সমীরণ সারকারের ধারাবাহিক উপন্যাস ভুল স্টেশনে নেমে অষ্টম কিস্তি

সমীরণ_সারকারের_ধারাবাহিক_উপন্যাস_ভুল_স্টেশনে-নেমে_অষ্টম_কিস্তি


ধারাবাহিক উপন্যাস :- 

ভুল স্টেশনে নেমে

সমীরণ সরকার

অষ্টম কিস্তি

একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল নন্দিনীর সারা শরীর জুড়ে। হরেন মাস্টারের যে গেছো মেয়েটা ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নদীতে সাঁতার কাটে, গাছে চেপে আম পড়ে, সাঁতরে পদ্ম দীঘির মাঝখান থেকে শালুক তুলে আনে, ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দিয়ে ঘুড়ি প্রতিযোগিতায় নামে বা হরিণের মতো ছুটতে পারে, সেই মেয়েটা কেমন যেন নেতিয়ে পরলো। পলাশদার অদ্ভুত আচরণে প্রথমটায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলেও আস্তে আস্তে এক অদ্ভুত ভালো লাগায় ভরে গেল তার শরীর, মন। সে আরো জোরে শরীরের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আঁকড়ে ধরল তার পলাশদাকে।

পলাশ প্রথমটায় যেন নিজের অজান্তে ঘোরলাগা মানুষের মত দুই হাতে  নন্দিনীকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে মিলিয়েছিল ঠোঁট। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক অনাস্বাদিতপূর্ব অনুভূতিতে তার সমস্ত শরীর পুলকিত হলো।
চালার বাইরে এলোমেলো বাতাস, বৃষ্টি আর মুহুর্মুহু বজ্রপাতের সঙ্গমে পুলকিত পৃথিবী আর চালার ভিতরে দুই কিশোরী কিশোরী প্রথম চুম্বনের অনির্বচনীয় আনন্দে শিহরিত। 
পলাশ প্রথমে ঘোরলাগা মানুষের মত নন্দিনীর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ানোর কিছুক্ষণ পরে চেতনা ফিরতেই একটু দ্বিধান্বিত হয়েছিল । কিন্তু নন্দিনী তাকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরার পরই সে নতুন উৎসাহে দীর্ঘায়িত করল চুম্বন। সময় সমুদ্র মথিত হচ্ছিল দুটি কিশোরকিশোরীর প্রথম চুম্বনজাত শারীরিক তৃপ্তির সাক্ষী হয়ে। মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল লক্ষ কোটি পল অনুপল। 
হঠাৎই নন্দিনী তার ঠোঁট পলাশের ঠোঁট থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটু দূরে সরে যায়। চোখ বন্ধ করে ক্ষণপূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা রোমন্থন করে মনে মনে । আলতো হাসি খেলা করে তার সারা মুখ জুড়ে। 
অতৃপ্ত হতচকিত পলাশ বলে, কিরে,
 কি হলো তোর? পালিয়ে গেলি কেন?
----- ঘরে ফিরতে হবে না?
------ ফিরবো তো, বৃষ্টিটা কমুক একটু। আয় আমার কাছে আয়।
----- আর কিছু না।
----- এদিকে আয় বলছি।
ছদ্ম রাগ দেখিয়ে নন্দিনী বলে, আমি জেঠিমাকে বলে দেবো সব।
---------- খবরদার! কাউকে কিছু বলবিনা!
------- আমি সবাইকে বলে দেবো।
------- কেন বলবি ,তোর ভাল লাগেনি?
নন্দিনী নিরুত্তর। 
অধৈর্য পলাশ জিজ্ঞাসা করে, চুপ করে আছিস কেন? বল ,ভালো লাগেনি তোর?
নন্দিনী তবুও নিরুত্তর। কি যেন ভাবছে সে।
পলাশ এগিয়ে যায় নন্দিনীর কাছে। দুই হাতে ওকে সবলে ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, কিরে বল, উত্তর দে?
নন্দিনী মুখ খোলে এবার। ফিসফিস করে বলে, লেগেছে।
------ তাহলে কেন বলবি, কেন আমাদের কথা বলবি সবাইকে?
নন্দিনী এবার পরিহাস তরল কন্ঠে বলে, বলব না ,কিন্তু একটা শর্ত আছে।
 ---- শর্ত! তোর আবার কি শর্ত?
----- আছে একটা।
------ বল কি শর্ত?
------- আগে কথা দাও, আমি যে শর্ত দেবো তা মেনে নেবে।
------ দিলাম। বল  এবারে, কি শর্ত তোর?
------ একটু আগে যা দিয়েছিলে, ওইটা আরেকটা চাই। আরেকটা, অনেকক্ষণ ধরে!
----- ওরে শয়তান, এই তোর শর্ত?
------ হু্ঁ! এটাই আমার শর্ত।
কথা শেষ করেই আচমকা তীব্র চিৎকার করে ওঠে নন্দিনী, পলাশদা, কিসে যেন পায়ে কামড়ালো আমাকে।
 বিদ্যুতের আলোয় পলাশ দেখে একটা কুচকুচে কালো সাপ দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে ভাঙ্গা মন্দিরের দিকে।
(চলবে)
আরও পড়ুন 
Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন