ছোট গল্প
অমূল্য চরণ
চন্দন চক্রবর্তী
কি হে ডাক্তার ! অবাক করলেন মশাই । বাইরে অমূল্যচরণকে দেখলাম সিঁড়ির পাশে মেঝেতে বসে রুগীদের তদবির করতে ! লোকটার দশ দশটা গ্রামে নামডাক । ভুত ছাড়ানো,বিষ নাবানো,বানমারা,তুকতাঁক,আরো কতরকম বুজরুকী ওর রোজগার । বানমারার ভয় দেখিয়ে জমি হাতানো ওর কারবার !
তার এই পরিবর্তন ?
কর্মসূত্রে আমার কলকাতায় বাস । গ্রামের বাড়ি এলে ডাক্তারের ওখানে যাই । অনেকদিন পর ডাক্তারের ওখানে বেলার দিকে গেলাম ।
ডাক্তার বিজন রায় কলকাতার ছেলে । দুবছর গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছেন । ডাক্তার ভালো,ভালো মানুষ ।
রুগীর ভিড় নেই । ডাক্তার আমাকে দেখে নড়েচড়ে বসলেন । গ্রামীন কুসংস্কার একদম বরদাস্ত করতে পারেন না । বেশ উত্তেজিত হয়ে শুরু করলেন অমূল্যচরনের জীবন বৃত্তান্ত :
এই পোস্টিং নিয়ে নতুন এসেছি । কোন একদিন বিকেলে গ্রামের পাকা সড়ক ধরে হাঁটছি । একজন কেউ অনুনয় বিনয় করতে লাগলো ! কাউকে সাপে কেটেছে । অনেকবার বললাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে । বোঝাতে পারলাম না । যেতেই হল ।
একটি অল্প বয়সী মেয়েকে ঘিরে লোকে লোকারণ্য । কে এক ওঝাকে ডেকে এনেছিল ! ঝাড়ফুঁক করে,বেগতিক বুঝে, সরে পড়েছে ।
মেয়েটি মারা গেছে ।
বাড়ির কর্তাকে ধমক দিয়ে চলে এলাম । আমার কথায় গ্রামের শিক্ষিত যুবকেরা বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশে খবর দিয়েছিল । তাইতে ওঝা অমূল্যচরনের ছমাস জেল হয়েছিল ।
সেদিন আবেগের বশে আমি যে রেগেমেগে বলে ফেলেছিলাম অন্ধবিশ্বাসের কথাগুলো,অমূল্য চরনের কানে উঠল ।
জেল থেকে বেরিয়ে লোকটা দলবল নিয়ে আমাকে শাসিয়ে গেল !
ঠিক পরের বছর ওর ছেলেকে সাপে কাটলো । লোকটা ঝারফুঁক করে ছেলেটাকে মেরে ফেলল । ওর স্ত্রী মরা ছেলে কোলে সোজা এসেছিল আমার কাছে ।
আর কি করার ছিল !
ছেলের শোকে ওর স্ত্রী মাস দুয়েকের মাথায় মারা গেল ।
সবছেড়ে অমূল্যচরণ আমার পায়ে পড়ল । বাপের বয়সী মানুষ !
তারপর থেকে রোজ সকালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে আসে । ফাইফরমাস খাটে । রুগী'র দেখভাল করে ।
অমূল্যচরণ এখন অন্য মানুষ !
ডাক্তারের কথা শেষ । এবার আমার যাবার পালা । মনে মনে ভাবছি আর কতদিনে মানুষ কুসংস্কার থেকে মুক্ত হবে !
দেবতারূপী মানুষটাকে মনে মনে প্রনাম করে বেরিয়ে এলাম ।
আরও পড়ুন
ConversionConversion EmoticonEmoticon