বাংলা উপন্যাস সমীরণ সরকারের কলমে ভুল স্টেশনে নেমে

  

বাংলা_উপন্যাস_সমীরণ_সরকারের_কলমে_ ভুল_স্টেশনে_নেমে

ভুল স্টেশনে নেমে' 

সমীরণ সরকার 

 আজ দ্বিতীয় কিস্তি 

ঘুমটা ভাঙতে ই মোবাইল খুলে ঘড়িটা দেখার চেষ্টা করল পলাশ। ওহো, চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ায় মোবাইলটা তো বন্ধ হয়ে গেছে! কটা বাজে এখন? ঠিক কতক্ষণ ঘুমিয়েছে সে? ওই অভদ্র মোটা লোকটি নেমে যাওয়ার পর সে তো তার ছেড়ে যাওয়া সিটে এসে বসেছিল। তারপর হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি  নামায় মুহূর্তেই ট্রেনের ভিতর ও বাইরের পরিবেশটা বদলে গেছিল।
গনগনে সূর্যের আঁচে পুড়তে থাকা পৃথিবীটা হঠাৎ দমকা ঝড়ের দাপটে কেমন যেন দিশাহীন হয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ যুঝবার পর হাল ছেড়ে দিয়েছিল। ঝড়ের সাথে উড়ে আসছিল শুকনো পাতা,  শুকনো প্রশাখার টুকরো, ছেঁড়া পুরোনো খবরের কাগজের টুকরো, ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির প্লাস্টিকের প্যাকেট, মিনারেল ওয়াটার এর পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলের টুকরো, আরো অনেক কিছু। ঝড়ের সঙ্গে যেগুলো উড়ে আসছিল,তা খুব স্বাভাবিক।  কিন্তু লাল বা গেরুয়া বর্ণের আরও একটা কিছু ঝড়ের সঙ্গে উড়ে আসছিল দেখে পলাশ একটু অবাক হয়ে চতুর্দিকে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আর দেখে এক অদ্ভুত দৃশ্য। রেললাইনের পাশে পাশে  বা দূরে মাঠের মধ্যে আগুন রঙা পলাশফুলে ভর্তি অসংখ্য পলাশ গাছ । ঝড়ের দাপটে   থোকা থোকা পলাশ ফুল বৃন্তচ্যুত হয়ে  হাওয়ার ধর্ষণে রিক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে।       হঠাৎ ঝড় ওঠায় পাখিগুলো দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেছিল। এক পাল ছাগল আর গরু চিৎকার করতে করতে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছিল। পিছন পিছন লাঠি হাতে ছুটছিল রাখাল বালক। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে গেছিল বৃষ্টি। আর বৃষ্টি শুরু হতেই ধীরে ধীরে কমে আসছিল বাতাসের বেগটা। শান্ত হয়ে যাচ্ছিল পৃথিবী। সূর্যতাপে প্রধূমিত ধরিত্রী বৃষ্টির ছোঁয়ায়
কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে আসছিল ধীরে ধীরে।
আর এসব দেখতে দেখতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল পলাশ। ঘুম ভাঙতেই দেখে চারিদিকে নেমেছে রাতের অন্ধকার। ট্রেনটা দাঁড়িয়ে আছে কোন একটা স্টেশনে। ট্রেনের ভিতরের লাইটটা তো মিটমিটেই, বাইরে স্টেশনের আলোর অবস্থাও তথৈবচ। জানালা দিয়ে তাকিয়ে স্টেশনের নাম পড়ার চেষ্টা করে পলাশ বুঝল, সেটা অসম্ভব। বাইরের ঘুটঘুটে অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছে না যে ,এটা একটা স্টেশন। কামরাতে এদিক-ওদিক  তাকিয়ে পলাশ বুঝলো, পুরনো যাত্রীরা কেউ নেই, সবাই নতুন। পাশের সহযাত্রী সিটের উপরে পা তুলে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করা বৃথা। উল্টো দিকে বসা সহযাত্রী একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে জানালার বাইরে। বাইরের অন্ধকারে এত মনোযোগ সহকারে কি দেখছে কে জানে। কামরার এদিকে ওদিকে তাকিয়ে তেমন নির্ভরযোগ্য কোনো সহযাত্রীকে দেখতে পেল না পলাশ, যাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা চলে। অগত্যা উল্টো দিকের সিটে বসে থাকা সহযাত্রীটির উদ্দেশ্যে পলাশ বলে-- ও দাদা, শুনছেন?
যাত্রীটি ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, হ্যাঁ, বলুন।
---- এটা কোন স্টেশন এল? চন্দ্রপুর আর কতদূর?
----- চন্দ্রপুর! সেই স্টেশন তো ঘন্টা তিনেক আগে পেরিয়ে গেছে।
 ---- কি বলছেন দাদা! পলাশের গলা চিরে আর্তনাদ বেরিয়ে আসে
 ---ঠিকই বলছি , প্রায় ঘন্টা তিনেক আগে ট্রেনটা দাঁড়িয়েছিল চন্দ্রপুর স্টেশনে। এটা পলাশ পুর স্টেশন।
--- কিন্তু আমাকে তো আজ রাতের মধ্যেই চন্দ্রপুর পৌঁছাতে হবে। কি উপায়?
--- এখানে নেমে যান তাড়াতাড়ি। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ একটা লোকাল ট্রেন আসে। ওটা ধরলেই কাল ভোরের মধ্যে চন্দ্রপুরে পৌঁছে যাবেন। তাড়াতাড়ি নামুন ,নইলে ট্রেন ছেড়ে দেবে। আর কথা না বাড়িয়ে পাশে রাখা ছোট্ট ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে যায় পলাশ।

( চলবে)
******************







[প্রকাশিত হল সমীরণ সরকারের ধারাবাহিক উপন্যাস  "ভুল স্টেশনে নেমে "। নিয়মিত প্রকাশিত হবে  সমীরণ সরকারের উপন্যাস  ভুল স্টেশনে নেমে । নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটি লাইক করুন   https://www.facebook.com/shobdomanjori  ]



Previous
Next Post »

এই ব্লগটি সন্ধান করুন