোট থেকে নন্দিনীকে ছেলেদের মত
করে মানুষ করতে শুরু করেছিলেন। ছেলেদের মত মাথার চুলের ছাঁট, ছেলেদের মতো জামা প্যান্ট ,ছেলেদের মত
খেলাধুলায় অভ্যস্ত করেছিলেন মেয়েকে। কাজেই নন্দিনী ছোট থেকে মেয়েদের সঙ্গে নয়, ছেলেদের সঙ্গেই মিশতো
বেশী। আর ছেলেদের দলের পান্ডা তার বাবার প্রিয় ছাত্র পলাশের সঙ্গেই ছিল তার বেশি ভাব।
কিন্তু মেয়ের শরীরে পরিবর্তন আসতে শুরু হওয়ার পরে চিন্তায় পড়েছিলেন নন্দিনীর মা। নন্দিনী তখন চৌদ্দতে
পা দিলেও ওর বালিকাসুলভ চাপল্য কাটেনি। অন্নপূর্ণা দেবী বুঝলেন যে, এই দোষটা তাঁরই। তিনিই তো ছোট
থেকে মেয়েটাকে ছেলে সাজিয়ে রেখেছিলেন কারোর কথায় কর্ণপাত না করে। তাইতো আজ নন্দিনীর মেয়েবন্ধু
থেকে ছেলেবন্ধু বেশি। কিন্তু মেয়েটার শারীরিক পরিবর্তনের ব্যাপারটায় তিনি উদাসীন থাকেন কি করে? তাই
প্রায় এক রকম জোর করেই মেয়েটাকে হাফপ্যান্টের বদলে ফুল প্যান্ট বা পাজামা ধরাতে পারলেও ছেলেদের মতো
জামা পরাটা ছাড়াতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।
পলাশের হঠাৎ কেমন যেন অন্যরকম লাগতে শুরু করেছিল তার আবাল্য খেলার সঙ্গী কাম তার চেলা নন্দিনী
নামের মেয়েটাকে। ওর গায়ে মাঝে মাঝে তখন হঠাৎ করেই অদ্ভুত একটা সুন্দর গন্ধ খুঁজে পাচ্ছিল পলাশ। ওর
শরীরটা আর যেন আগের মত কাঠ কাঠ নেই, বদলে আস্তে আস্তে যেন নরম আর মসৃণ হচ্ছিল।
আর সেই বয়ঃসন্ধিক্ষণে এক চৈত্র মাসের বিকেলে চুয়াডাঙ্গার মাঠে মেলা দেখে ফেরার পথে তুমুল ঝড় বৃষ্টিতে পড়লো
ওরা, ফাঁকা মাঠের মাঝখানে। আপাদমস্তক ভেজা অবস্থায় ছুটতে ছুটতে ওরা মাঠের ধারে এক মস্ত বটগাছের নিচে
একটা ভাঙ্গা মন্দিরের পিছনে আশ্রয় নিল। নিকষ কালো আকাশ থেকে মুহুর্মুহু আছড়ে পড়ছিল অশনি, যেন পৃথিবীর
উপর কি এক অজানা আক্রোশে। প্রবল বেগে বইছিল ঝোড়ো হওয়া। আর সে হাওয়ার তাড়নায় বৃষ্টিকণা সোজাসুজি
ভূপতিত না হয়ে ছিটকে পড়ছিল এদিকে ওদিকে। যে অর্ধভগ্ন টিনের চালার নিচে ওরা দাঁড়িয়েছিল তার একপাশে
মন্দিরের পলেস্তারা খসা দেওয়াল, বাকি তিন দিক খোলা। ওরা বৃষ্টির ছাঁট থেকে বাঁচার জন্য মন্দিরের দেওয়াল
ঘেঁষে খুব কাছাকাছি দাঁড়ালেও ঝোড়োহাওয়ার প্রাবল্যের কারণে তীর বেগে ছুটে আসা বৃষ্টির হাত থেকে নিজেদের
রক্ষা করতে পারছিল না কিছুতেই। হঠাৎই তীব্র আলোর ঝলকানি আর ক্ষণপরেই চারদিক কাঁপিয়ে ভীষণ জোরে
বাজ পড়লো খুব কাছেই।
ক্ষণপ্রভার তীব্র আলোকে মুহূর্তের মধ্যে যেন লক্ষ ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠল প্রায়ান্ধকার চালার নিচে। আর সেই আলোতে
হঠাৎই পলাশের চোখে পড়ল নন্দিনীর ভেজা জামার আড়ালে ফুটে ওঠা যৌবন কোরক। পরমুহুর্তেই গগনবিদারী
অশনিপাতের ভয়ঙ্কর আওয়াজে থরথর করে কেঁপে উঠল চালা। তীব্র আতঙ্কে দুই হাতে সবলে পলাশকে জড়িয়ে
ধরল নন্দিনী। ক্ষণপূর্বে হঠাৎই নন্দিনীর বুকে ফুটে ওঠা যে যৌবন কোরকের আভাস দেখেছিল পলাশ, এখন তার
স্পর্শ অনুভব করল। তার সমস্ত শরীরে যেন কাঁপুনি ধরল অকস্মাৎ। সারা শরীর জুড়ে হঠাৎই যেন এক অদ্ভুত
অনুভূতি শুরু হলো তার। অনাস্বাদিত পুলকের তীব্রতায় সে সব ভুলে দুই হাত দিয়ে নন্দিনীকে জড়িয়ে ধরল
বুকের মাঝে। নন্দিনী মুখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে বলল," আরো আরো জোরে আমাকে জড়িয়ে ধরো পলাশদা,
খুব ভয় করছে আমার"।
মুহুর্মুহু বজ্রপাতের আলোয় চালার নিচে সৃষ্ট আলো-আঁধারি পরিবেশে নন্দিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎই
যেন ঘোর লাগা মানুষের মতো হয়ে গেল পলাশ। নিজের অজান্তেই তার ঠোঁট নেমে এলো নন্দিনীর ঠোঁটে।
বিস্মিত হল নন্দিনী। এ কোন পলাশদা? এতো তার আবাল্য খেলার সাথী পলাশদা নয় ,অন্য কেউ।
কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ে সে। কিন্তু একটু সময় পরেই তার সারা শরীর শিহরিত হয়। তল পেটের নিচ
থেকে একটা অদ্ভুত অনুভূতি চুঁইয়ে চুঁইয়ে নামতে শুরু করে নিচের দিকে।
(চলবে)
আরও পড়ুন
প্রথম কিস্তি দ্বিতীয় কিস্তি তৃতীয় কিস্তি
চতুর্থ কিস্তি পঞ্চম কিস্তি ষষ্ঠ কিস্তি
ConversionConversion EmoticonEmoticon